শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সেরা ১০টি উপায়
সম্মানিত পাঠক, বর্তমানে শীতকাল চলে এসেছে। তাই ত্বক নিয়ে আপনার হয়তো নিশ্চয় অনেক টেনশন হচ্ছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই কেননা আজকে আমরা শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় এবং শীতের সময় ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ঘরোয়া উপায় গুলো বিস্তারিত জানাবো।
প্রকৃতিতে শীতের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। এই সময় ত্বকে টান টান ভাব থাকে, ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হতে থাকে। মুখের লাবণ্য হারাতে শুরু করে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিতে পারে ত্বকের নানাবিধ সমস্যা। শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ত্বকের।
সূচিপত্র:শীতল আবহাওয়ায় জলীয় বাষ্প কমে যাওয়ার কারণে সকলের ত্বক রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে যায়। এবং রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকে নানান ধরনের সমস্যা দেখা যায়, অনেক সময় অনেক রোগও দেখা যায়। এর মধ্যে অ্যালার্জি, চামড়া ওঠা ও ত্বক ফেটে যাওয়া খুবই সাধারণ কিছু সমস্যা। এই সময়ে ত্বকের বিশেষ যত্ন নিতে হয়।
ভূমিকা
শীতে ত্বকের মাঝে নানান ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া এই আবহাওয়ায় ধুলাবালি বাতাসে বেশি ওড়ে। তাই বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। তবে সাবান বা কেমিক্যাল-যুক্ত ফেসওয়াশ এড়িয়ে ময়েশ্চারাইজার-যুক্ত ডিপক্লিনজিং ফেসওয়াশ ক্লিনজার ব্যবহার করা উচিত।
যদিও শীতল বাতাস উৎসবের আমেজ নিয়ে ঋতুতে আসে, তবে ঠাণ্ডায় ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, শীতে কারো কারো শরীরের ত্বকে কিছুটা কালো ছোপ পড়ে যায়। তবে প্রত্যেকেই চান সকল ঋতুতেই শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর ত্বক পেতে।
আর তাই শীতকালে ত্বকের খুব সহজেই বাড়তি যত্ন নিতে হয়। আমরা আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জানতে পারবো শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় শীতে অল্প কয়েকটি মেনে চললেই ত্বক উজ্জ্বল ও সতেজ হবে এবং সৌন্দর্য বজায় রাখবে।
শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
নারী এবং পুরুষ প্রত্যেকেরই নিঃসন্দেহে ত্বক পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্কিনকে পরিষ্কার করা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তবে, শীতের আসার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক অত্যধিক শুষ্ক হয়ে যায়, তাই সবার আগে দরকার একটি ভালো মানের ক্লিনজার ব্যবহার করা। এরপর শীতকালে উজ্জ্বল ত্বক পেতে ময়েশ্চারাইজিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ময়েশ্চারাইজ আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ধরে রাখে। শীতকালে আমাদের সকলের ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। এর কারণ হচ্ছে শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা কম থাকে। এই সময়টাতে ত্বকে ময়েশ্চারাইজ ব্যবহার করলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।
ত্বকের জন্য ভারী ময়েশ্চারাইজ নির্বাচন করুন
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে ত্বকের যত্নের পরিবর্তন বাধ্যতামূলক, কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আর্দ্রতার মাত্রা পরিবর্তিত হয়। কারণ আমরা যে বাতাসে শ্বাস নিচ্ছি এবং আমাদের সাথে ত্বকও শ্বাস নিচ্ছে। তার আর্দ্রতা পরিবর্তিত হয়।
তাই গ্রীষ্মের ঋতুটিতে আমরা হালকা জেল-ভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে থাকি, কিন্তু শীতকালে এমন একটি ময়েশ্চারাইজার বাছাই করা উচিৎ; যাতে ভিটামিন ই ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিডের মতো উপাদানগুলো থাকে।
এছাড়া নারকেল তেল,ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল, বাটার-মিল্ক ও শসার মতো এটা প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে পারেন।
ভালো এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার
কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে শীতকালে সূর্য দৃশ্যমান নাও হতে পারে, তা সত্ত্বেও নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। কারণ আপনার ত্বক শীতেও সূর্যের রশ্মিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যা ত্বকে পিগমেন্টেশন, সান-স্পট ও আরও অন্যান্য ত্বকের সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই অল্প পরিমাণে ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সানস্ক্রিন ব্যবহার, আপনার মেকআপকে সৌন্দর্যের সঙ্গে সানস্ক্রিন সুরক্ষা দিবে।
ত্বকে সুরক্ষিত রাখতে এক্সফোলিয়েট এর ব্যবহার
এক্সফোলিয়েশন আপনার ত্বকের বাইরের স্তর থেকে মৃত ত্বকের কোষ অপসারণের প্রক্রিয়া। এক্সফোলিয়েশন ময়লার স্তর অপসারণ করে আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে এবং আপনাদের শরীরের ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত পণ্যগুলো ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। যদি সঠিকভাবে এটি না করা হয়, তবে এটি উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে।
আপনি যদি ত্বককে এক্সফোলিয়েট ও আরও লাবণ্যময় করতে চান তবে অবশ্যই একটি নিরাপদ পদ্ধতি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। যাতে এটি আপনার ত্বকের ক্ষতি না করে এবং লাল-ভাব বা আপনার ব্রণ কমাতে সাহায্য করবে।
ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে বডি বাটার এর প্রয়োজনীয়তা
আপনার ত্বক যদি সুপার ড্রাই হয়, আর একটু পর পরই ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে হয়; তাহলে আপনার জন্য বেস্ট সল্যুশন হচ্ছে বডি বাটার। কারণ বডি বাটার স্কিনে প্রোটেক্টিভ লেয়ার হিসেবে কাজ করবে, যেটা দিনভর আপনার স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড ও ডিউয়ি আর সফট রাখতে সাহায্য করে।
এটা শুধু ত্বকের উপরিভাগই না, ত্বকের ডিপ লেয়ারে পৌঁছেও কাজ করে এবং এটি হচ্ছে শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়। এক কথায় বলা যায় আপনার তোকে এটি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ময়েশ্চারাইজ রাখবে।
শীতের সময় ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ঘরোয়া উপায়
শীতকালে অনেকেরই ত্বক আদ্রতা এবং উজ্জ্বলতা হারায় তাই বিশেষ করে এই শুষ্ক মৌসুমে আপনার ত্বক বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ঘরোয়া প্রতিকারই সবচেয়ে ভালো কারণ এগুলো কার্যকরী এবং কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
ঘরোয়া প্রতিকার ত্বকে বিস্ময়কর কাজ করে। শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে নিম্নের ঘরোয়া উপাসমূহ অনুসরণ করুন:
১) কলার ফেসপ্যাক
আপনার ত্বক যদি খুব শুষ্ক হয় তাহলে কলার ফেসপ্যাক লাগাতে পারেন। আপনাকে যা করতে হবে তা হল কলা ম্যাশ করে তাতে দুধ, মধু, চুনের রস মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। এবং ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকতে হবে। এটি হচ্ছে শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় ।
২) বাদাম তেল
বাদাম তেল ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী কারণ এটি উপযুক্ত আর্দ্রতা প্রদান করে এবং প্রাকৃতিক আভা বজায় রাখে। আপনি বাদামের তেল দিয়ে আপনার মুখে মাসাজ করতে পারেন এবং সেরা ফলাফলের জন্য এটি সারারাত রেখে দিতে পারেন। আরও উজ্জ্বল এবং উজ্জ্বল ত্বক পেতে আপনি প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।
৩) মধু এবং ডিমের সাদা অংশ
মধু এবং ডিম এমন কিছু সেরা উপাদান, যা মানুষ যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছে। এই প্যাক ত্বকে সঠিক আর্দ্রতা প্রদান করে এবং যার ফলাফল হল নরম এবং উজ্জ্বল ত্বক।
৪) ওটমিল ও দুধ
কিছু ওটমিল এবং দুধের পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান, আলতো করে ঘষে শুকাতে দিন। তারপর কয়েক মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার মুখের মরা চামড়া দূর করবে এবং ত্বককে আরও উজ্জ্বল এবং সুন্দর করে তুলবে।
৫) দই এবং শসা
শীতের সময় ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়ের লিস্টে দই যে থাকবে এটা অনুমেয়। কারণ দইয়ের গুণাগুণ ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য বেশ ভালো ফল দেয়। এ সময় যদি আপনি নিয়মিত দই খান তবে আপনার ত্বকে একটা আদ্রতা ভাব বজায় থাকবে। এবং যেকোনো ধরনের ত্বকের সমস্যা সমস্যা নিরাময়ে শসা হল সেরা প্রতিকার।
এতে প্রচুর পরিমাণে জল থাকে। আপনি এটি সরাসরি খেতে পারেন বা মুখে লাগাতে পারেন। এটিও ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
শেষ কথা
শীত মানেই ত্বকের একটু বাড়তি যত্ন। কারণ, বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ত্বকের রুক্ষতা বহুগুণ বেড়ে যায়। শীতল বাতাস, কম আর্দ্রতা ও কম তাপমাত্রার কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ত্বকের ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে। ত্বকের কোষগুলো ভাঙতে থাকে, ত্বকে আসে কালচে ভাব। এ ছাড়া এই সময়ে ত্বকের নমনীয় ভাব কমে আসে, কালো দাগও এই সময়টাতে বেশি ফুটে ওঠে।
আমাদের আজকের মূল বিষয় ছিল “শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়”। আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ের উপর তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। অলসতা না করে শীতের সময় ত্বকের বাড়তি যত্ন নিন, ত্বককে সুস্থ রাখুন, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ান। আল্লাহ হাফেজ।
শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর (FAQ)
প্রশ্ন ১: ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়।
উত্তর:- আপনার শারীরিক সচেতনতার, যত্নের রুটিন বাড়িয়ে তুলতে পারেন। স্বাস্থ্যকর এবং সুন্দর, মসৃণ ত্বক অর্জনের জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন। একটি রুটিনকে সৌন্দর্য করতে হলে কোন জটিল কিছু করতে হবে না, খুব সহজেই কিছু সচেতনতামূলক এবং পুষ্টিকর খাদ্য, নিয়মিত পানি পান করার অভ্যাসের মাধ্যমেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা যায়।
প্রশ্ন ২: উজ্জ্বল ত্বক কি?
উত্তর:- স্বাস্থ্যকর, মসৃণ চেহারার ত্বক উজ্জ্বল ত্বক। স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বল, সুস্থ, সুদর্শন একটি ত্বক আপনার ভারসাম্যপূর্ণ, সামঞ্জস্যপূর্ণ যা ত্বকের যত্নের রুটিন থেকে আসে। আপনি সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার রাখবেন, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন, ময়েশ্চারাইজারের সাথে অনুসরণ করে চললে, তবেই পাওয়া যায় একটি উজ্জ্বল ত্বক।
প্রশ্ন ৩: ত্বক উজ্জ্বল হওয়ার কারণ কি?
উত্তর:- প্রাকৃতিকভাবে ত্বক উজ্জ্বল সাধারণত স্বাস্থ্যকর এবং হাইড্রেটেড একটি ত্বক। ধীরে ধীরে ত্বকের যত্নের রুটিন বাস্তবায়ন করেন। সেই সাথে প্রয়োজনে খাদ্যাভ্যাস বা জীবনযাত্রার পরিবর্তন করেন। অ্যালকোহল, ধূমপান, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার এবং অতিবেগুনী আলো এই সবই ত্বকের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই এগুলো এড়িয়ে চলুন।
প্রশ্ন ৪: ত্বক উজ্জ্বল করার জন্য কোন হরমোন দায়ী?
উত্তর:- ডিম্বস্ফোটনের ঠিক আগে এই পর্যায়ে ইস্ট্রোজেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে, যার মানে দাঁড়ায় আপনার ত্বক তার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল দেখাবে। এই পর্যায়ে পণ্য বা চিকিৎসার সাথে এটি অতিরিক্ত করার কোন দরকার নেই। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায় এবং প্রোজেস্টেরন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
প্রশ্ন ৫: মেলানিন ত্বকের রংকে কিভাবে প্রভাবিত করে?
উত্তর:- মেলানিন হল এক ধরণের রঙ্গক যা মানুষ এবং প্রাণীদের চুল, ত্বক এবং চোখের রঙ দেয়। কোষের জন্য পিগমেন্টেশন প্রদানের পাশাপাশি, মেলানিন ক্ষতিকারক UV রশ্মি শোষণ করে এবং UV আলোর এক্সপোজার থেকে কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url