আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা
আলকুশি বীজ কি?
আলকুশি গাছ একটি ঔষধি গাছ হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। গ্রাম অঞ্চলে বা বিভিন্ন জায়গায় এই আলকুশিকে আবার আঞ্চলিক ভাষায় বিলাই চিমটি নামেও ডাকে।
তাছাড়াও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে যে, আলকুশি বীজের পাউডার প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আলকুশি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে, Macuna pruriens, এবং আলকুশি বীজ এর ইংরেজি নাম হচ্ছে, Velvet beans।
আলকুশি গাছ বা আলকুশি বীজের অনেক উপকারিতা রয়েছে। শুধু উপকারিতা না, আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা ও আছে। এবার চলুন আলকুশি বীজের কিছু পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে আসি।
আলকুশি বীজের পুষ্টিগুণ
এই ঔষধি আলকুশি বীজ দেখতে অনেকটা সবজি শিমের মত। একটি আলকুশি ফলের মধ্যে ৫ থেকে ৬ টি বীজ বিদ্যমান থাকে। ১ চা চামচ আলকুশি বীজের পাউডার এর মধ্যে যেসব পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে তা হচ্ছে, এক চা চামচ আলকুশি বীজের পাউডারের মধ্যে, প্রোটিনের পরিমাণ ০.৩৪ গ্রাম, ফ্যাটের পরিমাণ ০.০১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ৩.২৪ গ্রাম এবং ভিটামিন সি এর পরিমাণ ১৭ মিগ্রা।
এই আলকুশি গাছের শিকড়ের রসের মধ্যেও বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকের ধারণাই নেই আলকুশি বীজের উপকারিতা কতটুকু বা আলকুশি বীজ আসলে কি? আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং আলকুশি বীজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
আলকুশি বীজ খেলে কি হয়?
আলকুশি বীজ বিভিন্ন জটিল রোগের জন্য খুবই কার্যকরী একটি ঔষধ। আলকুশি বীজের পাউডার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, যৌন চিকিৎসা, ক্যান্সারসহ নানান জটিল রোগের ক্ষেত্রে উপকারে আসে। যে সকল ব্যক্তিদের মধ্যে উপরোক্ত এই সমস্যা গুলো বিরাজমান রয়েছে, তারা অবশ্যই আলকুশির হালুয়া অথবা আলকুশির ক্যাপসুল খেয়ে দেখতে পারেন।
আশা করা যায় কিছুটা হলে উপকৃত হবেন। কারণ আলকুশির বীজ খুবই কার্যকরী। নিম্নে রয়েছে আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত তথ্য।
আলকুশি বীজের উপকারিতা
আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা হচ্ছে, আলকুশি গাছের পাতা, আলকুশির বীজ অথবা আলকুশির শিকড়ের রসে রয়েছে বহুগুণ উপকারিতা। আলকুশি গাছের শিকড়ের রসের চেয়েও দ্বিগুণ উপকারিতা রয়েছে আলকুশি বীজের মধ্যে।
আলকুশি বীজ থেকে আলকুশি পাউডার তৈরি হয়। সেই আলকুশির পাউডার দ্রুততম কাজ করে। সেরকমই কিছু আলকুশি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে আসি।
ক্যান্সার রোধে
আলকুশি বীজের পাউডার ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার ফলে ক্যাটালজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ফ্রি রেডিক্যাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের আঘাত থেকে কোষ গুলোকে সুরক্ষায় রাখে। ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত আলকুশি বীজ সেবন খুবই উপকারী।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিকরণে
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা অনেকাংশ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে আলকুশি বীজের পাউডার। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো এসিড। মানুষের মানসিক শক্তিকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলে এতে থাকা ডোপামিন। এছাড়াও আলকুশি বীজের পাউডার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করে। এবং অন্যান্য জটিল রোগের ক্ষেত্রেও আলকুশি বীজের পাউডার অনেক উপকারী।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে আলকুশি বীজের পাউডার। এই আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা অনেকাংশ কমাতে সাহায্য করে। এবং ইনসুলিনের প্রভাব ও অনুকরণ করে আলকুশি বীজের পাউডার কারণ এতে রয়েছে ডি চিরো ইনসিডল নামক উপাদান।
বিশেষ করে এর জন্য ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করতে এটি বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রোগ প্রতিরোধের জন্য খুবই উপকারী আলকুশি বীজের পাউডার।
আলকুশি বীজের আরও কিছু উপকারিতা
আলকুশি ফ্যাবাসি পরিবারের একটি উদ্ভিদ। মধ্য আমেরিকায় আলকুশির বীজ আগুনের মধ্যে ভেজে চূর্ণ করা হয় তা কফির বিকল্প হিসেবে। এর কারণে ব্রাজিলসহ অন্যান্য দেশের প্রচলিত নাম হচ্ছে নেস ক্যাফে।
গুয়েতেমালায় কেচি সম্প্রদায়ের মানুষ এখনো খাদ্যশস্য হিসেবে এটি আবাদ করে এবং রান্নার সবজি হিসেবে খায়। আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা উপরে উল্লেখিত রয়েছে। এছাড়াও আলকুশি বীজের অনেক উপকারিতা রয়েছে তার মধ্যে আরও কয়েকটি উপকারিতা হচ্ছে,
- আলকুশি গাছের শিকড়ের রস এক চা চামচ করে প্রতিদিন এক মাস খেলে আমাশয় রোগ সেরে যায়।
- কোন ধরনের পোকামাকড়ের কামড়ে অথবা কোন পোকার দংশনের স্থানে আলকুশি বীজের গুড়া লাগালে যন্ত্রণা অনেক কমে যায়।
- আলকুশি গাছের শিকড়ের রস পান করলে সর্দি-কাশি ভালো হয়ে যায়।
- আলকুশি গাছের পাতার রস ফোঁড়ায় দিলে অচিরে ফোঁড়া ফেটে যায়।
- আলকুশির বীজ চিনি ও দুধ সহ সিদ্ধ করে খেলে বাত রোগের উপশম হয়। শারীরিক দুর্বলতা ও স্নায়ুবিক দুর্বলতা দূর হয়।
- আলকুশি গাছের শিকড়ের রস জীবজন্তুর গায়ের ঘায়ে লাগালে ক্ষত দ্রুত সেরে যায়।
- আলকুশির শিকড়ের মন্ডু মূত্রবর্ধক ও মূত্রযন্ত্রের রোগ নিরাময়ে খুবই উপকারী।
আলকুশি বীজের অপকারিতা
প্রয়োজনের চেয়ে অধিক কোন কিছুই শরীরের জন্য ভালো নয়। অতিরিক্ত খাদ্য অথবা যেকোনো কিছুই ধ্বংসের সম্মুখীন করে। এতক্ষণ আমরা আলকুশি বীজের উপকারিতা এবং আলকুশি বীজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পারলাম। এখন আমরা আলোচনা করবো আলকুশি বীজের কিছু অপকারিতার দিক সম্পর্কে।
- আলকুশি বীজের পাউডার প্রয়োজনের চেয়ে অধিক পান করলে এলডোপা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে বিভ্রান্তি, সিজোফ্রেনিয়া এবং হ্যালুসিনেশন এর লক্ষণ দেখা যায়।
- গর্ভাবস্থায় আলকুশি পাউডার খাওয়া নিরাপদ নয়। এতে করে জরায়ুর উদ্দীপকের প্রভাব রয়েছে যার কারণ জরায়ু ফেটে গিয়ে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
- যে সকল ব্যক্তিদের সাইকোসিস, নিউরোপ্যাথি এবং অনিয়মিতভাবে প্রিস বন্ধনের চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন, সেই সকল ব্যক্তিদের আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়া উচিত নয়।
- এবং লিভারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ আলকুশিতে বিদ্যমান লেভোডোপা সিরাম লিভারের রোগকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত। এই আর্টিকেলে আমরা পূর্বেই জেনেছি আমাদের আলকুশি বীজ কতটা উপকারী। একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আদর্শ হচ্ছে সপ্তাহে একবার বা দুবার ১৫-২০ গ্রাম আলকুশি খাওয়া। প্রতিদিন ৫ গ্রাম দিয়ে শুরু করতে পারেন।
আপনি প্রতিদিন ঘুমের কমপক্ষে এক ঘণ্টা বা আধা ঘণ্টা পূর্বে গরম দুধের সাথে এক চা চামচ আলকুশি পাউডার মিশিয়ে খান। তাহলে আপনি এটার খুবই ভালো একটি ফলাফল পাবেন। তাছাড়া আপনি এটা যেকোনো সময় খালি পেটে খেতে পারেন। আলকুশি বীজের পাউডার খালি পেটে প্রতিদিন সকালে এবং ঘুমানোর আগে খাওয়া উত্তম।
বর্তমানে বাজারে আলকুশি ক্যাপসুল ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে পাওয়া যায়। এই আলকুশি ক্যাপসুল অধিক কার্যকরী শুক্রাণু বৃদ্ধি এবং বীর্য ঘন করতে। তবে অবশ্যই আলকুশি ক্যাপসুল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন। এছাড়াও আলকুশি বীজ যেহেতু দেখতে অনেকটা সবজি শিমের মত, তাই আলকুশি বীজ সবজির মতো রান্না করেও খেতে পারেন। এবং আলকুশি বীজকে সিদ্ধ করে অথবা ভর্তা করেও গরম ভাতের সাথে খেতে পারেন।
শেষকথা
ব্যাপক ঔষধি গুণের কারণে এবং তা কার্যকরী হওয়ায় আলকুশি বীজ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যাদের শরীরের জন্য আলকুশি পাউডার খাওয়া উচিত তারা অবশ্যই নিয়মিত অল্প পরিমাণে আলকুশি পাউডার খেতে পারেন। নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিত অল্প পরিমাণে আলকুশি পাউডার খেলে শরীরের অনেক উপকারে আসে।
আপনি এতক্ষণ আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা, আলকুশি বীজের পাউডার খেলে কি হয়, আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম এবং আলকুশি বীজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারলেন।
আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্টটি এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা অথবা আলকুশি বীজ সম্পর্কে কোন ধরনের প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আলকুশি বীজের পাউডার সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
প্রশ্ন: আলকুশি কিভাবে খেতে হয়?
উত্তর:- আলকুশি খাওয়ার নিয়ম,
সকালে বা রাতে খাওয়ার পর এক গ্লাস হালকা গরম দুধ অথবা এক গ্লাস পানির সাথে এক চা চামচ আলকুশি মিশিয়ে খাবেন।
প্রশ্ন: আলকুশি পাউডার খেলে কি কি উপকার হয়?
উত্তর:- আলকুশি পাউডার খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, বীর্য ঘন করে, মানসিক দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে, জ্বর কাশি, বাতের ব্যথা, বুকে জমে থাকা কফ দূর করে। এছাড়াও পারকিনসন রোগে খুবই কার্যকরী।
প্রশ্ন: আলকুশির ইংরেজি নাম কি?
উত্তর:- আলকুশি বা বিলাই খামচি এর ইংরেজি নাম, Velvet bean, Cowitch, Sea bean।
প্রশ্ন: বিলাই চিমটি কি?
উত্তর:- এই গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদটি শরীরের সংস্পর্শে এলে প্রচণ্ড চুলকানির সৃষ্টি হয়। যার শরীরে এটি লাগবে সে প্রায় একদিন অস্বস্তিতে ভুগবে। চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় এই উদ্ভিদকে বলা হয়, বাঁদরওলা। আবার বিভিন্ন জায়গায় বিলাই চিমটি নামেও পরিচিত।
সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url