আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায়
আলট্রাসনোগ্রাফি কি
আলট্রাসনোগ্রাফি হচ্ছে শরীরের ভিতরের অংশের এক ধরনের ছবি দেখার পরীক্ষা। অনেকসময় একে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা, সনোগ্রাম অথবা আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানও বলা হয়। আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষায় বিশেষ এক ধরনের শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে শরীরের ভিতরের অংশের ছবি তোলা হয়। ‘প্রোব’ নামক ছোট ও ভোঁতা যন্ত্রের সাহায্যে বিশেষ হাই ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ তরঙ্গ তৈরি করা হয়।
এই প্রোবটি শরীরের নির্দিষ্ট স্থানের সংস্পর্শে নেওয়ার মাধ্যমে সেই অংশের ছবি দেখা যায়। আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার সময় কম্পিউটারের স্ক্রিনে যে ছবিটি ভেসে ওঠে এবং পরবর্তীতে তা প্রিন্ট করা হয় তাকেই মূলত আলট্রাসনোগ্রাম বলে।
আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায়
আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায় - আমরা অনেকেই আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বুঝতে পারি না যে রিপোর্টের মধ্যে কিভাবে কি আছে। আপনি আলট্রাসাউন্ড রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর যেভাবে বুঝবেন রিপোর্টে কি আছে তা হচ্ছে -
- আপনার আলট্রাসাউন্ড রিপোর্টে গর্ভের ছবিটি দেখুন। যখন আপনার রিপোর্টে গর্ভের ছবিটি দেখবেন, ছবিটির কোণগুলোর চারপাশে একটি হালকা ধূসর বা সাদা লাইন দেখতে পাবেন। এবং একটি বড় কালো অংশ দেখতে পাবেন যা অ্যামনিওটিক তরল নামে পরিচিত।
- এই বড় কালো অংশে অর্থাৎ অ্যামনিওটিক তরলের মধ্যে আপনার শিশুকে ধূসর অথবা সাদা রঙের দেখাবে।
- আপনার গর্ভাবস্থার প্রথম ৪ সপ্তাহের আলট্রাসাউন্ড রিপোর্টে আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণটিকে একটি সিদ্ধ শিমের আকার ও আকৃতির মতো দেখাবে।
- এবং আপনি যদি আপনার ১২ সপ্তাহের আল্টাসাউন্ড রিপোর্ট দেখেন তবে, আপনার শিশুর মাথাটি দেখতে পাবেন।
- ২০ সপ্তাহের আলট্রাসাউন্ড রিপোর্টে যা দেখতে পাবেন তা হচ্ছে, আপনার গর্ভস্থ শিশুর চোখ, হার্ট, শিরদাঁড়া ও পা ও দেখতে পাবেন। এবং তখন চাইলে আপনি আপনার গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ ও জানতে পারবেন।
গর্ভাবস্থায় করা ৫ প্রকারের আলট্রাসাউন্ড
আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায় -। বর্তমানে আপনার বাড়ন্ত গর্ভের আল্ট্রাসোনিক স্ক্যান করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অনেক উন্নতি হয়েছে। গর্ভাবস্থায় করা আলট্রাসাউন্ড প্রধানত ৫ ধরনের হয়, যেমন-
১. ট্রান্সভ্যাজাইনাল আলট্রাসাউন্ড:
ট্র্রান্সভ্যাজাইনাল কথার অর্থ হচ্ছে, যোনির মধ্যে দিয়ে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অথবা জটিল সমস্যা থাকলে এই স্ক্যানটি করা হয় গর্ভবতী মহিলাদের। সাধারণত এটি ভ্রূণের বয়স ১০ সপ্তাহের কম হলে এটি করা হয়।
২. ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি:
আলট্রাসাউন্ডে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে, যেমন-গর্ভস্থ শিশুর হার্টে কোনো ত্রুটি বা সমস্যা আছে কিনা তা দেখার জন্য সাধারণত এই স্ক্যানটি করানো হয়।
৩. সাধারণ আলট্রাসাউন্ড:
সাধারণত এই ধরনের আলট্রাসাউন্ডে টেকনিশিয়ান আপনার গর্ভস্থ শিশুর 2ডি ছবি দেখার জন্যে একটি লাঠির আকারের ট্রান্সডিউসার পেটের উপর চালান।
৪. 3-ডি আলট্রাসাউন্ড:
একটি বিশেষ ট্রান্সডিউসারের দ্বারা করা হয় এই সোনগ্রাফিটি। যা দ্বারা করা হয় আপনার গর্ভস্থ শিশুর সম্পূর্ণ ছবি ও বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা।
৫. ডায়নামিক 4ডি আলট্রাসাউন্ড:
এটি অনেকাংশে 3ডি আলট্রাসাউন্ডের মতোই। শুধুমাত্র পার্থক্য হচ্ছে, এটার ক্ষেত্রে আপনি আপনার গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া দেখতে পারবেন এবং অনেক ক্ষেত্রে এটার একটি ভিডিও রেকর্ডিং ও পেতে পারেন।
আলট্রাসনোগ্রাফি করালে কি গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে
আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায় - আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করার ফলে এখন অবধি গর্ভবতী নারী ও গর্ভস্থ শিশুর কোনো প্রকার ক্ষতি হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় নি। বরং গর্ভকালীন সময়ে এই পরীক্ষা করানো নিরাপদ।
আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষায় কোনো ধরনের ক্ষতিকর রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয় না। এক প্রকার উচ্চ মাত্রার শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে শরীরের ভেতরের অংশের ছবি তোলা হয়। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা করা উচিত নয়।
আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট কি ভুল হয়
কখনো কখনো ভ্রুনের অবস্থান ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য, নানান সমস্যার কারণে আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে পুরোপুরি পরিষ্কার ছবি পাওয়া সম্ভব হয় না। এর জন্য সবসময় আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট ১০০% সঠিক নাও হতে পারে।
আপনার গর্ভের ১০ থেকে ১৪তম সপ্তাহের পরে যদি আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে আপনি গর্ভের শিশুর ডেলিভারির তারিখ বের করার চেষ্টা করেন,তবে এক্ষেত্রে সঠিক ফলাফল নাও পেতে পারেন। সময় অনুযায়ী আপনার চিকিৎসকই আপনাকে ডেলিভারির তারিখ জানিয়ে দিবেন।
কিছু ক্ষেত্র বিশেষ রয়েছে যার কারণে অনেক সময় আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট হুবহু সঠিক নাও হতে পারে। যেমন-
- গর্ভবতী নারীর ওজন অথবা পেটে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকলে।
- গর্ভের বাচ্চাকে তার চারপাশ থেকে ঘিরে থাকা অ্যামনিওটিক তরল, এর পরিমাণ বেশি হলে।
- পেটে কোনো ধরনের জটিল কাটা দাগ বা সেলাই থাকলে।
- গর্ভের শিশুটি সুবিধাজনক অবস্থানে না থাকলে।
শেষ কথা
গর্ভকালীন সময় আলট্রাসাউন্ড বিভিন্ন কারণে করা হয়ে থাকে। পাঁচ ধরনের আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমেই গর্ভবতী নারী ও গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য এবং প্রজনন অঙ্গগুলোর বিভিন্ন পরিক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। তারপরও যদি উপরের তথ্য মোতাবেক আলট্রাসাউন্ড রিপোর্টটি পরিষ্কার না বোঝেন, তবে অবশ্যই আপনার গাইনি চিকিৎসকের সাহায্য নিতে পারেন।
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন, আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায় সহ আলট্রাসাউন্ডের বিভিন্ন অজানা তথ্য। আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায় এই পুরো পোস্টটি এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট বোঝার উপায় সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ
প্রশ্ন ১: আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে বাচ্চা ছেলে না মেয়ে বোঝা যায় কিনা?
উত্তর:- সর্বক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে শিশুর লিঙ্গ উল্লেখ করা থাকে না। আপনার গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে তা জানতে হলে, আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর ঠিক আগে আপনার আল্ট্রাসনোগ্রামের যে ডাক্তার থাকবেন তাকে জানান। কিছু রিপোর্টে মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে gender/sex এর জায়গায় female অথবা xx লেখা থাকে এবং ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে male অথবা xy লেখা থাকে।
প্রশ্ন ২: আল্ট্রাসনোগ্রাম ছাড়াই শিশুর মাথা নিচু হওয়ার লক্ষণ।
উত্তর:- যদি আপনার শিশু মাথা নিচু করে এবং আপনার পিঠের দিকে মুখ করে থাকে (OA অবস্থায়) তবে আপনি সম্ভবত আপনার পাঁজরের নিচে লাথি অনুভব করবেন। আপনি আপনার গর্ভস্থ শিশুর পিঠের শক্ত গোলাকার পৃষ্ঠটিও অনুভব করতে পারবেন,যা আপনার পেটের এক পাশে থাকবে।
প্রশ্ন ৩: গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাফি কি ক্ষতিকর?
উত্তর:- আপনার গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আলট্রাসাউন্ড করা আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুর জন্য নিরাপদ। যেহেতু আলট্রাসাউন্ড বিকিরণের পরিবর্তে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে। এটি এক্সরে থেকে নিরাপদ। আলট্রাসনোগ্রাফি প্রদানকারীরা ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করছেন। এবং তারা তার কোন বিপদজনক ঝুঁকি খুঁজে পাননি।
প্রশ্ন ৪: বাচ্চার অবস্থান কিভাবে বুঝব?
উত্তর:- পেলভিস বা পিউবিক হাড়ের উপরের অংশে আঙুলের ডগা দিয়ে মৃদু চাপ প্রয়োগ করুন। আপনি যদি কিছু কঠিন অনুভব করেন তবে সম্ভবত এটি মাথা। যদি অঞ্চলটি নরম হয় তবে এটি সম্ভবত ভ্রূণের নীচের অংশ।
প্রশ্ন ৫: জন্মের সময় বাচ্চার অবস্থান কি হওয়া উচিত?
উত্তর:- সিফালিক প্রেজেন্টেশনে শিশুটি মাথা নিচু করে, চিবুক বুকের সাথে টেনে নেয়, মায়ের পিঠের দিকে মুখ করে। সাধারণত একটি গর্ভস্থ শিশুর এই অবস্থান মসৃনতম প্রসবের জন্য অনুমতি দেয়। কারণ শিশুর জন্মের সময় শিশুর মাথা সহজেই জন্মের খালের নিচে এবং পিউবিক হাড়ের নিচে যেতে পারে।
প্রশ্ন ৬: গর্ভাবস্থার লক্ষণ কত দিন পর প্রকাশ পায়?
উত্তর:- গর্ভাবস্থার হরমোনগুলো ১ থেকে ২ সপ্তাহে বৃদ্ধি পায় এবং তার সাথে সম্পর্কিত প্রাথমিক লক্ষণগুলোও হতে পারে, যেমন - মাথা ব্যথা, ফোলাভাব, ক্লান্তি। ১ থেকে ২ সপ্তাহে শরীর রক্ত উৎপাদন বৃদ্ধি করে, যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, ক্লান্তি এবং নিম্ন রক্তচাপ সহ গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url