বরিশালের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিন

বাংলাদেশের সকল জেলার মধ্যে অন্যতম একটি জেলা হচ্ছে বরিশাল জেলা। বরিশাল জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি ১৭৯৭ সালে বাকেরগঞ্জ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। বরিশাল বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নদীবন্দর।
বরিশালের দর্শনীয় স্থান
উপজেলার সংখ্যানুসারে বরিশাল বাংলাদেশের একটি এ শ্রেণীভুক্ত জেলা। বরিশালের দর্শনীয় স্থান নিয়ে আজ আমাদের এই আর্টিকেল। বরিশাল বিভাগে দেখার মতন অনেক জায়গা রয়েছে। ধান- নদী -খাল এই তিনে বরিশাল' খ্যাত বরিশাল বিভাগের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় মুসলিম আধিপত্য বিস্তারকালে রাজা দনুজ মর্দন কর্তৃক চন্দ্রদ্বীপ' নামে এ স্বাধীন রাজ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত এ অঞ্চল চন্দ্রদ্বীপ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। এ রাজ্য প্রতিষ্ঠার পূর্বে এ অঞ্চল ‘বাকলা' নামে পরিচিত ছিল। বাকলা' অর্থ শস্য ব্যবসায়ী যা আরবি শব্দ থেকে আগত। কিন্তু এর মধ্যে যে জায়গাগুলো বেশি উল্লেখযোগ্য সেগুলো আপনাদের সামনে আজ তুলে ধরছি। যারা বাইক নিয়ে ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন তাদের কাছে বরিশালের দর্শনীয় স্থান গুলো বেশ ভালো লাগবে। 

আপনি যদি ভ্রমণে যেতে চান তাহলে বরিশালে আসতে পারেন। বরিশালে রয়েছে অনেক দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থানসমূহ। যেমন-দুর্গাসাগর দিঘী,লা-কুটিয়া জমিদার বাড়ি,গুঠিয়া মসজিদ, মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ, অক্সফোর্ড মিশন গির্জা, শাপলা গ্রাম সাতলা ইত্যাদি আরও অনেক দর্শনীয় স্থান।

বরিশালের দর্শনীয় স্থান - দুর্গাসাগর দিঘী

বরিশালের বাবুগঞ্জে দুর্গাসাগর দীঘিটি অবস্থিত। বরিশাল ভায়া বানারীপাড়া নেছারাবাদ সড়কের পাশে এটির অবস্থান। ১৭৮০ খৃষ্টাব্দে চন্দ্রদ্বীপ পরগনার তৎকালীন রাজা শিবনারায়ণ এলাকাবাসীর পানির সংকট নিরসনে মাধবপাশায় একটি বৃহৎ দীঘি খনন করেন। 

তাঁর মা দুর্গাদেবীর নামে দীঘিটির নামকরণ করা হয় দুর্গা-সাগর। প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিবর্তে দুর্গাসাগর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে জেলা প্রশাসন। দুর্গাসাগর এর তিন দিকে ঘাটলা ও দীঘির ঠিক মাঝখানে ৬০ শতাংশ ভূমির উপর টিলা। দুর্গা-সাগরে দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণ মাঝখানের এই দ্বীপটির সৌন্দর্য। 

দুর্গাসাগর দিঘীটির আয়তন

২৫০০ হেক্টর আয়তনের দুর্গাসাগর দীঘিকে সাগর হিসেবে কল্পনা করলে, এ টিলাটি যেন একটি দ্বীপ। বাতাসের বেগ একটু বেশি হলেই দুর্গা-সাগরে ঢেউ ওঠে। আর সেসব ছোট ছোট ঢেউয়ে ভেসে ওঠে পাড়ের বৃক্ষরাজির ছায়া। স্থানীয়ভাবে এটি মাধব পাশা দীঘি নামেও পরিচিত।

শীত ও বসন্ত ঋতুর শুকনো মৌসুমে দীঘির পাড় লোকে-লোকারণ্য হয়ে প্রাণবন্ত করে তোলে দিনের পুরোটা সময়। দিঘির চারপাশে বাঁধানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বিনোদনের নতুন মাত্রা খুঁজে পায় ইটের শহরে বাস করা নগরবাসী। আর চিরচেনা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এ দিঘি যেন গ্রামীণ জায়গায় নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া।

চারপাশে বৃক্ষঘেরা স্বচ্ছ জলের এ দিঘির উত্তর পাশে আছে একটি বাঁধানো বড় ঘাট। দীঘির চারপাশে নারিকেল, সুপারি, শিশু, মেহগনি প্রভৃতি বৃক্ষরোপণ করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়, যা বর্তমানে দিঘিটির শোভা বর্ধন করে চলেছে। দুর্গা-সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়। পাঁচ প্রজাতির কয়েক হাজার পাখির কলকাকলিতে দীঘিটি শীতকালে মুখরিত থাকে। 

সরাইল ও বালিহাঁস সহ নানান প্রজাতির পাখি দীঘির মাঝখানে ঢিবিতে আশ্রয় নেয় । সাঁতার কাটে দীঘির স্বচ্ছ, স্ফটিক পানিতে । কখনো বা হালকা শীতের গড়ানো দুপুরে ঝাঁক বেঁধে ডানা মেলে দেয় আকাশে। আড়াই শত বছর আগে খনন করা ঐতিহ্যবাহী দুর্গাসাগর। দীঘিটি সংস্কার সহ পাড়ে পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত রেস্ট হাউস এবং পাখিদের অভয়ারণ্য নির্মাণ ও দীঘিতে যাতায়াতের জন্য বোর্ড সহ ভাসমান ব্রিজ নির্মিত হলে প্রতি বছর হাজার হাজার দেশ বিদেশী পর্যটকদের আগমন ঘটতো এখানে ।

এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেতো। পাশাপাশি রক্ষা করা সম্ভব হতো এই প্রাচীন কীর্তি। অদূরেই লা-কুটিয়া জমিদার বাড়িটিও দর্শনীয় স্থান হিসাবে পরিচিত। লা-কুটিয়া জমিদার বাড়িটি তিনশত বছরের পুরনো। সড়ক পতি ঢাকা থেকে এই জায়গায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টায় পৌঁছে যায়।

বরিশালের দর্শনীয় স্থান - শাপলা গ্রাম, সাতলা

আপনার গ্রাম সাতলা বরিশাল জেলার সকল দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি জায়গা। এখানে যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খেলা। শাপলা গ্রাম সাতলা যেন এক শাপলার রাজ্য। বিলের পানিতে ফুটে থাকা হাজারো লাল শাপলা যেন সূর্যের লাল আভাকেও হার মানায়। বরিশাল সদর থেকে সাতলা গ্রামের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। 

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের বিলগুলো স্থানীয়দের কাছে শাপলার বিল নামে পরিচিত। এখানে কবে থেকে শাপলা ফোটা শুরু হয়েছে এ তথ্য পাওয়া না গেলেও জানা যায় এখানে লাল, সাদা আর বেগুনি এই তিন ধরণের শাপলা জন্মে। তবে লাল শাপলা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

সাতলা গ্রামের প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমিতে শাপলা জন্মে। শাপলা গ্রামের অধিকাংশ অধিবাসী তাই শাপলা বিপণনের সাথে যুক্ত। শাপলা গ্রাম সাতলা থেকেই সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাপলা ফুল সরবরাহ করা হয়। শাপলার ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফারদের কাছে সাতলা একটি আদর্শ জায়গা।

বরিশাল থেকে বাসে শিকারপুর এসে অটো ভাড়া করে উত্তর সাতলা যেতে পারবেন। এছাড়া ঢাকা থেকে বাসে বরিশাল যাওয়ার সময় উজিরপুরের নুতন-হাট বাস থেকে নেমে সেখান থেকেও সরাসরি অটো করে সাতলা শাপলা বিল দেখতে যেতে পারবেন। 

কিংবা বরিশালের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাতলা ও বাগধা গ্রামে যাওয়ার সরাসরি বাস সার্ভিসে ২ ঘণ্টায় পৌঁছে যেতে পারবেন আপনার গন্তব্যে। এছাড়াও বরিশাল থেকে মহেন্দ্র গাড়িতে চড়েও ঘুরে আসতে পারবেন শাপলা গ্রাম সাতলা হতে।

বরিশালের দর্শনীয় স্থান - মিয়া বাড়ি জামে মসজিদ

বরিশালের সদরে কড়াপুর ইউনিয়নের রায়পাশা গ্রামের সুপ্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অনিন্দ্য সুন্দর আকর্ষণ মিয়াবাড়ি মসজিদ। এটি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত বলে মনে করা হয়। বরিশালের হাতেম আলী কলেজের চৌমাথা থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মসজিদটি।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুসারে, কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদটি মুঘল আমলে নির্মিত বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মসজিদ। এ মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট। মসজিদটি দেখতে অনেক সুন্দর ও কারুকার্য-মণ্ডিত।মসজিদটির নিচে রয়েছে ছয়টি দরজাবিশিষ্ট আবাসন ব্যবস্থা। সেখানে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার ছাত্রদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। 

দোতলাকে কেন্দ্র করেই মূল মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দোতলায় মসজিদ-জুড়ে চমৎকার নকশার কাজ রয়েছে।মূল মসজিদের রয়েছে তিনটি দরজা। মসজিদের চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে আটটি বড় মিনার। বড় মিনারগুলোর মাঝে রয়েছে ছোট ছোট ১২টি মিনি মিনার। আবার ছোট মিনারগুলোর মাঝে স্থানকে সুন্দর কারুকার্যময় নকশা দ্বারা অলঙ্কৃত করা হয়েছে।

মসজিদের মাঝখানে রয়েছে বড় তিনটি গম্বুজ। মধ্যের গম্বুজটি সবচেয়ে বড়। যার ভিতরের অংশেও রয়েছে কারুকার্যময় সুন্দর নকশার সমাহার। মসজিদটি নির্মাণের ইতিহাস সম্পর্কে জনশ্রুতি রয়েছে, ‘মিয়াবাড়ি মসজিদটি বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের ব্রিটিশ আমলের সূচনালগ্নে নির্মিত একটি মসজিদ। 

ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা হায়াত মাহমুদ এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।বিদ্রোহের কারণে ইংরেজ শাসকরা তাকে প্রিন্স অব ওয়েলস দ্বীপে নির্বাসিত করেন। ইংরেজরা তার উমেদপুরের জমিদারিও কেড়ে নেয়। দীর্ঘ ১৬ বছর নির্বাসনে থাকার পর দেশে ফিরে তিনি দুটি দীঘি এবং দোতলা একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। 

মিয়াবাড়ি মসজিদের পূর্ব পাশে কয়েক একর নিয়ে বিশাল একটি দীঘিও রয়েছে, যা মসজিদের সৌন্দর্যকে আরও নয়নাভিরাম করে তুলেছে।মসজিদটির দোতলায় ওঠার জন্য রয়েছে আলীশান সিঁড়ি।সিঁড়ির গোঁড়ায় হেলান দিয়ে বসার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।মসজিদটি প্রাচীনকালে ইসলাম-প্রিয় মানুষের রুচি ও স্থাপত্য শিল্পের সৌন্দর্য বর্ধনে সুউচ্চ মানসিকতার পরিচয় বহন করে।

বরিশালের দর্শনীয় স্থান - গুঠিয়া মসজিদ

বরিশাল শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বানারীপাড়া সড়ক-সংলগ্ন উজিরপুর উপজেলায় এই গুঠিয়া গ্রামের অবস্থান। বরিশাল-বানারীপাড়া সড়ক ধরে গেলেই উজিরপুর উপজেলা। সড়কের পাশে গুঠিয়ার চাংগুরিয়া গ্রাম। এ গ্রামেই আছে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ গুঠিয়া। 

২০০২ সালের ১৬ ডিসেম্বর উজিরপুরের গুঠিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষানুরাগী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু চাংগুরিয়ার নিজ বাড়ির সামনে প্রায় ১৪ একর জমির উপর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে গুঠিয়া বাইতুল আমান জামে মসজিদ-ঈদগাহ্ কমপ্লেক্স এর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি তার নিজের টাকা দিয়ে পুরো কমপ্লেক্সটি তৈরি করেছেন।

৩ থেকে ৪ বছর মেয়াদের মধ্যে উক্ত নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন এস. সরফুদ্দিনের ছোট ভাই মোঃ আমিনুল ইসলাম নিপু। তিনি ২০০৬ সালে উক্ত জামে মসজিদ-ঈদগাহ্ কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। 

তার নির্মাণাধীন সময়কালের মধ্যে তিনি একটি বৃহৎ মসজিদ-মিনার, বিশ হাজার অধিক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ঈদগাহ্ ময়দান, এতিমখানা, একটি ডাকবাংলো নির্মাণ, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, লেক-পুকুর খনন কাজ সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ-ফুল বাগান তৈরি ও লাইটিং ব্যবস্থা সম্পন্ন করেন। ওই নির্মাণ কাজে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার নির্মাণ শ্রমিক কাজ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়। 

পরে গুঠিয়ার নামেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে। চাংগুরিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী এস সরফুদ্দিন আহমেদ এটির নির্মাণ ব্যয় বহন করেন। কমপ্লেক্সের মূল প্রবেশপথের ডানে বড় পুকুর। পুকুরের পশ্চিম দিকে মসজিদ। মসজিদ লাগোয়া মিনারটির উচ্চতা ১৯৩ ফুট।

বরিশালের দর্শনীয় স্থান - অক্সফোর্ড মিশন গির্জা

অক্সফোর্ড মিশন চার্চ বরিশাল শহরের বগুড়া রোডে অবস্থিত। এটি যেমন অত্যাধুনিক তেমনি সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে। অক্সফোর্ড মিশন গির্জায় আপনি অনেক ভালো একটা সময় কাটাতে পারবেন। প্রাচীন এ গির্জার নাম ইপিফানি গির্জা হলেও এটি অক্সফোর্ড মিশন নামেই পরিচিত।

অক্সফোর্ড মিশন চার্চটি দেখতে একতলা হলেও উচ্চতায় প্রায়  ৪-৫ তলা ভবনের সমান। গ্রিক স্থাপত্য শৈলীর অনুকরণে নির্মিত হয়েছে। ভেতরে সবুজ ঘাসের মাঠ, পুকুর, স্কুল, লাইব্রেরি, হাসপাতাল, ছাত্রছাত্রী হোস্টেল, ফুলের বাগান এবং নানা প্রজাতির ঔষধি গাছ রয়েছে । 

সিস্টার এডিথের নকশায় ১৯০৩ সালে গির্জাটির নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ফাদার স্ট্রং এর নির্দেশনায় ১৯০৭ সালে এর কাজ শেষ হয়। প্রায় ৩৪ একর জমির একাংশে নির্মিত অক্সফোর্ড মিশন চার্চের ভেতরে রয়েছে কাঠ খোদাই করা নকশা এবং মার্বেল পাথরের মেঝে। 

অক্সফোর্ড মিশন চার্চের রয়েছে সুবিশাল মনোরম প্রার্থনা কক্ষ, চারপাশের পরিবেশ অনেক শান্ত ও স্নিগ্ধ, রয়েছে সারি সারি পাম্প গাছ। গির্জার পাশে আছে ফাদার হাউস ও মাদার হাউস। অনুমতি নিয়ে সহজেই অক্সফোর্ড মিশন চার্চটি ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। সকাল থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত এখানে আগত দর্শনার্থীদের জন্য চার্চটি খোলা থাকে।

বরিশালের দর্শনীয় স্থান - লা-কুটিয়া জমিদার বাড়ি

লা-কুটিয়া জমিদার বাড়ি বরিশাল জেলা সদরের কাশীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত যা বরিশালের বিখ্যাত জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রায় ৪০০ বছরের পুরানো এই জমিদার বাড়িটি। বরিশাল শহর থেকে আট কিলোমিটার উত্তরে লা-কুটিয়া বাজার। এরপর ইট বিছানো হাঁটাপথ।

কিছু দূর যাওয়ার পর মিলবে জমিদারদের অনেক মন্দির আর সমাধিসৌধ। রাস্তার ডান পাশে। এগুলোর বেশির ভাগই আটচালা দেউল-রীতিতে তৈরি। শিখররীতির মন্দিরও। পাঁচটা মন্দির এখনো বলতে গেলে অক্ষতই আছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি এখন পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। অথচ এই বাড়িটিকে ঘিরে রয়েছে প্রায় চার শ’ বছরের পুরনো ইতিহাস।

খোসাল-চন্দ্র রায় লিখিত ‘‘বাকেরগঞ্জের ইতিহাস গ্রন্থ’’ থেকে জানা গেছে, রূপচন্দ্র রায় ছিলেন এই জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর পৌত্র রাজচন্দ্র রায়ের সময়ে এর প্রতিপত্তি বাড়ে। তিনিই মূল জমিদার বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। তাঁর বসানো হাটকেই সবাই বলে বাবুরহাট। তিনি প্রজা দরদি ছিলেন।

লা-কুটিয়া থেকে বরিশাল অবধি রাস্তা তাঁর আমলেই তৈরি হয়েছিল। বেশ ঘটা করে তিনি রাস উৎসব করতেন। তাঁর দুই পুত্র রাখালচন্দ্র রায় ও প্যারীলাল রায় ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী ছিলেন। লা-কুটিয়া জমিদারদের সব থেকে সুন্দর স্থাপনা হলো মন্দিরগুলো। 

সবচেয়ে উঁচু মন্দিরের শিলালিপি থেকে জানা গেছে, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পংকজকুমার রায়চৌধুরী তাঁর স্বর্গত পিতা সুরেন্দ্রকুমার রায়চৌধুরী এবং মাতা পুষ্পরাণী রায়চৌধুরীর পুণ্য-স্মৃতির উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করেছেন। লোহার দরজা পেরিয়ে জমিদার বাড়ির মূল প্রবেশপথের বাঁ পাশেই শান বাঁধানো ঘাটলা বাঁধা সুন্দর একটি পুকুর। 

বাড়িটি এখন বিএডিসির তত্ত্বাবধানে আছে। বাড়ির তিন ধারে ধানের জমি। বাড়ির কাছেই আমবাগান। বাগানটি গড়ে উঠেছে বিশাল এক দীঘির পাড়ে। একে সবাই রাণীর দিঘি বলে। শীতের সময় এখানে অনেকেই পিকনিক করতে আসেন। এই দীঘিতে প্রতি বছর চারদিক আলোকিত করে ফোটে পদ্মফুল। যেমন বড় তেমন এর রং। পাতাগুলোও ভীষণ বড় বড়। বরিশালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পদ্মফুল ফোটে এই দীঘিতেই। 

এখানে তিনটি মন্দির, দুইটি পুরনো বাড়ি ও একটি বিশাল দিঘী রয়েছে। লা-কুটিয়া জমিদার বাড়ি এর ভবনটি জীর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে প্রবেশ নিষেধের নোটিশ টাঙানো আছে। ভবনের নিকটে কতিপয় মন্দির রয়েছে।

লা-কুটিয়া জমিদার বাড়ি যাওয়ার উপায় 

বরিশাল শহরের নথুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে শ্মশান মোড়। এখান থেকে লা-কুটিয়া বাবুরহাটে যাওয়ার অটোরিকশা, টেম্পো মিলবে। অটো কিংবা টেম্পোতে লা-কুটিয়া জমিদার বাড়ি যেতে ১৫-২৫ টাকা ভাড়া লাগবে।

বরিশালে কিভাবে যাবেন

বাস বা সড়কপথে বরিশালঃ

সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল আপনি ৬ থেকে ৮ ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন। প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে বেশকিছু বাস বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বেশীরভাগ বাস পাটুরিয়া ঘাট অতিক্রম করে বরিশালে যায় আবার কিছু কিছু বাস মাওয়া ঘাট অতিক্রম করে বরিশালে যায়। 

ঢাকা থেকে আগত বাসগুলো বরিশালের নতুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে থেমে থাকে। সেখান থেকে আপনি সিএনজি বা অটো রিক্সা যেকোনো গাড়িতে আপনার গন্তব্য স্থানে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে বরিশালে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে আছেঃ শাকুরা পরিবহন, ঈগল পরিবহন, শামীম পরিবহন, হানিফ পরিবহন ইত্যাদি আরও কয়েকটি লোকাল বাস রয়েছে।

  • এসি বাসের ভাড়াঃ ৭০০/- টাকা 
  • নন এসি বাসের ভাড়াঃ ৫০০/- 
  • লোকাল বাসের ভাড়াঃ ২৫০ টাকা থেকে ৩০০/- টাকা।

নৌপথে বা লঞ্চে বরিশালঃ

ঢাকা থেকে বরিশাল এর লঞ্চগুলো রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সদর ঘাট থেকে ছাড়ে। এর মধ্যে সুন্দর বন ৭/৮, সুরভী৮, পারাবত ১১, কীর্তনখোলা ১/২ লঞ্চ গুলো ভাল। লঞ্চ গুলো বরিশাল পৌঁছায় ভোর ৫টার দিকে।

লঞ্চ ভাড়াঃ

ডেক ভাড়া ১০০ টাকা, ডাবল কেবিন ১৫০০, ভিআইপি ৪০০০। বরিশাল জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিঃমিঃ দূরে এই মধাবপাশা। বরিশাল থেকে চাখার যাওয়ার পথেই পড়বে দূর্গা সাগর দীঘি। লঞ্চঘাট থেকে ব্যাটারি চালিত ল্যাগুনা করে চলে যেতে পারেন দীঘির গেট পর্যন্ত। অথবা চাখার যাওয়ার বাসে উঠে পরলেও হবে। একদম দীঘির গেটে নামিয়ে দিবে আপনাকে।

বরিশালের কোথায় থাকবেন

বরিশালে খাওয়া-দাওয়া এবং রাত্রি যাপনের জন্য বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। যেগুলিতে অনায়াসে আপনি রাত্রি যাপন করতে পারবেন এবং খাওয়ার সুবিধাও পাবেন আবাসিক হোটেল গুলোর মধ্যে, সেরকমই কিছু হোটেল হচ্ছে -

  • হোটেল গ্র্যান্ড পার্ক 
  • হোটেল এরিনা 
  • হোটেল রিচ-মাট গেস্ট হাউস
  • হোটেল রুডেলা 
  • হোটেল সেডোনা
  • হোটেল এলেনা

শেষ কথা,

বরিশালের দর্শনীয় বিভিন্ন স্থান নিয়ে আমাদের আজকের এই পুরো আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে। বরিশাল বিভাগে দেখার মতোন অনেক জায়গা আছে। কিন্তু এর মধ্যে যে জায়গাগুলো বেশি উল্লেখযোগ্য সেগুলো আপনার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি । ভ্রমণের জন্য বরিশাল জেলা হচ্ছে অন্যতম একটি জেলা। যারা বাইক নিয়ে ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন তাদের কাছে বরিশালের দর্শনীয় স্থান গুলো বেশ ভালো লাগবে।

আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে এবং বরিশালের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। এবং অবশ্যই যেকোনো বিষয়ের উপর তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

বরিশালের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ

প্রশ্ন ১. চন্দ্রদ্বীপের অবস্থান কোথায় ছিল? 

উত্তর:- বাংলাদেশের বরিশাল জেলার একটি ছোট্ট অঞ্চল চন্দ্রদ্বীপ। 

প্রশ্ন ২. বরিশাল জেলা কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়? 

উত্তর:- বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল বরিশাল জেলা। ১৭৯৭ সালে বাকেরগঞ্জ গ্রামের প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। বাংলাদেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর বরিশাল জেলা।

প্রশ্ন ৩. বরিশালের পূর্ব নাম কি? 

উত্তর:- ১৭৯৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ জেলা বাকলা চন্দ্রদ্বীপ নামে পরিচিত ছিল। ১৭৯৭ সালে ঢাকা জেলার দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে বাকেরগঞ্জ জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮০১ সালে জেলার সদর দপ্তর বাকেরগঞ্জ জেলাকে বরিশাল নামে স্থানান্তরিত করা হয়। 

প্রশ্ন ৪. বরিশালের আয়তন কত বর্গ কিলোমিটার? 

উত্তর:- বরিশালের আয়তন ১৩,৬৪৪,৮৫ বর্গ কিলোমিটার। এই বিভাগের ভৌগোলিক অবস্থান ২১°৪৮’ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২২°২৯’ উত্তর অক্ষাংশ। এবং ৮৯°৫২’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯০°২২’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে পড়ে।

প্রশ্ন ৫. বরিশাল জেলায় কয়টি থানা আছে? 

উত্তর:- বরিশাল জেলায় মোট ১০ টি থানা রয়েছে। যথা-বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, উজিরপুর, বানারীপাড়া, গৌরনদী, হিজলা, আগৈলঝোড়া, মুলাদী, মেহেন্দিগঞ্জ এবং কাজিরহাট।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url