ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা ও অপকারিতা

আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি হচ্ছে ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। ডার্ক চকলেট অনেক ধরনের পাওয়া যায়। তবে ভালো মানের ডার্ক চকলেটের পাশাপাশি অনেক বাজে মানের ডার্ক চকলেটও বাজারে পাওয়া যায়। যেগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা ও অপকারিতা
চকলেট এমন একটি জিনিস, যেটি ছোট থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেরই প্রিয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ছোট শিশুদের চকলেট একটু বেশি প্রিয়। চকলেট ভালবাসে না এবং মানুষ খুব কমই আছে। বিশেষ করে মেয়ে মানুষ এবং বাচ্চারা চকলেট খুব বেশিই পছন্দ করে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের চকলেট খাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ করা হয়। তাদেরকে বলা হবে চকলেট শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে আপনি কি জানেন ডার্ক চকলেট রয়েছে বিশেষ পুষ্টিগুণ। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা ও অপকারিতা

ভালো ব্রান্ডের ডার্ক চকলেট আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, এতে রয়েছে ৭০% কোকো পাউডার। এটি আমাদের উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে অনেক সাহায্য করে। আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় হচ্ছে ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা ও অপকারিতা। তো চলুন জেনে আসি ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা

ডার্ক চকলেট খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারিতা পেতে পারেন। ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা হচ্ছে, আপনি যদি পরিমাণ মতো ডার্ক চকলেট দীর্ঘদিন ধরে খান তাহলে ধমনিতে কম কোলেস্টেরল জমে।

আমাদের প্রত্যেকের শরীরে ভালো এবং খারাপ দুই ধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে। পরিমাণ মতো ডার্ক চকলেট খাওয়ার ফলে ডার্ক চকলেটের পুষ্টিগুণ ক্ষতিকর কোলেস্টেরল ধ্বংস করে এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

১) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

নিয়মিত ডাক চকলেট খাওয়ার ফলে শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যার ফলে শরীরে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানের খোঁজ পাওয়া মুশকিল হয়। স্বাভাবিক ভাবেই ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন কম হয় তেমনি আরো অনেক ধরনের জটিল রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। যেকোনো বড় ধরনের রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় এবং জটিল রোগ ধারে কাছেও ঘেষতে পারে না।

২) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে

ডার্ক চকলেটে রয়েছে কোকোয়া। যা আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কেউ যদি টানা ৮ সপ্তাহ পরিমাণ মতো নিয়মিত ডার্ক চকলেট খায়, তাহলে সেই ব্যক্তির যেমন রক্তের সুগারের মাত্রা কমবে তার সাথে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে।

৩) হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

ডার্ক চকলেটে মে কোকোয়া পাউডার থাকে, সেটি আমাদের হৃদ এর জন্য উপকারী। হৃদরোগীরা যদি ডার্ক চকলেট প্রতিদিন খান তাহলে তাদের হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর যেকোনো ব্যক্তি যদি ডাক চকলেট খায় তাহলে তার কোন হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

৪) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

প্রতিদিন নিয়ম মেনে ডার্ক চকলেট খাওয়ার ফলে শরীরের ধমনিতে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি হয়। যেটি আমাদের শরীরে মস্তিষ্ক ধমনীকে বিশ্রাম বা শান্ত থাকতে সহায়তা করে। যার ফলে আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল সহজে করতে পারে এবং সকলের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে।

ডার্ক চকলেট খাওয়া উচিত কেন

অনেকেই মনে করেন যে ডার্ক চকলেট প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকেন, কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। ডার্ক চকলেট এর উপর বেশ কিছু গবেষণা করা হয়েছে এবং এতে জানা গেছে যে, ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা হিসেবে ডার্ক চকলেট অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে।

এতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনাল এবং ফেবানল রয়েছে। এমনকি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল হিসেবে এটি সবার কাছে পরিচিত ব্লু ভেরি। এবং আরো প্রমাণিত যে আসাই বেরির চেয়েও ডার্ক চকলেটে বেশি পরিমাণ এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। 

ডার্ক চকলেট খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের বড় বড় রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। ‌তাই যদি প্রতিদিন নিয়ম মেনে পরিমাণ মতো ডার্ক চকলেট খান তাহলে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে। অতিরিক্ত চকলেট ক্ষতি করতে পারে। পরিমাণ মতো চকলেট খেলে, চকলেটের মাধ্যমেও অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়, চকলেটে উপকারিতা কম না।

অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চকলেট অনেক সহায়তা করে। তাই চকলেট আপনি অনায়াসে খেতে পারেন বা কাউকে গিফট করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে সেটি অরিজিনাল ডার্ক চকলেট হয়। অরিজিনাল ডার্ক চকলেট হলে তবে সেটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকার এবং ভালো হবে।

ডার্ক চকলেট কি ঘুম কমায়?

অনেকেরই ধারণা প্রচুর পরিমাণে ডার্ক চকলেট খেলে ঘুম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত এটি হচ্ছে ডার্ক চকলেট নিয়ে সবচেয়ে কমন একটি মিথ্যা কথা। সাধারণত আমরা সবাই জানি যে, ডার্ক চকলেটে রয়েছে ক্যাফেইন।

ডার্ক চকলেটে এই ক্যাফেইন থাকে বলে সবার ধারণা ডার্ক চকলেট খেলে ঘুম কমে যায়। কিন্তু অনেক গবেষণার পর জানা গেছে যে, ডার্ক চকলেটে ক্যাফেইনের সংখ্যা অনেক কম। তাই এটি খাওয়ার পর আপনার ঘুম কমে যাওয়ার কোন কারণ হতে পারে না।

সাধারণত প্রতি ১০০ গ্রাম ডার্ক চকলেটের ১৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। সেই হিসাবে ১০০ গ্রাম ডার্ক চকলেটে মাত্র পরিমাণে ৭০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন রয়েছে। এই অল্প পরিমাণে ক্যাফেইনের মাত্রায় কারো ঘুম কমাতে পারেনা।

কোনভাবেই ঘুম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ডার্ক চকলেটকে দায়ী করতে পারবেন না। এটি ঘুম কমায় না বরং ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা হিসেবে এতে অল্প পরিমাণে ক্যাফেইন থাকার ফলে ডার্ক চকলেট সাময়িক ব্রেইন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।

বেশি পরিমাণে ডার্ক চকলেট খেলে কি হতে পারে

আমরা সাধারণত জানি এবং বুঝি যে অতিরিক্ত কোন কিছুই আমাদের শরীরের এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। হেলদি এবং ফিট থাকার জন্য আমাদের প্রতিটি জিনিসের প্রতি একটি রুটিন থাকতে হবে। অতিরিক্ত ডার্ক চকলেট খেলে অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

আমরা প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম ডার্ক চকলেট খেতে পারি। ডার্ক চকলেটে উচ্চ পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। যার জন্য ডার্ক চকলেট বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত হবে না। আপনি যদি অতিরিক্ত ডার্ক চকলেট খান তাহলে আপনার ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে আরো অনেক ধরনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। 

অতিরিক্ত ক্যালরি থাকার কারণে এটি খুব দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করে ফেলে। বরং আপনি যদি এটি বেশি পরিমাণ খান তাহলে আপনার ডিহাইড্রেশন, মাইগ্রেন এবং হার্টবিট এর অনেক সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি পরিমাণ মতো ডার্ক চকলেট খান সেটি আপনার চকলেট ক্রেডিং মেটানোর পাশাপাশি শরীর ও মন দুটোকেই সুস্থ রাখবে। তবে আপনার খেয়াল রাখতে হবে ডার্ক চকলেট যেন অরিজিনাল হয়। 

বাণিজ্যিকভাবে তৈরি মিল্ক চকলেটে থাকে প্রচুর পরিমাণে দুধ ও চিনি। যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী নয়। নিশ্চয়ই আপনি পার্থক্যটা বুঝতে পেরেছেন। তাই আপনি চকলেট খাওয়ার আগে অবশ্যই বুঝে শুনে খাবেন।

ডার্ক চকলেট পরিমাণ মত খেলে আমাদের তেমন কোন ক্ষতি হয় না কিন্তু আমরা যদি মিল্ক চকলেট খাই তাহলে সেটা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। শরীরের জন্য ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা রয়েছে অনেক।

ডার্ক চকলেট এর অপকারিতা

আমরা এতক্ষণ ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি এখন আপনি জানতে পারবেন ডার্ক চকলেট খাওয়ার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে। ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে। এটি খাওয়ার ফলে আপনার ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে কিন্তু এটি রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তুলবে।

কিছু ডার্ক চকলেটে আবার চিনির পরিমাণ কম থাকে এবং ক্যালরির পরিমাণও কম থাকে যা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। 

তবে আপনি যদি আপনার ওজন কমানোর চেষ্টায় থাকেন তাহলে আপনি ডার্ক চকলেট খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন। এবং চকলেট এর মধ্যে দুটি বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে। চকলেট হচ্ছে ক্যালোরির ঘন উৎস। প্রতিদিন আপনি খাবারের সাথে একটি বা দুটি চকলেটের টুকরো রাখতে পারেন।

তবে তা অল্প পরিমাণে, অল্প চকলেট খাওয়া ক্ষতিকর নয়। স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি অল্প পরিমাণে ডার্ক চকলেট খাওয়া ও স্বাস্থ্যকর। কিন্তু অতিরিক্ত ডার্ক চকলেট খাওয়া আপনাকে অন্য কোন খাবারের ক্যালরির মতোই মোটা করে তুলবে।

শেষ কথা

আপনি যদি পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন, ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ডার্ক চকলেট খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না। ডার্ক চকলেট অতিরিক্ত ক্যালরি যুক্ত থাকে বলে এটি এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। সব সময় প্রতিদিন চকলেটের ছোট ছোট অংশ খাওয়ার অভ্যাস করুন। এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। 

তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। এবং চকলেট এর মধ্যে রাসায়নিক যুক্ত থাকায় অতিরিক্ত চকলেট খাওয়াও উচিত নয়। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে  ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ডার্ক চকলেট নিয়ে আরো অন্যান্য বিষয় জানতে পারলেন।

ডার্ক চকলেট এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

প্রশ্ন ১: নিয়মিত ডার্ক চকলেট খেলে কি হয়? 

উত্তর:- নিয়মিত অল্প পরিমাণ ডার্ক চকলেট খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। কোলেস্টেরলের সমস্যায় ও সহায়ক হিসেবে কাজ করে ডার্ক চকলেট। এতে হৃদরোগ ও স্ট্রোক এর ঝুঁকি কমে।

প্রশ্ন ২: ডার্ক চকলেটে কি থাকে?

উত্তর:- ডার্ক চকলেটের মূল উপাদান হচ্ছে কোকো বীজ। এর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাভেনলস্ নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এবং ডার্ক চকলেট এর মধ্যে থাকে ক্যাডমিয়াম এবং পারদের মতো দুটি বিষাক্ত রাসায়নিক। দীর্ঘদিন এই রাসায়নিক যৌগ দুটি রক্তে মিশতে থাকলে কিডনি বিকল হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় অনেক গুণ। 

প্রশ্ন ৩: চকলেট কেন ভালো?

উত্তর:- চকলেটে চর্বি এবং চিনির সংমিশ্রণ একটি ক্রিমি,মজাদার টেক্সচার তৈরি করে যা খুবই সুস্বাদু। এই উপাদানগুলো সেরোটোনিন এবং অন্যান্য অনুভূতি ভালো নিউরোট্রান্সমিটারের মুক্তিকে উদ্দীপিত করে। 

প্রশ্ন ৪: চকলেট কতটা ক্ষতিকর? 

উত্তর:- চকোলেটের উচ্চ চর্বি এবং চিনির সামগ্রীর কারণে অনেক খারাপ প্রেস পাওয়া যায়। এর ব্যবহারে ব্রণ, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি ধমনী রোগ এবং ডায়াবেটিসের সাথে যুক্ত হতে পারে। কোকোতে ক্যাফেইন এবং সংশ্লিষ্ট বিষাক্ত রাসায়নিকও রয়েছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url