চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন

চিয়া সিড অথবা চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের আজকের এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। চিয়া সিডের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে চিয়া সিড আসলে কি? চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ ও চিয়া সিড সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।

চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা

দৈনন্দিন জীবনে মানুষের মধ্যে প্রতিদিনের খাবার ও এর পুষ্টিগুণ নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। কোন খাবার কতটুকু পুষ্টিকর এবং পুষ্টিকর খাবার গুলোই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখছেন। সচেতনতাই পারে একজন মানুষকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে। চিয়াসিডের নির্দিষ্ট কোন স্বাদ নেই কিন্তু এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। চিয়া সিড এর উপকারিতা, অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ও পুষ্টিগুণসহ চিয়াসিড সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নিয়ে থাকছে আমাদের আজকের পুরো পোস্টটি। তো চলুন আর দেরি না করে চিয়া সিড সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জেনে আসি।

চিয়া সিড কী?

চিয়া সিড মূলত একটি গাছের বীজ। চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তিলের দানার মত। চিয়া সিড শস্য জাতীয় সালভিয়া উদ্ভিদের বীজ,যা মরুভূমিতেই বেশি জন্মায়। আমেরিকা এবং মেক্সিকোতে চিয়া নামের এক ধরনের গাছ হয়। এই গাছের বীজকেই মূলত চিয়া সিড বলা হয়।

চিয়া সিড সাধারণত শস্যের তালিকায় পড়লেও একে এক ধরনের ভেষজও বলা হয়। প্রথমেই আমরা জেনে নিলাম চিয়া সিড আসলে কি! এবার চলুন জেনে নিন, চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ

সব ধরনের পুষ্টিকর খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি খাবার হচ্ছে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন চিয়া সিড। বীজ থেকে শস্য উৎপাদিত হওয়া এমন যেকোনো খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তেমনি চিয়া সিডেও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। চিয়া সিডে থাকা সেরকমই কিছু পুষ্টিগুণ হচ্ছে, 

  • কোয়েরসেটিন
  • কেম্পফেরল
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড
  • ক্লোরোজেনিক এসিড
  • আয়রন 
  • ক্যালসিয়াম 
  • পটাশিয়াম 
  • ম্যাগনেসিয়াম 
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং 
  • দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ। 

যারা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য রাখেন, তাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত চিয়া সিড থাকে। শুধু যে চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ রয়েছে তা কিন্তু নয় চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা ও রয়েছে। এতক্ষণ আমরা চিয়া সিডের পুষ্টিগণ সম্পর্কে জানলাম। এবার চলুন জেনে আসি, চিয়াসিডের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।

চিয়াসিড এর উপকারিতা 

চিয়াসিড যেহেতু পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটা খাদ্য তাহলে নিশ্চয়ই চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা দুইটাই রয়েছে। চিয়াসিড নিয়মিত পরিমাণ মতো খাওয়ার ফলে রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। তাহলে এবারে থাকছে চিয়াসিডের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা। চিয়া সিড থেকে আমরা কি কি উপকারিতা পেতে পারি।

১. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে পারে কারণ চিয়াসিডে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। 

২. হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং হাড়কে মজবুত করে তুলে চিয়া সিড, কারণ দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় চিয়া সিডে।

৩. হৃদরোগের ঝুঁকি এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। স্যালমন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে চিয়া সিডে।

৪. ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়, কারণ চিয়া সিড রক্তের চিনি (ব্লাড সুগার) স্বাভাবিক রাখে।

৫. মুরগির ডিমের থেকে তিনগুণ বেশি উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন রয়েছে চিয়া সিডে, যা মানব দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। 

৬. গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে, শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের হতে সাহায্য করে চিয়া সিড। 

৭. এছাড়াও চিয়া সিডের বিশেষত্ব হচ্ছে, চিয়া সিড চুল, ত্বক ও নখকে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। 

৮. মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করে ওজন কমাতে সাহায্য করে চিয়া সিড। 

৯. প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবারের ভালো উৎস হয় এর পুষ্টি উপাদান শরীরের শক্তি প্রদান করে। 

১০. কাজকর্ম করার পর শরীরের ক্লান্তি দূর করতে ও স্ট্যামিনা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 

১১. বদহজম থেকে বাঁচিয়ে সঠিকভাবে হজম হওয়ার জন্য প্রক্রিয়াকরণ করে। 

১২. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, কাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। 

১৩. হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।

বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিড এর উপকারিতা 

চিয়া সিড সব সময় ফ্রেশ এবং ঝরঝরে হয়ে থাকে। এক দানার সাথে অন্য দানা লেগে থাকে না। সাদা চিয়াসিডের তুলনায় সাধারণত কালো চিয়া সিডের সামান্য বেশি দামি হয়। কারণ এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ সামান্য বেশি থাকে। উপরে উল্লেখিত রয়েছে চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা, এবার চলুন জেনে আসি, বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিডের কিছু উপকারিতা। 

  • চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকার ফলে বাচ্চাদের ব্রেইনের বিকাশ বৃদ্ধিতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 
  • চিয়া সিডে থাকা সলিউবল ফাইবার শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। 
  • ক্যালসিয়াম, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় বাচ্চাদের পেশি গঠনে সাহায্য করে। 
  • এবং চিয়া সিড সুগার ও সুগার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। 
  • চিয়া সিডে দৈনিক চাহিদার প্রায় ৪২% আয়রন থাকে।

চুলের যত্নে চিয়া সিড

চিয়া সিড ত্বকের জন্য যেমন উপকারী তেমনি চুলের যত্নেও খুবই কার্যকরী। চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্টে এবারে রয়েছে, চুলের যত্নে কিভাবে চিয়া সিড ব্যবহার করা যায় সেই সম্পর্কে একটি হেয়ার মাস্ক হচ্ছে। 

  • এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চিয়া সিড ভিজিয়ে নিবেন। 
  • ভেজানোর পর তা ভিজে জেলের মত হয়ে গেলে, তাতে ২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার, ৬ চা চামচ নারিকেল তেল এবং অর্ধেক কাপ মধু মিশিয়ে নিবেন। 
  • তারপর মাইক্রো-ওভেনে অথবা চুলায় মিশ্রণটি ৩০ সেকেন্ড এর জন্য গরম করে নিবেন। 
  • তৈরি হয়ে গেল আপনার চিয়াসিডের হেয়ার মাস্ক।
  • পরে এই মিশ্রণটি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে চুলে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট রেখে দিবেন। 
  • গোসলের সময় শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিবেন। 

এভাবে সপ্তাহে একদিন করে চিয়াসিডের এই কার্যকরী হেয়ার মাস্কটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। ডিপ কন্ডিশনিং এর কাজ করে চুলকে করে তুলে সিল্কি এবং গুড়া থেকে মজবুত।

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্টের এবারে থাকছে, চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম বা চিয়া সিড কিভাবে খাওয়া হয়। চিয়া সিড পুষ্টিগণ সম্পন্ন একটা খাদ্য, যার নিজস্ব কোন স্বাদ নেই। যার কারণে সাধারণত চিয়া সিডকে কাস্টার্ড, সালাদ, পুডিং, জুস, স্মুদি যেকোনো খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়। সকালে খালি পেটে খেতে পারেন আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও খেতে পারেন। চিয়াসিড নিয়মিত ১ থেকে ১.৫ চা চামচ খাওয়া স্বাভাবিক এবং শরীরের পুষ্টির জন্য যথেষ্ট।

তবে অবশ্যই চিয়াসিড খাওয়ার পূর্বে ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। খাবার পূর্বে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে উপকার পাওয়া যায়। পেটের যেকোনো সমস্যায়, গ্যাস্টিকের সমস্যা অথবা ওজন কমাতে, খালি পেটে সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানির মধ্যে ২ চা চামচ চিয়া সিড ও ২ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

চিয়াসিড এর অপকারিতা

চিয়া সিডের আরেক নাম হচ্ছে, সুপারফুড। চিয়া সিডের উপকারিতার পরিমাণ বেশি তবে কিছুটা অপকারিতাও থাকার ফলে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। প্রতিটা জিনিসেরই উপকারিতা ও অপকারিতা থাকে। ঠিক তাই চিয়া সিডের ও কিছু অপকারিতা রয়েছে। 

চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্টের এবারে রয়েছে, চিয়া সিডের কিছু অপকারিতা নিয়ে আলোচনা। চিয়া সিডের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা উপরে জেনে এসেছি এবার জেনে নিবো চিয়াসিডের অপকারিতা সম্পর্কে। 

১. অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। চিয়া সিড সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করা ভালো। অতিরিক্ত চিয়া সিড প্রোটেস্ট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। 

২. মাত্রাতিরিক্ত চিয়াসিড খাওয়ার ফলে অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যেতে পারে। 

৩. চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার ফলে তা বেশি খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। 

৪. অতিরিক্ত চিয়াসিড খাওয়ার ফলে রক্তচাপ মাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

৫. চিয়া সিডে অনেকের এলার্জি থাকে, ফলে চিয়াসিড খাওয়ার ফলে ফুসকুড়ি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই তাদের জন্য চিয়াসিড না খাওয়াই ভালো। 

৬. গর্ভবতী নারী এবং নবজাতক শিশুর মা চিয়াসিড খেতে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণ মতো খাবেন।

সর্বশেষ 

আমাদের দেশে দিন দিন চিয়াসিডের উপকারিতার ফল পেয়ে এর চাহিদা বেড়েই চলছে। দিনদিন মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার ফলে সুস্থ জীবন যাপনের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসে নজর দিচ্ছে। পুষ্টিকর খাদ্য গুলোর মধ্যে চিয়াসিড এর গুরুত্বও অপরিসীম। 

আমাদের আজকের এই চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্টটি আপনার কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। চিয়াসিড সম্পর্কিত পুরো পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে জানিয়ে দিবেন। চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্টটি এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 

চিয়াসিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

প্রশ্ন: প্রতিদিন কতটুকু চিয়াসিড খাওয়া উচিত? 

উত্তর: নিয়মিত ১০০ গ্রাম পর্যন্ত চিয়া সিড খাওয়া যেতে পারে। অবশ্যই অতিরিক্ত খাওয়া উচিত হবে না। 

প্রশ্ন: চিয়াসিড খেলে কী ক্যান্সার হয়? 

উত্তর:- পরিমাণ অনুযায়ী নিয়মিত খাওয়া ভালো। তবে অতিরিক্ত খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার ও স্তন ক্যান্সারকে বাড়িয়ে তোলার সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন: সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খেলে কি হয়? 

উত্তর:- সকালে খালি পেটে চিয়াসিড খেলে,

অন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে, পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, গ্যাসের সমস্যা দূর করে। ত্বক,চুল ও নখকে সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। 

প্রশ্ন: চিয়া সিড এর ইংরেজি নাম কী?

উত্তর:- চিয়া সিড (তোকমা) এর ইংরেজি নাম, Basil seed (ব্যাসিল সীড)। চিয়া সিড এর অন্য একটি নাম হচ্ছে সুপার ফুড। যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url