সৌন্দর্যের জন্য সুস্থতার যোগব্যায়াম
মন শান্ত রাখতে যোগব্যায়াম এক গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে সৌন্দর্যের জন্য সুস্থতার যোগব্যায়াম সম্পর্কিত সব তথ্য নিয়ে। তো চলুন জেনে আসি, যোগব্যায়াম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও সৌন্দর্যের জন্য সুস্থতার যোগব্যায়াম কি কি।
বৃক্ষাসন
সৌন্দর্যের জন্য সুস্থতার যোগব্যায়াম এর ক্ষেত্রে বৃক্ষাসন ব্যায়ামটি শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শরীরকে সুস্থ রাখে, মন ফ্রেশ রাখে, প্রশান্তি, প্রফুল্ল থাকবেন সব সময়।
যেভাবে করবেন
২ পায়ের পাতা পাশাপাশি এক জায়গায় রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান। ডান পা তুলে বাঁ পায়ের ঊরুর ওপর এমনভাবে রাখুন যেন পায়ের পাতা নিচের দিকে ও গোড়ালি ঊরুর মূলে লাগে। ২ হাত শ্বাস নিতে নিতে মাথার ওপরে টান টান করে একসঙ্গে জোড় করুন। শ্বাসপ্রশ্বাস ধীরে ধীরে ও নিয়ন্ত্রণ রেখে ছাড়বেন এবং টানবেন। দৃষ্টি স্থির রাখার জন্য আই লেভেল বরাবর যেকোনো একটা বিন্দুতে তাকান।
পুরাটা শরীর স্থির-নিশ্চল রাখার চেষ্টা করুন। দৃষ্টি সামনের দিকে থাকলেও মনোযোগ শ্বাসপ্রশ্বাসের দিকে ও মাটিতে রাখা ডান পায়ের পাতায় দিন। আসন থেকে নামার সময় ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ধীরে ধীরে হাত ও পা নামিয়ে ফেলুন। এরপর বাঁ পা তুলে ডান পা মাটিতে রেখে একইভাবে বার বার করুন। এভাবে করলে পুরোটা দিন আপনার শরীর ও মন ফুরফুরে থাকবেন।
সময়
এক মিনিট দিয়ে শুরু করে সাধ্য অনুযায়ী সময় বাড়ান। একটানা ৪ থেকে ৫ মিনিট থাকার চেষ্টা করুন। একবার একবার করে এভাবে আপনি চার থেকে পাঁচ বার করুন।
সতর্কতা
আপনি দলগত ভাবেও করতে পারেন বা একা বসে করতে পারেন। একা এক ঘরে বা খোলা জায়গায় করুন। মনোযোগ ঠিক রাখতে আশপাশে যেন কেউ না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ভ্রামরী প্রাণায়াম
ভ্রামরে প্রাণায়াম, সৌন্দর্যের জন্য সুস্থতার যোগব্যায়াম এবং সব সময় ফিটনেস ঠিক রাখতে, মন ভালো রাখতে, ফুরফুরা রাখতে শরীরে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
যেভাবে করবেন
আপনি সুখাসন বা সিদ্ধাসনে মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে দুই কান বন্ধ করে রাখুন। বাকি চারটা আঙুল দিয়ে চোখের পাতা এমনভাবে ঢাকুন যেন চোখের পাতায় আঙুলের স্পর্শ লাগতে না পারে।
আপনি ফুসফুস ভরে শ্বাস টেনে নিতে হবে। ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে শ্বাস ছাড়ার সময় মুখ বন্ধ রেখে কণ্ঠযন্ত্র থেকে ভ্রমরের মতো নিরবচ্ছিন্নভাবে শব্দ করতে থাকতে হবে।
ব্যায়াম করার সময় মনোযোগ ভ্রুর মাঝে রাখুন। ভালো হয় রাতে ঠিক ঘুমাতে যাওয়ার আগে অথবা ঘুম থেকে ওঠার পরপরই করলে। এ ছাড়া যখনই মানসিক চাপ অনুভব করবেন, একটু মনোযোগ দিয়ে নিয়ম মেনে করলেই দেখবেন মন হালকা হবে।
সময়
আপনি যখনই করবেন, ১০ থেকে ২১ বার করবেন। এই ব্যায়ামটি আপনার শরীর ও স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
উপকারিতা
আপনার মানসিক চাপ কমায়। নিয়মিত অভ্যাসে হতাশা দূর হয়। ঘুম গাঢ় হবে। রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। আপনার স্বাস্থ্য ও মন সবসময় ভালো থাকবে।
অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম
প্রতিদিনই আমাদের উচিত কর্মব্যস্ততার মধ্যে থেকেও কিছুটা সময় বের করা। এই সময়টা শরীরকে সুস্থ, সুন্দর রাখতে অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম ব্যায়ামটি করতে পারেন সৌন্দর্যের জন্য সুস্থতার যোগব্যায়াম হিসেবে।
যেভাবে করবেন
আপনি সুখাসনে বা সিদ্ধাসনে সোজা হয়ে বসতে হবে। এবং আপনার হাত কোলের ওপর খুব আরামদায়ক ভাবে রাখুন। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাকের ডান ছিদ্র চাপার জন্য রাখবেন ও মধ্যমা–অনামিকা নাকের বাম ছিদ্র চেপে বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করতে হবে। আপনি প্রথমে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে নাকের ডান ছিদ্র বন্ধ করে বাঁ ছিদ্র দিয়ে ধীরে ধীরে নিঃশব্দে শ্বাস টেনে নিতে হবে।
আপনার ফুসফুস যখন সম্পূর্ণ ভরে গেলে তখন মধ্যমা ও অনামিকা দিয়ে নাকের বাঁ ছিদ্র বন্ধ করে বৃদ্ধাঙ্গুল সরিয়ে ডান ছিদ্র দিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে। আবার ডান ছিদ্র দিয়ে শ্বাস টেনে নিয়ে যান, ছিদ্র বন্ধ করে বাঁ ছিদ্র দিয়ে আস্তে আস্তে নিঃশব্দে শ্বাস ছাড়ুন।
আবার বাঁ ছিদ্র দিয়েই শ্বাস ভরে নিন। এভাবে চক্রটি বারবার চলতে থাকবে। যখনই দম নেবেন, তখনই শুধু আঙুল পরিবর্তন ঘটবে। এটা মনে রাখলে আঙুল নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর হবে। এবং আপনি যদি প্রতিদিন এই ব্যায়ামটি রুটিন মেনে করেন তাহলে আপনার স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
সময়
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে শান্ত পরিবেশে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০/১৫ মিনিট অভ্যাস করুন।
উপকারিতা
যদি আপনার কখনো মানসিকভাবে খুব অস্থির লাগে বা মন খারাপ লাগে, তখন ধীরস্থিরভাবে বসে মনোযোগ শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে দিয়ে নিঃশব্দে অনুলোম-বিলোম করলে কিছুক্ষণ পরই মানসিকভাবে হালকা লাগবে। প্রশান্তির জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে অনুশীলন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শীতের শ্বাসের জন্য যোগব্যায়াম
শীতকালীন সময়ে সবার ক্ষেত্রে একটু বেশিই অসুস্থতা বেড়ে যায়। শীতকালে হাঁপানি বা ব্রংকাইটিস রোগীর শ্বাসকষ্ট বাড়ে। এ ছাড়াও শুষ্ক ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্টের জন্য দায়ী ভাইরাস সংক্রমণও বেড়ে যায়। তাই এই শীতে ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সবার ব্যায়াম করা খুবই জরুরি।
প্রতিদিন যদি আপনি এই ব্যায়ামটি করেন, তাহলে আপনার এই অ্যারোবিক ব্যায়াম আপনার ফিটনেস বাড়াবে এর পাশাপাশি আপনার শরীর ও স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে।
শুধু শীতকালেই নয় প্রতিটা সময়ই আপনি সৌন্দর্যের জন্য সুস্থতার যোগব্যায়াম করবেন। আপনার বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এ ছাড়া সব বয়সীদের জন্য ফুসফুসের ব্যায়ামও গুরুত্বপূর্ণ। শাসির জন্য নানান যোগব্যায়াম রয়েছে। এখানে প্রায় সকল সুস্থ মানুষের ব্যায়াম করতে পারবে এরকম একটি ব্যায়ামের উদাহরণ দেয়া হলো।
উদাহরণ
প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই পায়ের পাতা ওঠানামা করতে হবে ৩০ সেকেন্ড। অনেকটা দ্রুত বাম-ডান করার মতো। কিন্তু এখানে শুধু পায়ের পাতা ওঠানামা করবে; দ্বিতীয় ধাপে সোজা হয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়াতে হবে। নাক দিয়ে ধীরে শ্বাস নিতে হবে, তারপর শিস দেওয়ার মতো করে শ্বাস ছাড়তে হবে। আপনাকে এভাবে কয়েকবার করতে হবে।
কমপক্ষে চেষ্টা করবেন তিন থেকে চার বার করার। এবার হাঁটু ভাঁজ করে দ্রুত ডান-বাম করতে হবে ৩০ সেকেন্ড। এটাকে বলা হয় হাই নি জাম্প।
এ ক্ষেত্রে হাঁটু উঁচু করে ডান-বাম করতে হবে; এরপর এবার আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে ও শিসের মতো করে শ্বাস ছাড়তে হবে। এরকম কমপক্ষে তিন বার করতে হবে। যাঁদের আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কম বা সমস্যা আছে, তাঁদের ব্যায়াম মুখে শিস দেওয়ার মতো করে শ্বাসের ব্যায়াম
প্রথমে সোজা হয়ে একটি চেয়ারে বসুন। খেয়াল রাখতে হবে যেন মেরুদণ্ড সোজা থাকে। এবার ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিন।
সময়
১০ সেকেন্ড বা আপনার শ্বাস ধরে রাখার ক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এবার মুখ শিস দেওয়ার মতো করে ছোট ছোট শ্বাস ছাড়তে থাকুন। পুরো প্রক্রিয়াটি তিনবার করুন।
উপসংহার
যোগব্যায়াম একটি সুস্থ শরীরের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। যোগব্যায়াম শরীরের নানা উপকারে আসে। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সহায়তা করে, শরীর সুস্থ রাখতে, প্রশান্তি ও মন সুস্থ রাখতে এবং আমাদের সারাদিনের ক্লান্ত দূর করতেও যোগব্যায়াম অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এসব ব্যায়ামের অনেক উপকারিতা রয়েছে।
বুকের মাংসপেশি প্রসারণ এর মাধ্যমে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে। হাঁটু ও পায়ের গোড়ালিকে শক্তি দেয়, মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বাড়ায় ইত্যাদি আরও অনেক ধরনের ভালো ফল পাওয়া যায় যোগব্যায়ামের ফলে। আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পেরেছেন সৌন্দর্যের জন্য সুস্থতার যোগব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম সম্পর্কে আরও বিভিন্ন তথ্য।
সৌন্দর্যের জন্য সুস্থতার যোগব্যায়াম পুরো আর্টিকেলটি এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিয়মিত ব্যায়াম করুন, তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং শাক-সবজি ও পরিমিত পানি পান করুন। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন। ধন্যবাদ।
সৌন্দর্যের জন্য সুস্থতার যোগব্যায়াম সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
প্রশ্ন ১: যোগব্যায়াম কি ভালো?
উত্তর:- যোগব্যায়ামের ধ্যান এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের অন্তর্ভুক্তি একজন ব্যক্তির মানসিক সুস্থতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত যোগব্যায়াম অনুশীলন মানসিক স্বচ্ছতা এবং প্রশান্তি তৈরি করে। যা শরীরের সচেতনতা বাড়ায়, দীর্ঘস্থায়ী চাপ নিদর্শন উপশম করে, মনকে শিথিল করে, মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে এবং ঘনত্ব তীক্ষ্ণ করে। বলেছেন ডা: নেভিনস।
প্রশ্ন ২: যোগের ৫টি প্রধান প্রকার কি কি?
উত্তর:- যোগের ৫টি প্রধান প্রকারের মধ্যে রয়েছে,
- হঠা
- আয়েঙ্গার
- ভিনিয়াসা
- গরম যোগ
- অষ্টাঙ্গ।
অ্যারোবিক ওয়ার্ক আউটের জন্য, আপনার হার্ট রেট বাড়ানোর জন্য একটি ভিনিয়াসা ক্লাস সেরা হতে পারে।
প্রশ্ন ৩: দিনে ১০ মিনিট যোগব্যায়াম কি যথেষ্ট?
উত্তর:- আপনার শরীরকে অনন্য যোগ আন্দোলনে অভ্যস্ত করার জন্য দিনে 10 মিনিট যোগব্যায়াম একটি দুর্দান্ত সময় হতে পারে।
প্রশ্ন ৪: যোগব্যায়াম করার পর কি শরীর ব্যথা হয়?
উত্তর:- যোগব্যায়ামের পর সাধারণত শরীরে ব্যথা হতে পারে তবে এই ব্যথা শরীরের জন্য উপকারী। তার মানে দাঁড়াবে আপনার শরীরের পেশি গুলো একটি ভালো ব্যায়াম করেছে। এতে পেশি বৃদ্ধি এবং ভালো কর্মক্ষমতা অনুভব করবেন।
প্রশ্ন ৫: দিনে ৩০ মিনিট যোগব্যায়াম করলে কি ওজন কমে?
উত্তর:- অবশ্যই, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে দিনে ৩০ মিনিট যোগব্যায়াম আপনার জন্য যথেষ্ট। তবে যোগ ব্যায়াম নিয়মিত করতে হবে।
সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url