কাজু বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা - কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম
কাজু বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। কাজু বাদাম একটি জনপ্রিয় খাবার যা আমরা অনেকেই খেয়ে থাকি বা খেতে চাই।
দানাদার খাবারের মধ্যে কাজু বাদামের জুরি নেই। কাজু বাদাম গাছের আদি-নিবাস ব্রাজিলে হলেও, বর্তমানে সারাবিশ্বে উষ্ণ আবহাওয়ার দেশগুলোতে কাজু বাদামের ব্যাপক ফলন হচ্ছে। কাজু বাদাম চিবিয়ে ও রান্না করে খাওয়া যায়।
কাজু বাদামের উপকারিতা
কাজু বাদাম রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে ফিরনি, সেমাইয়ের স্বাদ অন্যরকম বৃদ্ধি করে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, কাজু বাদামে এতো পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়, যা মাংস রান্না করে প্রোটিনের সমপরিমাণ।
সুস্বাদু কাজু বাদাম প্রচুর পরিমাণ প্রোটিনসহ পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ একটি বীজ। এতসব পুষ্টি উপাদানের কারণে এটির স্বাস্থ্য উপকারিতাও অনেক। হাড়ের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ওজন কমাতে, হার্টকে ভালো রাখতে এবং ডায়াবেটিস রোগের উপকারেও সহায়তা করে কাজু বাদাম। তো আসুন জেনে নেই কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
১. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
কাজু বাদামকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পাওয়ার হাউস (Power house) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগ, চোখের বিভিন্ন রোগ ও স্মৃতিশক্তি জনিত যে কোনো সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ফলে ত্বকের সৌন্দর্য বজায় থাকে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
২. ওজন কমায়
অন্যান্য বাদামে বেশি পরিমাণে ক্যালোরি এবং ফ্যাট থাকে বলে সেগুলো ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে, কাজু বাদামে যে পরিমাণ ক্যালোরি থাকে, তার ৮৪ শতাংশই হজম করতে এবং শুষে নিতে পারে মানব দেহ।
এছাড়া এটি প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্ষুধা কমাতে এবং পেটভরা রাখতে সহায়তা করে বলে ওজন কমার সম্ভাবনা থাকে অনেক। কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতার মধ্যে এটা একটি খুবই উপকারী উপায় হিসেবে কাজ করে।
৩. হার্টের জন্য উপকারী
স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে উপকারী হিসেবে কাজ করে কাজু বাদাম। এ ছাড়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কাজু বাদাম নিয়মিত খেলে রক্তচাপ ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমিয়ে হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে।
৪. ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে
ডায়াবেটিস রোগের জন্যও উপকারী হিসেবে কাজ করে কাজু বাদাম। এতে থাকা ফাইবার রক্তের শর্করার স্পাইক প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং এতে শর্করার পরিমাণও অনেক কম থাকে। আর এ কারণে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
৫. হাড়ের জন্য উপকারী
কাজু বাদামে ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ থাকার কারণে এটি হাড়ের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় কপারের অভাব পূরণ করে এটি। আর কপারের অভাবে বিভিন্ন হাড়ের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই কাজু বাদাম হাড়ের জন্য উপকারী হিসেবে কাজ করে।
৬. রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ:
ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিস থাকলে খাবারে কাজু বাদাম যোগ করা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে (Control) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৭. স্বাস্থ্যকর কপার পাওয়া যায়:
শরীর সুস্থ রাখতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, লোহিত রক্ত কণিকা বাড়াতে, হাড় মজবুত করতে এবং সংযোজক টিস্যু সুস্থ রাখার পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
৮. কোষের ক্ষয় রোধ:
বাদাম ও বীজ (Seed) উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‘ফ্রি র্যাডিকেল’য়ের কারণে হওয়া দেহের ক্ষতি কমায়।
৯. হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে:
২০০৭ সালে, ‘ব্রিটিশ জার্নাল অব নিউট্রিশন’ইয়ে প্রকাশিত পর্যালোচনা থেকে দেখা গেছে, সপ্তাহে চারবারের বেশি কাজু বাদাম খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত কমায়।
১০. কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত হতে পারে
দুই ধরনের কোলেস্টেরলের মধ্যে রয়েছে ‘এলডিএল’ ও ‘এইচডিএল’। এলডিএল, ধমনীতে ক্ষতিকারক চর্বি জমাট বাঁধায় এবং এইচডিএল এই ক্ষতিকারক চর্বি এলডিএলকে যকৃতের দিকে বহন করতে সাহায্য করে।
১১. রক্ত চাপ হ্রাস পেতে পারে
আমেরিকার প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যাই উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। ২০১৯ সালের ‘কারেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইন নিউট্রিশন’য়ের সমীক্ষা অনুযায়ী, কাজু বাদাম খাওয়া উচ্চ রক্তচাপ কমায়। স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, হৃদরোগ সৃষ্টিকারী চর্বি ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’য়ের মাত্রা কমাতে কাজু বাদাম সহায়তা করে।
১২. ওজন কমাতে সাহায্য করে
ওজন কমাতে চাইলে কাজু বাদাম খাওয়া যেতে পারে, এটা কম ক্যালরি ও উচ্চ চর্বি-জাতীয় খাবার।
কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম
কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা অনেক। তাই এটি নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করা উচিৎ। তবে কিভাবে বা কি নিয়মে খাবেন তা জানা দরকার। এর জন্য প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কেন খাবেন? এবং কখন খাবেন?
যদি আপনি ডায়েট এর জন্য খেয়ে থাকেন তাহলে সকালের নাস্তার পর এবং দুপুরের খাবারের আগের সময়, যেমন- ১১.০০–১.০০ টার মধ্যে একমুঠ বাদাম খেতে পারেন। আবার বিকালেও যখন হালকা ক্ষুধা লাগবে তখন নাস্তা হিসাবে অন্য খাবার না খেয়ে একমুঠ কাজু বাদাম ৪.০০–৫.৩০ টার মধ্যেও খেতে পারেন। এতে ক্ষুধাও চলে যাবে সেই সাথে আপনার ডায়েটও ঠিক থাকবে।
ডায়েট ছাড়া যদি অন্য কোন কারণে খেয়ে থাকেন তাহলে ১০–১২ টি বাদাম রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে তা খেয়ে নিবেন। অতিরিক্ত মাত্রায় কাজু বাদাম খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে কিন্তু শরীরের উপকারের পরিবর্তে অপকারটা বেশি হবে।
কারণ এর উপাদানগুলো বেশি মাত্রায় শরীরে যেতে থাকলে তা উল্টো ফল হতে শুরু করে। তাই কাজু বাদাম সবসময় পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে, তবেই এর সুফল পাওয়া যাবে।
কাজু বাদামের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক
কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা থাকলেও যেমনটি সঠিক খাদ্য সামগ্রী হিসাবে কাজু বাদাম উপকারী, তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতাও রয়েছে। নিচে কাজু বাদামের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তুলে ধরা হলো:
১. অ্যালার্জির ঝুঁকি:
কাজু বাদাম একটি বাদাম প্রজাতি যা কিছু মানুষের জন্য অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।
২. তাড়াতাড়ি ব্যাধি:
কাজু বাদাম গ্রাসিমার সাথে যুক্ত হলে কিছু মানুষে তাড়াতাড়ি ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। যারা তাড়াতাড়ি ব্যাধির ঝুঁকিতে আছেন, তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত সার:
কাজু বাদামে মধ্যে অতিরিক্ত সার থাকতে পারে, যেমন লেখক অক্সালিক অ্যাসিড এবং ফিটিক অ্যাসিড। এই সারগুলির অতিরিক্ত পরিমাণ আপনার স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এই ক্ষতিগ্রস্ত দিকগুলি সাধারণত কেবলমাত্র কিছু ব্যক্তি দ্বন্দ্বিতা বা সমস্যার জন্য প্রযোজ্য হতে পারে।
তবে, যদি আপনি কোনও বিশেষ মেডিক্যাল সমস্যা বা অ্যালার্জি সম্পর্কে সন্দেহ করেন, তবে সর্বদা সঠিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
সকালে খালি পেটে কাজু বাদাম খেলে কি হয়?
কাজু বাদামে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ই, প্রোটিন, ফাইবার, ওমেগা-থ্রি, ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি এসিড থাকে। এ ফলটি ঠিকভাবে না খাওয়া হলে এর পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিত হবেন। সবসময় কাজু বাদাম আগের রাতে ভিজিয়ে তবেই খাবেন।
আর সকালে খালি পেটে ভেজানো কাজু বাদাম খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আপনি যদি খালি পেটে সকালে না খেতে পারেন তাহলে হালকা নাস্তার পরে কাজু বাদাম খেতে পারেন।
আমরা অনেকে বিকেলে নাস্তায় অনেক রকমের হালকা খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা সে হালকা খাবারের বদলে সেখানে কয়েকটা কাজু বাদাম খেয়ে নিতে পারি। এতে যেমন আমাদের দেহে পুষ্টির চাহিদাও মিটে গেল তেমনি আমাদের সময় অপচয় করে বেশি কিছু খেতে হলো না। কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা এর এটাও একটা অন্যতম কার্যকরী উপায়।
কাঠবাদাম খাওয়ার উপকারিতা
কাঠবাদাম খেলেই যে শুধু উপকার মিলবে এমন নয়, ত্বকের যত্নেও এটি এক অসাধারণ উপাদান। কাঠবাদামে আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ফলিক অ্যাসিড। তাছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ডি–অক্সিডাইজ (অক্সিজেন কমে যাওয়া) হওয়া থেকে রক্ষা করে।
রূপচর্চায় কাঠবাদামের ব্যবহার ত্বকে ভাঁজ পড়া কমিয়ে দেয়, কালো দাগ দূর করে, রোদে পোড়া ভাব দূর করে। অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য খুবই ভালো খাবার কাঠবাদাম।
আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা জানালেন, কাঠবাদামের ময়েশ্চারাইজার ত্বকের ব্ল্যাকহেডস ও ব্রণ দূর করে। বিশেষ করে যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে তাঁদের ত্বক আরও তৈলাক্ত হয়ে পড়ে, বাদাম তেল তাঁদের জন্য উপকারী।
ত্বকে কাঠবাদাম তেল মালিশ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং ত্বক সুস্থ থাকে। কাঠবাদামে আছে ভিটামিন ‘ডি’। এই তেলের মালিশ শিশুদের জন্যও উপকারী।
শেষকথা
আমরা সুস্থ থাকার জন্য নানান খাবার খেয়ে থাকি। কিন্তু,কাজু বাদাম খুবই উপকারী একটি খাদ্য উপাদান। তাই সুস্থ থাকার জন্য এবং দেহ ও ত্বকের উন্নতির জন্য আজ থেকেই পরিমিত পরিমাণে এবং নিয়মিত কাজু বাদাম খাওয়া শুরু করুন।
কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম, কাজু বাদামের উপকারিতা ও কাজু বাদামের অপকারিতা বা ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিয়মিত সঠিক খাদ্য গ্রহণ করুন, শরীরকে সুস্থ রাখুন।
FAQ: কাজু বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা - কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম
১. কি বাদাম খেলে ওজন বাড়ে?
উত্তর: যেকোনো ধরনের বাদামেই রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ প্রয়োজনীয় কিছু খনিজ। বাদামের শর্করার পরিমাণ খুব সামান্য হওয়ায় বাদাম খেলে ওজন বাড়ে না। অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের খাদ্য তালিকায় বাদাম রাখতে পারেন।
২. কাজু বাদাম খেলে কি হতে হয়?
উত্তর: যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তাদের জন্য কাজু বাদাম খুবই ক্ষতিকারক। এবং কাজু বাদাম খেলে অত্যধিক মাত্রায় ওজনও বেড়ে যায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজু বাদাম এড়িয়ে চলুন, অন্যান্য বাদাম খেতে পারেন তাতে ওজন বাড়ে না।
৩. ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামে কত ক্যালরি থাকে?
উত্তর: ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামে প্রায় ৫৬৯ গ্রাম ক্যালরি থাকে এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকায় শিশুদের বৃদ্ধির জন্য খুবই উপকারী।
৪. কোন বাদামের চর্বি কম।
উত্তর: পেস্তা বাদাম হলো শুধুমাত্র টিকিট, এতে সবচেয়ে কম ক্যালরি থাকে। এবং অন্যান্য বাদামের মধ্যেও চর্বির পরিমাণ কম।
৫. কাজু বাদাম কোথায় জন্মে?
উত্তর: কাজু বাদাম উৎপাদনকারী প্রধান দেশ হচ্ছে ভারত এবং ব্রাজিল। অন্যান্য দেশগুলোতেও এর ফলন হয়।
৬. কাজু গাছের আদিনিবাস কোথায়?
উত্তর: কাজু গাছের উৎপত্তি বা আদিনিবাস ব্রাজিল থেকে।
সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url