কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম: কিসমিস হলো শুকনো আঙ্গুর। একে ইংরেজিতে রেইসিনও বলে। কিসমিস বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত হয়। কিসমিস সরাসরি ও রান্নার মাধ্যমেও খাওয়া যায়। কিসমিসের মধ্যে যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। কিসমিস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি দূর হয়।
কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা
আজ আমরা কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা, সকালে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা, কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।

চলুন আর দেরি না করে কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা, কিসমিস খাওয়ার নিয়ম, কিসমিসের ক্ষতিকর দিক, সকালে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা, কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা, শুকনো কিসমিস খেলে কি হয় তা সম্পর্কে সম্পূর্ণ জেনে নেই।

কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা

কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। কিসমিস আমাদের শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে পাশাপাশি রক্তের লাল ক্ষণিকার পরিমাণ বাড়ায়। কিসমিস শুকনো খাওয়া থেকে ভিজিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

প্রতিদিন কিসমিসের পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি দূর হয়। কোন প্রকার ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এছাড়াও কিসমিসের পানি রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত কিসমিস খাবার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া উচিত নয়। 

তাছাড়া অনেকের কিসমিসে এলার্জি থাকে, তারা কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তারা অতিরিক্ত পরিমাণে কিসমিস খাবেন না, এতে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।

কিসমিসের উপকারিতা

কিসমিস এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন। তাই এটা আমাদের শরীর গঠনে ভূমিকা রাখে। আমাদের মাঝে অনেকেই আছে যারা সবসময় কিসমিস খেতে ভালোবাসে। এখানে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে।

  • কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা শরীরের পরিপাক ক্রিয়ায় দ্রুত সাহায্য করে। এতে করে খাবার সহজে হজম হয় এবং শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর হয়।
  • সবাই ওজন কমাতে চায় না। এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ওজন বৃদ্ধি করতে চান। আপনি যদি ওজন বাড়াতে চান, সেক্ষেত্রে কিসমিস হতে পারে আপনার পরম বন্ধু।
  • কিসমিস রোজকারের খাবারের মধ্যে রাখলে শরীরে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়, ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • কিসমিসের পটাশিয়াম রক্তের চাপ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে থাকা উচ্চমাত্রার সোডিয়াম, রক্তচাপ বাড়ার প্রদান কারণ। কিসমিস শরীরের সোডিয়াম মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • কিসমিসে ভিটামিন এবং খনিজগুলির সাথে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনলগুলির মত অন্যান্য যৌগগুলির প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • কিসমিসে পাওয়া যায় আরও এক উপাদান, ক্যালসিয়াম। যাহার ও দাঁতের জন্য খুব প্রয়োজন।
  • ঘুম ভালো না হলে শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক অসুস্থতাও দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে জাদুকরী ভূমিকা পালন করে এই কিসমিস। কিসমিসের যে আয়রন রয়েছে তা ভালো ঘুমে সাহায্য করে।

নিয়মিত কিসমিস খাওয়ার সাতটি উপকারী দিক

কিসমিসের উপকারের কথা এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না। এমনকি কিসমিস ভেজানো পানীয় শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কিসমিসে ভিটামিন খনিজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি ফাইবার রয়েছে। কিসমিস শরীরে যেমন শক্তি যোগায় এবং রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করেন।

কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা দুইটিই রয়েছে। তার মধ্যে কিসমিসের কয়েকটি জাদুকরী উপকারীর কথা আলোচনা করা হলো–

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ

  • কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা শরীরের পরিপাকে দ্রুত সাহায্য করে, এতে করে খাবার সহজে হজম হয় এবং শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে।

সুস্থভাবে ওজন বাড়ায়ঃ

  • সবাই ওজন কমাতে চায় না। এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা ওজন বাড়াতে চায়। আপনি যদি ওজন বৃদ্ধি করতে চান সে ক্ষেত্রে কিসমিস হতে পারে অধিক কার্যকরী সহজ মাধ্যম।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

কিসমিসে এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা শরীরে বেশি বেড়ানো ফ্রি মেডিকেলগুলোর সাথে লড়াই করে নিঃশেষ করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে (Controls blood pressure)

কিসমিসে টাকা পটাশিয়াম রক্তের চাপ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে থাকা সোডিয়াম রক্তচাপ বাড়ায়। কিসমিস শরীরের সোডিয়াম এর মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় (Increases immunity)

কিসমিসে ভিটামিন এবং খনিজ এর মাত্রা অধিক থাকে। এখানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার মতো প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

হাড়ের স্বাস্থ্যবর্ধক (Bone health promotion)

কিসমিসে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম। যা হার ও দাঁতের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। এটি আমাদের হার ও জয়েন্ট এর জন্য খুব উপকারী।

ঘুম ভালো হয় (Sleep is better)

কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আয়রন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা শুধুমাত্র হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে না বরং বিপাক ক্রিয়া উন্নত করে। কিসমিস মানসিক অবসাদ দূর করতে সক্ষম। কিসমিস খেলে ঘুম ভালো হয়।

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি রক্তে লাল ক্ষণিকার পরিমাণ বাড়ায় কিসমিস। কিন্তু শুকনো কিসমিস খাওয়ার বদলে ভিজিয়ে খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়। কিসমিস ভেজানো পানি রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। রোজ কিসমিসের পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য এসিডিটি থেকে মুক্তি পাবেন ঔষধ ছাড়াই।

কিসমিসের অপকারিতা

কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। উপকারিতা যেমন আছে তেমনি কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ অতিরিক্ত কিসমিস খেলে মানুষ অল্প সময়ে মোটা হয়ে যায়।

যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন কিসমিস খান, তাহলে ডায়াবেটিস বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকের আবার কিসমিসে এলার্জি সমস্যা থাকে, তাই তাদের উচিত কিসমিস এড়িয়ে চলা।

কিসমিস খাওয়ার নিয়ম

কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনই কিসমিস খাওয়ার নিয়মও রয়েছে। দেখে নিন কিসমিস খাওয়ার নিয়ম–

  • রান্না করেঃ সাধারণত কিসমিস রান্না করে খাওয়া হয়। বিভিন্ন পায়েস, সেমাই কিংবা কোরমা বানানো জাতীয় খাবার তৈরি সময় কিসমিস ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে আমাদের উপমহাদেশের অন্যতম সুস্বাদু খাবার পায়েস তৈরিতে কিসমিস ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
  • কাচাঃ বাজার থেকে কিসমিস কিনে আপনি খাওয়া শুরু করে দিতে পারেন। তবে শুরু করবেন না, কারণ এগুলোর সাথে নানা রকম ধুলোবালি থাকতে পারে। তাই এগুলো ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। তবে অতিরিক্ত কিসমিস খাবেন না, পরিমাণে কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • রাতে ভিজেয়ে সকালে সকালে খানঃ কিসমিস খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে রাতে কিসমিস কিছু পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সকালে চুপসে থাকা কিসমিস গুলো চিবিয়ে খেয়ে নিন। সারারাত ধরে ভিজানো কিসমিসের ভেজানো পানি না ফেলে পানি খেয়ে ফেলতে পারেন। 

এতে আপনার শরীরের জন্য নানান পুষ্টি উপাদান বহন করে শরীরকে সারাদিন সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন কিসমিস রাতে ভিজেয়ে রেখে সকালে খাওয়া সবচেয়ে ভালো মাধ্যম।

সর্বশেষ

আশা করি আজকের পোস্টের মাধ্যমে আপনি কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনার কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা সর্বক্ষণ আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত। প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর এরকম আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েব সাইটটি ভিজিট করুন।

কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ

১. কিসমিস খেলে কি ক্ষতি হয়? 

উত্তর :- কিসমিস বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে, কিসমিস খেলে কোন ক্ষতি হয় না বরং উপকার হয়। ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর একটি ভালো উৎস কিসমিস। কিসমিস খাওয়ার ফলে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে, হৃদরোগ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। 

২. শুকনো কিসমিস খেলে কি হয়? 

উত্তর :- শুকনো কিসমিস খাওয়ার ফলে, হজমে সাহায্য করে, রক্তশূন্যতা দূর করে, দ্রুত দেহে শক্তি যোগায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হাড়ের সুরক্ষা দেয়, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও চোখের জন্য খুবই উপকারী ইত্যাদি। 

৩. কিসমিসে কোন ধরনের শর্করা থাকে? 

উত্তর :- কারেন্টস বা করিন্হায়ান কিসমিস কালো করিন্হ আঙ্গুর থেকে উৎপাদিত হয় এবং আকারে কিছুটা ছোট হয়। কিসমিস মিষ্টি হয় কারণ এতে প্রায় ৬০% চিনি থাকে। 

৪. কিসমিসের উপকারিতা কি? 

উত্তর :- অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না, সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিসমিস খাওয়ার ফলে শরীরে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং শরীর মোটা হয়ে যেতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url