কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় জেনে নিন
তাছাড়া এর কয়েকটি ঘরোয়া উপায় ও রয়েছে। আপনি যদি ওষুধ ছাড়াই সম্পূর্ণ ঘরোয়া উপায় মেনে চলেন, তাহলেও আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারবেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য সম্পর্কে বিস্তারিত। আর দেরি না করে চলুন জেনে আসি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায়–
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় - কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই অসহ্যকর একটি রোগ। সাধারণত আপনার যদি পায়খানা করতে কষ্ট হয় বা পায়খানা শক্ত হয়ে যায়, দুই তিন দিন যাবত পায়খানা না হয় তবে সেটাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়ে থাকে। তাছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে। সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হয়েছে–
- পায়খানা নরমালের থেকে অনেক শক্ত হয়ে যাওয়া এবং শক্ত চাকার মত হয়ে যায়, পায়খানা সহজে করতে না পারা।
- আপনার স্বাভাবিকের তুলনায় পায়খানার আকৃতি অনেক বড় হয়ে যাওয়া। আপনি চেয়েও পায়খানা করতে পারছেন না এরকম অবস্থার সম্মুখীন হওয়া।
- পায়খানা করতে অনেক জ্বালা যন্ত্রণা হওয়া এবং পায়খানা করতে কষ্ট হওয়া।
- চেয়েও পায়খানা করতে না পারা এবং ভালোভাবে পরিষ্কার হচ্ছে না এমনটা মনে হওয়া।
- পেটে ব্যথা হওয়া, পেট ফাঁপা ফাঁপা লাগা বা খাওয়ার পরে বমি বমি ভাব হওয়া। অনেক সময় খালি পেটে থাকলেও বমি বমি ভাব হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায়
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় - কোষ্ঠকাঠিন্য সকলের জন্য খুবই বিরক্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক একটি সমস্যা। এটি যার হয় সেই বুঝে এর যন্ত্রণা।
কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার বিভিন্ন ধরনের কারণ রয়েছে। তবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকা এবং খাদ্যের রুটিন না থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাকে বা এগুলো হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রধান কারণ।
তাই আপনি যদি এই সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে চান তাহলে আপনাকে স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে খেয়াল রাখতে হবে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে হবে এর পাশাপাশি আপনি দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। এবং মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপনের চেষ্টা করুন। তো চলুন জেনে নেই, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায়,
১) আপনাকে অবশ্যই মন চেপে রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং হাঁটাচলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ব্যায়াম কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেক সাহায্য করে।
২) প্রতিদিন রুটিন মেনে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে এবং শরীরের জন্য ভালো এমন তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের জন্য অনেক উপকারী। আপনাকে বেশি করে শাক সবজি, ফলমূল বেশি করে খেতে হবে। বেল এবং পেঁপে হচ্ছে আঁশযুক্ত খাবার এবং এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে মুক্তি পেতে অনেক সহায়তা করে।
৩) এলোভেরা বা ভূসির মত করবার টোটকা কিন্তু অনেক কার্যকরী। এগুলো কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধানে বেশ কাজে আসে।
৪) অনেক সময় ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় । তাই ঔষধ খাওয়ার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে। ফাস্ট ফুড খাওয়া কমাতে হবে এবং অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাবার। এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের জন্য কাঁচা কলা খুবই মারাত্মক, কাঁচা কলা এড়িয়ে চলতে হবে।
৫) এগুলো সব কিছু মেনে চলার পাশাপাশি আপনি চেষ্টা করবেন দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে এবং মানসিক চাপ থেকে সরে জীবনযাপন করার চেষ্টা করতে। অনেক সময় দেখা যায় মানসিক চাপ বা কোন কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন হলে এরকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
আশা করা যায় উপরোক্ত টোটকা গুলো যদি আপনি মেনে চলেন তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দ্রুত মুক্তি পাবেন। তবে উপরোক্ত সবগুলো ঘরোয়া টোটকা মনে পড়েও যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর না হয়, তাহলে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।
দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য ধরে রাখলে কি কি সমস্যা হয়
দীর্ঘদিন যাবত কোষ্ঠকাঠিন্য ধরে রাখলে অনেক ধরনের ক্ষতির পাশাপাশি বড় বড় রূপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনি যদি সাথে সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগের চিকিৎসা না করে দীর্ঘদিন যাবত কোষ্ঠকাঠিন্য ধরে রাখেন তাহলে আপনার বড় ধরনের রোগের সম্মুখীন হতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক দিন ধরে রাখার ফলে ফিকাল ইনফেকশন হতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে আপনার মন উদ্ধারার স্থানে পায়খানা জমে থেকে আটকে যেতে পারে। ফিটাল ইনফেকশন হলে ডায়রিয়ার দেখা দেয়। এরকম তাহলে আপনার করণীয়–
জুলাপঃ এই সময়ে জুলাপ অনেক কার্যকারী একটি ঔষধ। আপনি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শক্তিশালী লেগস্টিতি বা জুলাপ সেবনের পরামর্শ নিতে পারেন। ডাক্তাররাও এই সময়ে এই জুলাপের পরামর্শ দিয়ে থাকেন এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের জন্য এটি অনেক কার্যকারী।
মিনি এনামাঃ অনেকদিন যাবৎ যদি আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগেন, আপনার পায়খানা না হয়। তখন চিকিৎসকেরা মিনি এনামার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এটার মাধ্যমে মলদ্বার দিয়ে তরল ঔষধ প্রবেশ করানো হয়। যাতে সহজে পায়খানা বেরিয়ে আসে।
সাপোজিটরিঃ এটি হচ্ছে এক ধরনের পিচ্ছিল জাতীয় ঔষধ। এটি মল বের করতে সহায়তা করে। মধ্যার দিয়ে পিচ্ছিল কারী ঔষধটি দেওয়া হয় যাতে এর মাধ্যমে পায়খানা নরম হয়ে বেরিয়ে আসে। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের জন্য এটি অনেক কার্যকরী একটি পদ্ধতি।
ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় সচেতন
অনেক সময় আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক ওষুধ সেবন করে থাকি। অনেক সময় আমাদের ওষুধ পাল্টাতে হয়, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এড়াতে নতুন ঔষধ শুরু করার পরে যদি আপনার মনে হয় নতুন ঔষধ খাওয়ার পর থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা বেড়ে গেছে, তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।
ডাক্তাররা এর সঠিক চিকিৎসা দিয়ে দেবেন। প্রয়োজনে তিনি ওষুধটি না খাওয়ার কথা বলবেন বা ওষুধটি বদলে দিতে পারেন। আপনি আপনার সমস্যা খুলে বলে কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসার জন্য তিনি আপনার ওষুধের সাথে আরও ওষুধ যোগ করে দিবেন।
শেষ কথা
কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণত শীতে বেশি দেখা যায়। শীতকালে যেমন তৈলাক্ত বা ভাজাপোড়া তেল জাতীয় খাবার, বাইরের খাবার বেশি খাওয়া হয় তেমনিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য বা গ্যাস-অম্বলও বেশি হয়ে থাকে। তাই একটু রুটিন মেনে চলেই আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় পেয়ে যাবেন। এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে সতর্ক থাকতে পারবেন।
বেশিরভাগ সময়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য রূপ হয়ে থাকে, তাই অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় পেতে সহায়তা করবে। এতক্ষণে হয়তো আপনি বুঝতে পেরেছেন কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয় এবং এর থেকে মুক্তি পেতে হলে কি করনীয়। আশা করছি আমাদের আজকের এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় আর্টিকেলটি আপনার কিছুটা হলেও কাজে আসবে। নিয়ম মতো স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন, খাবার একটু কম খেলেও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন। সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন। ধন্যবাদ।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ
প্রশ্ন ১: কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি?
উত্তর:- কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়-
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে বেশি করে সবুজ শাকসবজি খাবেন, এর ফলে আপনার অন্ত্রের চলাচল সহজ হবে।
- তিসির বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়।
- বেশি পরিমাণে ফলমূল খাবেন।
- বেশি করে পানি পান করবেন।
- সকালের জলখাবার ওটমিল খাবেন।
- প্রোবায়োটিক কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকারী।
প্রশ্ন ২: কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জুস?
উত্তর:- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য ফলের রস খুবই উপকারী। ফলের রসের মধ্যে থাকা সরবিটল অন্ত্রে পানি টেনে আনে, যা অন্ত্রের মধ্যে থাকা বিষয়বস্তু সরাতে সাহায্য করে। আপেল,ছাটাঁই ও নাশপাতির রসে অন্যান্য ফলের রসের তুলনায় সরবিটলের পরিমাণ বেশি থাকে।
প্রশ্ন ৩: পায়খানা নরম করার ঔষধের নাম কি?
উত্তর:- পায়খানাকে নরম ও কম কঠিন করে তোলে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা করতে সহায়তা করে Smuth Capsule এই ঔষধটি। মূলত, Smuth capsule একটি স্টুল সফটনার হিসেবে কাজ করে এবং এটা তরল হয়ে স্টুলের মধ্যে জলীয় ও তার পাশাপাশি চর্বি যোগ করে, যাতে কঠিন পায়খানা নরম হয়।
প্রশ্ন ৪: কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য কোন পানি ভালো?
উত্তর:- সোডিয়াম সালফেট এবং ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক খনিজ জলের দৈনিক ব্যবহার কার্যকরী কোষ্ঠকাঠিন্য যুক্ত বিষয়গুলোতে মলত্যাগের ফ্রিকোয়েন্সি এবং মল সামঞ্জস্যতা উন্নত করে। তাছাড়াও বিষয়গুলির স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়েছে।
প্রশ্ন ৫: ঘুম থেকে উঠে পানি পান করা কেন জরুরি?
উত্তর:- সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি পান করলে ত্বক ভালো থাকে। গ্যাসের সমস্যা ও মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি মিলে। রাতে ঘুমানোর পরে দীর্ঘ সময় হজম প্রক্রিয়ার তেমন কোনো কাজ থাকে না, তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য অত্যন্ত ১ গ্লাস পানি পান করা উচিত। তারও বেশি বা ২ গ্লাস পানি পান করলে আরও ভালো।
প্রশ্ন ৬: কোষ্ঠকাঠিন্য এর লক্ষণ কি কি?
উত্তর:- কোষ্ঠকাঠিন্য এর লক্ষণগুলি হচ্ছে - অসম্পূর্ণ অনুভূতি, মলত্যাগের সঙ্গে ব্যথা, জ্বলা পোড়া করা, সপ্তাহে ৩ বারের কম মল ত্যাগ। এর প্রতিটি সমস্যা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে সারিয়ে তোলা যায়।
সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url