লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় বিস্তারিত জেনে নিন
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়: লেবুর শরবত খেয়ে কমানো যায় বাড়তি ওজন। লেবুর রস মেশানো পানি স্বাদে ও গুণে শরবত হিসেবে চমৎকার। এটি পাকস্থলী ও অন্ত্রের অন্যান্য অংশ থেকে পাক-রস তৈরিকে ত্বরান্বিত করে। পেটফাঁপা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমিয়ে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ভারী খাবার খাওয়ার পর কোমল পানীয়র পরিবর্তে বেছে নিতে পারেন লেবুপানি।
সূচিপত্র:আমাদের আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। লেবুর উপকার অপকার সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তো চলুন দেরি না করে জেনে আসি, লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে।
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায়
আমরা অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা বা কফি চাই। চা-কফি শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে দিনের শুরুটা শুরু করতে পারেন লেবুপানি দিয়ে। লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কিত কিছু টিপস্ বা উপায়।
- ৪০০ মিলিলিটার কুসুম গরম পানিতে দুই চা–চামচ লেবুর রস দিয়ে একটু মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। এটি বিপাক-ক্রিয়ার হার বাড়ায়। এ কারণে সারা দিনে আপনি যা খান, তা সহজেই হজম হয়ে যায়।
- খালি পেটে লেবু-পানি-মধু পানে ক্ষুধা কম লাগে। সারা দিনে খাবার কম খাওয়া হয়। শরীরে ক্যালরি কম প্রবেশ করে। এ কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
- লেবুপানির সঙ্গে খানিকটা মধু মিশিয়ে নিলে ক্ষুধা কম লাগে। খাওয়া কম হয়। এ কারণে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি প্রবেশ করতে পারে না।
- ওজন কমাতে সকালে লেবুপানি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের একটি অংশ। লেবুতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। এটি শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের জোগান দেয়।
- ত্বকে বলিরেখা পড়তে বাধা দেয়। ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে। ডাই-উরেটিক ও ল্যাক্সেটিভ হিসেবেও কাজ করে। প্রস্রাব ও মল পরিষ্কার রাখে।
- এ ছাড়া রয়েছে ফ্ল্যাভ-নয়েড, যেটি চর্বি ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমায়, রক্তে চর্বি ও শর্করা কমাতে সাহায্য করে।
- খাদ্যাভ্যাস ঠিক না করে ও শরীরচর্চা না করে শুধু লেবুপানি পানে ওজন কমে না। লেবুপানি পান করে শরীরচর্চা করলে ক্যালরি ক্ষয়ের পরিমাণ বাড়ে। এটি দ্রুত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
লেবুকে ভিটামিন C-এর একটি বড় উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। এবং এটি পান করলে আমাদের পাচনতন্ত্রও সুস্থ থাকে। কিন্তু এক গ্লাস গরম জলের সঙ্গে লেবু যোগ করে পান করলে শরীরের ভিতরে ফ্যাট গলে যাবে এবং লেবুপানি ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
কিভাবে লেবুপানি পান করবেন
সকালে নাশতা করার অন্তত ৩০ মিনিট আগে লেবুপানি পান করুন। ক্যাফেইন আমাদের শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে। চা-কফির পরিবর্তেও লেবুপানি অনেক ভালো। এটি পানিশূন্যতা দূর করে। তবে দিনে দুইবারের বেশি লেবুপানি পান করবেন না।
আরও পড়ুন লেবু পানি বানানোর নিয়ম
লেবুপানির সঙ্গে খানিকটা মধু মিশিয়ে নিলে ক্ষুধা কম লাগে। খাওয়া কম হয়। এ কারণে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি প্রবেশ করতে পারে না। লেবুপানিতে অতিরিক্ত ভিটামিন সি থাকায় দাঁতের অ্যানামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই পান করার পর ভালোভাবে কুলি করে মুখ পরিষ্কার করে নিন। এবং অবশ্যই অ্যাসিডিটি হলে পান করা বাদ দিন।
৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়
বেশ কিছু গবেষণায় ওজন কমানোর পদ্ধতি হিসেবে হজমশক্তি বৃদ্ধি, রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এমন উদ্ভিদ ভিত্তিক খাদ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শুধুমাত্র ডায়েটিং আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে না। এর সাথে একটি ভালো ব্যায়াম পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে যা আপনি ৭ দিন ধরে রাখতে পারবেন।
ব্যায়াম এর জন্য একটি সময়সূচী তৈরি করুন এবং অবশ্যই আগামী ৭ দিন যেন এই ব্যায়াম করতে পারেন সেইভাবে নিজেকে সবসময় তৈরি রাখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন হাঁটবেন, পাঁচ মিনিটের জন্য দৌড়ান এবং তারপর আবার হাঁটাতে থাকুন। এটি বেশি ক্যালোরি পোড়ায়। জুম্বা, অ্যারোবিক এবং সাঁতার দ্রুত ওজন কমানোর জন্য খুবই ভালো ব্যায়াম।
দ্রুত ওজন কমাতে কি কি করবেন
- প্রথমে আপনাকে অবশ্যই সূর্য উদয় হওয়ার সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠতে হবে।
- এরপর কিছু পরিমাণ পানির মধ্যে এলাচ, আদা , সাথে লেবুর রস মিশিয়ে পানি গুলোকে পাতিলের মধ্যে নিয়ে হালকা গরম করে নিতে হবে। এমনভাবে গরম করতে হবে যেন এই উপাদানগুলো পানির মধ্যে থেকে সিদ্ধ হয়ে যায় ।
- এরপর এগুলোকে নামিয়ে কিছুক্ষণ রাখতে হবে যাতে করে পানি ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
- ঠাণ্ডা হয়ে গেলে এখান থেকে আপনি দুই গ্লাস পরিমাণের পানি আস্তে আস্তে পান করে নিবেন।
- এরপর ১০ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করবেন এবং তারপর ব্যায়াম করতে হবে। ( কি কি ব্যায়াম করবেন সেটা আমি পোস্টের শেষে বলে দিবো)
- অবশ্যই ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মত আপনার কাঙ্ক্ষিত ব্যায়াম করবেন এবং তারপর বাসায় আসতে হবে।
- বাসায় এসে ৯:০০ টা থেকে ১০টার মধ্যে আপনার সকালের নাস্তা সেরে ফেলতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে ওজন কমানো:
প্রাকৃতিক উপায়ে আমরা অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারি। নিচে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো:
১.টক দই ও মধু: টক দইয়ের ভালো ব্যাকটেরিয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। দইয়ের প্রোবায়োটিকস হজম প্রক্রিয়ার সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। হজমের পাশাপাশি কিছু চর্বি ও অন্যান্য উপাদান ভেঙে ওজন কমাতেও সাহায্য করে টক দই। আর মধু মিষ্টির চাহিদা পূরণ করবে কোনো ক্ষতি ছাড়াই। তবে এক্ষেত্রে ফ্যাট বিহীন দই বেছে নিতে হবে।
২.পর্যাপ্ত ঘুম: শরীরের স্বাভাবিক কর্মপ্রক্রিয়া ধরে রাখতে এবং বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। ঘুম শরীরের প্রতিটি অংশের মধ্যে কাজের সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই সুস্থ থাকতে সঠিক মাত্রায় ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ঘুমে অনিয়ম হলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায় যা থেকে ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়ম করে ঘুমাতে হবে।
৩.চুইংগাম: চুইংগাম চাবানোর অভ্যাস ক্ষুধার অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে। অনবরত চাবানোর ফলে মস্তিষ্কে সংকেত পৌঁছায় যে খাওয়া হচ্ছে। ফলে খাবারের চাহিদা কমে আসে। তাই অসময়ে খাওয়ার ইচ্ছা জাগলে চিনি ছাড়া চুইংগাম চাবানো।
আরও পড়ুন চুলে লেবুর রসের সেরা ৬টি উপকারিতা
৪.দারুচিনির চা: রক্তের শর্করার পরিমাণ আমাদের ওজনের উপর প্রভাব ফেলে। কারণ এর মাত্রার উপর নির্ভর করে আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং শক্তির পরিমাণ। রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় থাকলে ক্ষুধার পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত থাকার পাশাপাশি কর্মক্ষমতা ঠিক থাকে। ফলে শরীরে মেদ জমে থাকার ঝুঁকি কমে আসে।
ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায়:
ব্যায়াম না করেও ওজন কমানো সম্ভব তার কয়েকটি উপায় উল্লেখ করা হলো:
- ছোট প্লেটে খাবার খান।
- ধীরে ধীরে খাবার খান।
- প্রোটিন বেশি খান।
- অস্বাস্থ্যকর(Unhealthy)খাবার এড়িয়ে চলুন।
- বেশি করে সালাদ খান।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান।
- প্যাকেট জাতীয় খাবার খাবেন না।
- খাবার আগে পানি পান করুন।
- ভাত বা ভারী কোনো খাবার অল্প অল্প খান।
- মানসিক চাপ(Mental pressure) নিয়ন্ত্রণ করুন।
মেয়েদের তাড়াতাড়ি ওজন কমানোর উপায়
- চিনিযুক্ত পানি এড়িয়ে চলুন।
- মানসিক ভাবে শক্তিশালী থাকুন।
- পরিমাণ মতো ঘুমান।
- আপনার ক্যালোরির দিকে নজর রাখুন।
- নিয়মিত রুটিনে ব্যায়ামের কাজটি যোগ করুন।
শেষকথা
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল, সুখী হওয়ার উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য ভালো রাখা। তাই স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে সুখী হওয়া সম্ভব নয়। সুখী জীবনযাপনের জন্য নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি হলো শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা।
জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে মানুষকে তার চারপাশের সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। এই উভয় প্রকার পরিবেশ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। স্বাস্থ্য সচেতনতা হলো কিছু অভ্যাসের আচরণ, যার দ্বারা আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারি।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সকল নাগরিকের উচিত স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকা। আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় সহ লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতার বিস্তারিত তথ্য। এরকম আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর নানান তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় এই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন, স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখুন। আল্লাহ হাফেজ।
লেবু দিয়ে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ
১. লেবু কি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি করে?
উত্তর: নিয়মমতো লেবু পানি পান করলে লেবু গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি করে না বরং আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে দিবে। কিন্তু যেহেতু অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না, তাই লেবু পানি অতিরিক্ত পান করলে পেটে সমস্যা থেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে।
২. ওজন কমানোর জন্য লেবু কখন খাওয়া উচিত?
উত্তর: সকালে খালি পেটে লেবুপানি খেতে পারেন অথবা খাওয়ার আধাঘণ্টা পরও খেতে পারেন। আবার রাতে মধু মিশ্রণ করে লেবুপানি এক গ্লাস খেতে পারেন।
৩. লেবু খেলে কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে কি না?
উত্তর: লেবু টক জাতীয় ফল,তাই অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমাণ মতো খেলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কোনো সমস্যার দেখা দিলে অবশ্যই লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন ও ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
৪. লেবুপানি কি প্রতিদিন খাওয়া যাবে?
উত্তর: আপনার শরীরে লেবু পানি খাওয়ার উপকারিতা পেতে প্রতিদিন ১ গ্লাস খেতে পারবেন। আর তা না হলে, ২,৩ দিন পর পর লেবু খাওয়া উচিত।
সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url