বাংলাদেশে মাশরুম চাষ পদ্ধতি
বাংলাদেশে মাশরুম চাষ পদ্ধতি: সাধারণত ব্যাঙের ছাতার মত এক ধরনের ছত্রাক জাতীয় গাছ হচ্ছে মাশরুম। ব্যাঙের ছাতা এবং মাশরুম দেখতে একই রকম হলেও এদের মধ্যে কিন্তু অনেক পার্থক্য রয়েছে। বর্তমানে মাশরুম বা মাশরুমের স্যুপ খুবই জনপ্রিয় একটা খাবার হয়ে উঠেছে। অনেকে আবার মাশরুম চাষ করার জন্য মাশরুম চাষ পদ্ধতি ও জানতে চান। কারণ মাশরুম খুবই পুষ্টিকর একটি খাদ্য। এবং মাশরুম হাই প্রোটিনযুক্ত একটি খাদ্য। এটা হজম হয় তাড়াতাড়ি।
প্রোটিন ছাড়াও মাশরুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। ঘরে বসে মাশরুম চাষের পদ্ধতিটা অনেকটা সহজ। আপনারা যারা মাশরুম সম্পর্কে বা বাংলাদেশে মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান, আমাদের আজকের এই পোস্টটি তাদের জন্য। মাশরুম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং বাংলাদেশে মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মাশরুমের জাত
মাশরুম চাষের জন্য বাংলাদেশে তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আদ্রতা অত্যন্ত উপযোগী। প্রকৃতিতে মাশরুমের কয়েক হাজার জাত রয়েছে। এর মধ্যে আবার ৮ থেকে ১০ টি জাতের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মাশরুম চাষ পদ্ধতি ও বাংলাদেশের চাষ উপযোগী এমন কিছু মাশরুমের জাত হচ্ছে,
বাংলাদেশে মাশরুম চাষ পদ্ধতি
আপনার বাড়ির আশেপাশে অথবা ঘরে বসে কিভাবে মাশরুম চাষ করবেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশে মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে। তো চলুন আর দেরি না করে প্রতিটা ধাপে ধাপে জেনে নেই বাংলাদেশে মাশরুম চাষ পদ্ধতি। ওয়েস্টার মাশরুম চাষের জন্য প্রধানত তিনটি উপকরণ প্রয়োজনীয়, যেমন- মাশরুমের বীজ (স্পন), খড় এবং পলিথিনের ব্যাগ।
মাশরুমের বীজ আপনি সংরক্ষণ করতে পারেন আপনার আশেপাশের কৃষি অফিস অথবা মাশরুম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে। এছাড়াও জমিতে চাষের এর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যে দোকানে পাওয়া যায় সেই দোকানগুলোতে পাওয়া যায় মাশরুমের বীজ। অথবা অনলাইন থেকেও মাশরুমের বীজ অর্ডার করে নিতে পারেন। বাকি উপকরণগুলো তো হাতের কাছেই থাকে অথবা জোগাড় করা খুব একটা কঠিন কিছু নয়।
ধাপ-১
মাশরুম চাষের জন্য প্রথমে এক ইঞ্চি মাপের খড় কেটে ফুটন্ত গরম পানিতে জীবাণু মুক্ত করার জন্য প্রায় ২০ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। অথবা চুন মেশানো পরিষ্কার পানিতে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে পারেন। ভেজানোর পরে অথবা ফোটানোর পরে পানি এমনভাবে জড়িয়ে নিবেন, যাতে হাত দিয়ে খড়ে চাপ দিলে পানি না পড়ে অথচ হাতে একটা ভেজা ভাব থাকবে।
ধাপ-২
বাংলাদেশে মাশরুম চাষ পদ্ধতি এর দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে, একটি পলিব্যাগের মধ্যে ২ ইঞ্চি পুরু করে খড় বিছিয়ে তার উপর ব্যাগের ধার ঘেঁষে বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে। বীজের উপরে আবার খড় ও খড়ের উপর আবার বীজ দিতে হবে। এভাবে প্রায় সাত থেকে আটটা স্তর তৈরি করে পলিব্যাগের মুখ কয়েকটা প্যাঁচ দিয়ে ভালোভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। খড়গুলো বিছানোর সময় প্রতিবার হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে, যাতে খড়ের ভিতর কোন ধরনের বাতাস জমে না থাকে।
ধাপ-৩
এরপর ব্যাগে ১০ থেকে ১২ টা ছোট ছোট ছিদ্র করে তুলা দিয়ে ছিদ্রের মুখগুলো বন্ধ করে দিলে স্বাভাবিক বাতাস চলাচল বজায় থাকবে। আবার বাইরের ধুলোবালিও ভিতরে ঢুকতে পারবে না। এই প্যাকেটটি প্রায় ৭ থেকে ১০ দিনের জন্য কোন অন্ধকার জায়গায় রেখে দিতে হবে।
অবশ্যই খেয়াল রাখবেন জায়গাটি অন্ধকার হলেও যেন বাতাস চলাচল থাকে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, পোকামাকড় মুক্ত থাকে। সতর্ক থাকবেন কোনো মাছি যেন জায়গাটিতে না আসে। মাছি কিন্তু মাশরুম চাষে ভয়ানক ক্ষতি করে।
ধাপ-৪
কয়েকদিনের মধ্যেই সেই প্যাকেটে বীজের জায়গায় সাদা আস্তরণ দেখা যাবে। যাকে বলা হয়, মাইসেলিয়াম। তখন অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো ব্যাগটাই মাইসেলিয়ামে ভরে যাবে। তখন ছিদ্রের মুখের তুলা গুলো সরিয়ে ফেলে আরও কয়েকটি ছিদ্র করে ব্যাগটিকে কিছুটা আলোর মধ্যে রাখতে হবে। অবশ্যই সরাসরি রোদের মধ্যে নয়। যেমন ঘরের ভেতর যেটুকু আলোয় বই পড়া যায়, তেমনি।
ধাপ-৫
পরিস্থিতির বাতাসের আদ্রতা বুঝে প্রয়োজন মাফিক প্যাকেট এর উপরে মাঝে মাঝে পানি স্প্রে করে দিবেন। তার কয়েক দিনের মধ্যেই প্যাকেটের ছিদ্রগুলো দিয়ে মাশরুমের পিনহেড দেখা দিবে। এরকম একটি ব্যাগ থেকে প্রায় তিনবার মাশরুম ফলন পাওয়া যায়। সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই মাশরুম খাওয়ার মত উপযোগী হয়ে যায়।
বাংলাদেশে মাশরুম চাষ খুব একটা কঠিন কিছু নয়। আশা করি ঘরে বসে মাশরুম চাষ পদ্ধতি আপনিও ট্রাই করে দেখতে পারেন। ওয়েস্টার মাশরুম এবং ঝিনুক মাশরুম চাষও বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে বেশি প্রচলিত।
মাশরুমের উপকারিতা
ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে ছত্রাক জাতীয় খাদ্যটি হচ্ছে মাশরুম। বাংলাদেশে মাশরুম চাষ পদ্ধতি যেমন লাভজনক তেমনি উপকারীও। মাশরুমের অনেক ঔষধি গুনও রয়েছে। চলুন এবার মাশরুমের কিছু উপকারিতা দিক জেনে আসি,
- মাশরুম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং টিউমার কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে।
- নিয়মিত পরিমাণ মতো মাশরুম খাওয়ার ফলে, শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি হয়। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।
- মাশরুমে যথেষ্ট আঁশ থাকার ফলে শরীর স্লিম রাখতে সাহায্য করে।
- মাশরুম কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, প্রোটিনের হজম ক্ষমতার শতকরা ৭০-৮০ ভাগ হওয়ায় রোগীদের জন্য অনেক ভালো এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার।
- মাশরুম উচ্চ রক্তচাপ ও বহুমূত্র রোগীদের জন্য অনেক উপকারী।
- এছাড়াও ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার কাজেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যেমন ছবির ফ্রেম, ফুলদানী হিসেবেও ব্যবহার করা হয় মাশরুমকে।
- বিভিন্ন রোগব্যাধিতে মাশরুমের ব্যবহার অনস্বীকার্য। যেমন, শরীরের যেকোনো ব্যথা, বাত, কৃমি, সর্দি-কাশি, জন্ডিস, শরীরের রক্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ার কাজেও মাশরুম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
শেষকথা
প্রাকৃতিক পরিবেশে কোন পরিকল্পনা ছাড়াই যে মাশরুমগুলো জন্ম নেয় এর মধ্যে অনেক মাশরুমই খুবই বিষাক্ত হয়, তা মোটেই খাওয়া উচিত নয়। বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন স্থানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করা মাশরুমগুলো অত্যন্ত পুষ্টিকর।
বাংলাদেশে মাশরুম চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বাড়তি ইনকাম করাও সম্ভব। আমাদের আজকের মাশরুম চাষ পদ্ধতি পোস্টটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করে দিবেন। এতক্ষণ আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বাংলাদেশে মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
প্রশ্ন: মাশরুম কত দিন ভালো থাকে?
উত্তর:- সাধারণত সাধারণ তাপমাত্রায় মাশরুম ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা ভালো থাকে। ফ্রিজের নরমালে রাখলে ৩ থেকে ৪ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। রোদে শুকিয়ে রাখলে অনেকদিন পর্যন্ত ভাল থাকে।
প্রশ্ন: মাশরুম চাষের জন্য কেমন পরিবেশ প্রয়োজন ব্যাখ্যা কর?
উত্তর:- গ্রীষ্মকালে যেকোনো চালা ঘরের নিচে এবং বারান্দায় চাষ করা যায় মাশরুম। বর্ষাকালে পানি প্রবেশ করবে না এবং বাতাস চলাচলের সুবিধা থাকতে হবে এমন করে মাশরুম চাষ করতে হবে। শীতকালে ভেজা স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরেও মাশরুম চাষ করা হয়।
প্রশ্ন: মাশরুম চাষে ঘরের তাপমাত্রা কত ডিগ্রী সেলসিয়াস রাখা উচিত?
উত্তর:- মাশরুম চাষের জন্য ঘরের তাপমাত্রা ২০-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। মাশরুম আর্দ্র অবস্থায় পছন্দ করে।
প্রশ্ন: মাশরুমের মধ্যে কি কি উপাদান আছে?
উত্তর:- মাশরুমের পুষ্টিগুণ, মাশরুমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন। এবং এতে আরও রয়েছে, অ্যামিনো এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক, জিংক, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি।
প্রশ্ন: মাশরুম কি ফ্রিজে রাখা যায়?
উত্তর:- সাধারণত রান্না করা মাশরুম প্রায় ৩-৫ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে ভালো থাকে যদি একটি বায়ুরোধী পাত্রে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়।
সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url