চিরতরে মেছতা দূর করার ১০টি উপায় - মেছতা কেন হয়
মেছতা ত্বকের এমন একটি রোগ এটা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায় না, তার জন্য প্রয়োজন ধৈর্যের ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। তো চলুন এবার জেনে আসি, মুখের মেছতা বিষয়ক নানান তথ্য ও মেছতা দূর করার ১০ টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
মেছতা কেন হয়
মেছতা দূর করার ১০ টি উপায় জানার আগে জেনে নিন মুখে মেছতা কেন হয়। মেছতা অনেক কারণেই হয়ে থাকে। অনেকসময় গর্ভধারণের সময় হরমোনের প্রভাবে অনেক সময় মুখে মেছতা দেখা দিতে পারে। এ জন্য রোগটিকে অনেকে বলেন, ‘মাস্ক অব প্রেগনেন্সি’। এ ছাড়া বংশগতির প্রভাব, অতিরিক্ত সূর্যালোক, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। হরমোনের সমস্যা, যেমন থাইরয়েড বা ডিম্বাশয়ের সমস্যায় এটা হতে পারে।
মেনোপোজের পর এটি বেশি হতে দেখা যায়, তার পেছনেও হরমোনের কারণই দায়ী। আবার অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে মেছতা হতে পারে, ডাক্তারি ভাষায় একে বলে ‘মেলাজমা কসমেটিকা’। যকৃতের জটিলতার কারণে যে মেছতা হয়, তাকে বলা হয় ‘মেলাজমা হেপাটিকা’। একটি চিকিৎসা রয়েছে তবে চিকিৎসা থেকে নিশ্চিত নয় যে আপনার এটা পুরোপুরি কমে যাবে।
মেছতা হওয়ার প্রদান কারণ হচ্ছে ত্বকের জন্য দায়ী যে রঞ্জক, সেই মেলানিনের পরিমাণ এতে বেড়ে যায়। ফলে রঙের পরিবর্তনই কেবল চোখে পড়ে, চুলকানি বা ব্যথা কিছু হয় না। তিলজাতীয় লিভাস নোটা, লিভাস আইটো দেখতে প্রায় একই রকম হলেও আসলে কিন্তু মেছতা নয়। এগুলো সাধারণত এক পাশে হয়ে থাকে কিন্তু মেছতা দুই পাশেই হয়। চিকিৎসক কেবল দেখেই মেছতা শনাক্ত করতে পারেন। তবে সাহায্য নেওয়া যায় উডস ল্যাম্পের।
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়
নারীদের মেনোপোজের সময় হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়ার ফলে মেছতার দাগ পড়তে পারে মুখে। এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসলেও হতে পারে মুখের মেছতা। মুখের এই মেছতা দূর করার উপায় হচ্ছে -
১) লেবুর রস দিয়ে চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়
লেবুর রস মেছতা দূর করতে অনেক কার্যকরী একটি উপাদান। লেবুর রস দিয়ে আপনি যদি যে কোন পেস্ট বা কোন ফেসপ্যাক এর সাথে মিশিয়ে দেন তাহলে আপনার মেছতা অনেকটা কমে আসবে।
২) পেঁয়াজের রস দিয়ে চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়
পেঁয়াজ প্রায় আমাদের সকলের বাড়িতেই পাওয়া যায়। পেঁয়াজের রস আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য অনেক উপকারী। ভিনেগারের সাথে যদি আপনি পেঁয়াজের রস মিশিয়ে সুন্দর করে আপনার মুখে অ্যাপ্লাই করেন, তাহলে আপনি ভালো ফলাফল পাবেন।
৩) আলু দিয়ে চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়
মেছতা ছাড়াও আলু আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলু মেছতা দূর করার পাশাপাশি আমাদের ত্বককে করে আরও উজ্জ্বল। আলুর রস মেচতার দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এটি চোখের চার পাশে জমে থাকা কালো দাগ (ডার্ক সার্কেল) দূর করতেও সহায়তা করে।
৪) মুলতানি মাটি দিয়ে চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়
মুলতানি মাটি ত্বকের মরা কোষ পরিষ্কার করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের এক্সট্রা অয়েল শুষে নিয়ে ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করে।
৫) গোলাপজল, সবুজ চা, শসার রস দিয়ে চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়
গোলাপজল, সবুজ চা, শসার রস, লেবুর রস এবং পানি ও মুলতানি মাটির মিশ্রণটি তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এক চা চামচ টমেটোর রস এবং চন্দন গুঁড়া, দুই চা চামচ মুলতানি মাটি একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটা সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করতে পারেন।
৬) অ্যালোভেরা দিয়ে চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়
অ্যালোভেরা জেল ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। সম্পূর্ণ জেল ত্বকে শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দু’বার ব্যবহার করতে পারেন। অ্যালোভেরা জেল দুই চা চামচ, এক চা চামচ লেবুর রস এবং চিনি একসাথে মিশিয়ে হালকা ভাবে ত্বকে ঘষুন। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এটি ব্যবহার করুন।
৭) স্ট্রবেরি দিয়ে মেছতা দূর করার উপায়
স্ট্রবেরি রস আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী এবং মেছতার জন্য। স্ট্রবেরি উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি, হাইড্রোক্সি এসিড, স্যালিলিক এসিড, অ্যালিজিক এসিড সমৃদ্ধ। এটি ত্বকের মরা কোষ দূর করে দেয়, দাগ, একনি এবং ত্বক ফাটা থেকে রক্ষা করে থাকে।
৮) ওটমিল দিয়ে মেছতা দূর করার উপায়
ওটমিল ত্বকের বাদামি দাগ ও মরা চামড়া দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করে। দুই চা চামচ ওটমিল, দুই চা চামচ দুধ এবং এক চা চামচ মধু মিশিয়ে ত্বকের যে স্থান মেছতায় আক্রান্ত, সে জায়গায় লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। এরপর পানি দিয়ে হালকা মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার করুন এক মাস।
৯) হলুদ দিয়ে মেছতা দূর করার উপায়
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ন্যাচারাল স্কিন টোনার হিসেবে হলুদ পরিচিত। হলুদের মধ্যে থাকা নানা গুণাগুণ ত্বকের মেলানিন কমিয়ে মেছতা হালকা করতে সাহায্য করে। ১ চা চামচ হলুদের মধ্যে ৫ চা চামচ দুধ দিন। তরল দুধ ব্যবহার করা ভালো।
এর মধ্যে দিন দুই চামচ বেসন। এবার এই পেস্টটি মেছতায় আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। প্রতিদিন একবার করে ব্যবহার করুন।
১০) চন্দন গুড়া দিয়ে চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়
ত্বকের দাগ হালকা করা উপাদানের মধ্যে খুব ভালো হলো চন্দন। এটি ত্বকের যেকোনো দাগ দূর করতে সাহায্য করে। সমপরিমাণ চন্দন গুঁড়া, দুধ, লেবুর রস আর হলুদ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মেছতায় আক্রান্ত স্থানে মাখুন। এবার শুকাতে দিন। শুকিয়ে গেলে পানির ঝাপটা দিয়ে মাস্কটা নরম করে সার্কুলার মোশনে মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন করে করুন। যত দিন না কোনো উপকার পাচ্ছেন।
মেছতার চিকিৎসা
মেছতা দূর করার ১০ টি উপায় সম্পর্কে জানতে পারলেন। আরও মেছতার চিকিৎসা নিয়ে কিছু তথ্য হচ্ছে, মেছতার জন্য নানা ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। বর্তমানে কেমিক্যাল পিলিং, মাইক্রোডার্মাব্রেশন ও পিআরপি থেরাপির মাধ্যমে মেছতার চিকিৎসা করা হচ্ছে। কিছু আধুনিক মলম ও মুখে খাওয়া ট্যাবলেটও মেছতা চিকিৎসায় কার্যকর।
মেছতা সাধারণত দুই ধরনের ১.এপিডারমাল মেলাজমা ও ২.ডারমাল মেলাজমা। ত্বকের ওপরের অংশে যে মেছতা হয়, তাকে বলে এপিডারমাল মেলাজমা। আর ডারমাল মেলাজমা হয় ত্বকের ভেতরের অংশে। এপিডারমাল মেলাজমার চিকিৎসা সহজ, তবে ডারমাল মেলাজমার চিকিৎসা একটু জটিল।
হরমোনের সমস্যা আছে কিনা জেনে নিন। শনাক্ত করে চিকিৎসা নিন। হাইড্রোকুইনোন–সমৃদ্ধ ব্লিচিং ও ভিটামিন এ যুক্ত ক্রিম অনেক সময় ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। এ ছাড়া মেথিমাজোল, এজেলিক অ্যাসিড, স্টেরয়েড ক্রিম ইত্যাদিও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু মনে রাখবেন, এগুলো প্রসাধন ক্রিম নয়, ওষুধ। তাই ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
সময়ের সঙ্গে যুগের চাহিদা অনুযায়ী মেছতার অনেক আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। ইদানীং মাইক্রোডার্মাব্রাসন ও ডায়মন্ড পিল বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কখনো কখনো মাইক্রোডার্মাব্রাসনের সঙ্গে বা শুধু কেমিকেল পিলের পরামর্শ দেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা। ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ গ্লাইকোলিক অ্যাসিড বেশি ব্যবহৃত হয়। এসব পদ্ধতিতে কয়েক সেশন লাগে।
শেষ কথা: দিয়ে মেছতা দূর করার উপায়
মেছতা থাকলে বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। আপনি যখন বাইরে যান, তখন অতিরিক্ত রোদে মুখের ত্বকে মাত্রাতিরিক্ত মেলানিন উৎপাদনে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মেছতার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া হরমোন পরিবর্তন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, টক্সিন ও থাইরয়েড সমস্যায়ও এটা হতে পারে।
স্বাস্থ্যসন্মত পুষ্টিকর খাবার খান। দিনে ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করুন। অনেকেই বলে মেছতা পুরোপুরি ভাবে ঠিক হয় না, আপনি যদি সঠিক চিকিৎসা বা সঠিক ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে তাহলে আপনার মেছতা ঠিক হয়ে যেতে পারে।
আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পেরেছেন চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় সহ মুখের মেছতা সম্পর্কিত নানান তথ্য। এতক্ষণ মুখের মেছতা দূর করার ১০ টি উপায় এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বিভিন্ন বিষয়ের উপর সঠিক তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। নিজের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন, নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন, রোগ জীবাণুকে দূরে রাখুন। ধন্যবাদ।
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ
প্রশ্ন ১: মুখের মেছতা কি দিলে ভালো হয়?
উত্তর:- মুখের মেছতা থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া কিছু উপায় হচ্ছে -
- টক দই এর ব্যবহার। টক দই মুখের মেছতা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- সানস্ক্রিন মেছতার জন্য খুবই কার্যকরী।
- আমন্ড অয়েল মুখের মেছতার জন্য খুবই উপকারী।
- লেবুর রসের সাথে যেকোনো তেল হালকা গরম করে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই লেবুর রস কখনো সরাসরি মুখে লাগাবেন না।
- হালকা গরম তেল ত্বকে ব্যবহারের উপযোগী। তেল হালকা গরম করে মুখে মাসাজ করতে পারেন।
প্রশ্ন ২: মেছতার দাগ কেন হয়?
উত্তর:- যারা নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ এবং ইনফার্টিলিটি চিকিৎসার ঔষধ সেবন করছেন, তাদের মুখে মেছতা বেশি হয়। তাছাড়াও হরমোনের সমস্যা হওয়া, অনিয়ন্ত্রিত থাইরয়েড ও মুখের মেছতার কারণ হতে পারে। এবং যারা দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে রোদের মধ্যে কাজ করেন সানস্ক্রিন ব্যবহার না করে, তাদের মুখেও মেছতার দাগ পড়তে পারে।
প্রশ্ন ৩: গালে কালো দাগ কেন হয়?
উত্তর:- মুখের উপর গাড় দাগ হচ্ছে - হাইপারপিগমেন্টেশনের এক প্রকার যা ত্বকে মেলানিনের অতিরিক্ত উৎপন্ন হলে ঘটে। মুখের কালো দাগ মেলানিনের একটি ভারসাম্যহীনতার কারণে ঘটে থাকে। এই ভারসাম্যহীনতা বার্ধক্য, ব্রণ, সূর্যের এক্সপোজার এবং একজিমার মতো ত্বকের অবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে দ্বারা আনা হতে পারে।
প্রশ্ন ৪: শরীরে কালো ছোপ ছোপ কেন হয়?
উত্তর:- আমাদের ত্বকে রয়েছে মেলানোসাইট কোষ। যেখান থেকে মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয়। যা ত্বকের স্বাভাবিক রং তৈরিতে সহায়ক। এই কোষের কার্যকলাপে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলে চামড়ার রং তৈরির প্রক্রিয়াতেও সমস্যার দেখা দেয়। এবং মেলানোসাইটের সক্রিয়তা বাড়লে মেলানিনের নিঃসরণ ও বেড়ে যায়,ফলে চামড়া কালো হয়ে যায়।
প্রশ্ন ৫: ত্বকে গাড় লাল দাগ হওয়ার কারণ?
উত্তর:- ত্বকে লাল দাগ হওয়ার বিভিন্ন সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। যেমন- বিরক্তিকর কিছুর সাথে যোগাযোগ করলে ডার্মাটাইটিস হতে পারে। একটি ছত্রাকের সংক্রমণ দাদ এর জন্য দায়ী। রক্তনালী ফেটে গেলে পুরপুরা নামে পরিচিত দাগ সৃষ্টি হয়। এবং কিছু অটোইমিউন অবস্থার কারণে ফুসকুড়িও হতে পারে।
প্রশ্ন ৬: ত্বকে ছোট ছোট লাল দাগ?
উত্তর:- আপনার ত্বকের মধ্যে লাল দাগ দেখার অনেক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে ব্রণ, এটোপিক ডার্মাটাইটিস, পিটিরিয়াসিস রোজা, সোরিয়াসিস, পেটিচিয়া এবং ফুসকুড়ি কিছু সাধারণ কারণ।
সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url