পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আমাদের আজকের এই পোস্টটি সাজানো হয়েছে। সব মৌসুমেই পাওয়া যায় এমন একটি ফল হচ্ছে পেয়ারা। যাতে পুষ্টিগুণের কোনো কমতি নেই। যখন তখন বাজারে পাওয়া যায় এই ফলটি, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সুস্বাদু এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।
পেয়ারা পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফলটি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল হচ্ছে পেয়ারা, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আমাদের আজকের এই পোস্টে থাকছে পেয়ারা সম্পর্কিত এবং পেয়ারার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য।
পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা
পেয়ারা গাছের পেয়ারা ফল যে শুধু উপকারী তা কিন্তু নয় পেয়ারার পাতারও কিন্তু অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। একটি পেয়ারার মধ্যে সুপারিশকৃত দৈনিক খাওয়ার ২৫০% এর বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম সহ নানা পুষ্টিগুণ রয়েছে। তো চলুন আর দেরি না করে এবারে জেনে আসি, পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। পেয়ারার অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে, তার মধ্যে কিছু উপকারিতা হচ্ছে,
- পেয়ারাতে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- পেয়ারাতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- এতে থাকা লাইকোপেন, ভিটামিন সি, কুয়েরসেটিন এবং পলিফেনল শরীরের ভিতর থেকে ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান দূর করে।
- পেয়ারা শরীরের কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
- শরীরকে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমিয়ে সুস্থ রাখে।
- পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকার ফলে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
- পেয়ারা চিবিয়ে খাওয়ার ফলে দাঁত টেকসই ও মজবুত হয়।
- পেয়ারাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যা দূর হয় নিয়মিত আঁশ সমৃদ্ধ পেয়ারা খেলে।
- চুলের ও ত্বকের যত্নে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে পেয়ারা।
- পেয়ারা শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রণ করে হার্টকে ভালো রাখে।
- পেয়ারাতে থাকা ভিটামিন বি৩ ও বি৬ এই উপাদান গুলো মস্তিষ্কে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়।
- মাসিকের ব্যথা নিরাময় করতে সাহায্য করে পেয়ারা।
- অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে পেয়ারা।
পেয়ারার পুষ্টিগুণ
যা সহজেই যেকোনো মৌসুমে বাজারে পাওয়া যায় এমন একটি ফল হচ্ছে পেয়ারা। এই সহজলভ্য পেয়ারার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য গুণাবলী এবং পুষ্টিগুণ। পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা যেমন আছে তেমনি রয়েছে অসংখ্য পুষ্টিগুণও। একটি মাঝারি সাইজের পেয়ারার মধ্যে ১০০ ক্যালোরি ও ২০ গ্রামের মতো শর্করা থাকে। আমিষ থাকে প্রায় ৪ থেকে ৫ গ্রাম, চিনি ৫ গ্রাম, সোডিয়াম ১ মি:গ্রাম এবং ফাইবার থাকে ৯ গ্রাম। চর্বির পরিমাণ অনেক কম থাকে।
এবং একটি মাঝারি আকৃতির কমলা থেকে একটি পেয়ারাতে ৪ গুণ বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায়। লেবুর তুলনায় ১০ গুণ বেশি ভিটামিন এ পাওয়া যায় পেয়ারাতে। তাছাড়াও ভিটামিন ই, ভিটামিন বি২, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, কপার, আয়রন, পটাশিয়াম এবং ফসফরাসও রয়েছে পেয়ারাতে।
পেয়েরা খাওয়ার বিভিন্ন উপায়
পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই পেয়ারা যে শুধু কেটে পিস পিস করে খাওয়া যায় তা কিন্তু নয়। এই পেয়ারা খাওয়ার রয়েছে নানান উপায় ও ধরন। একই পেয়ারা বিভিন্ন রকমে খাওয়া যায় এবং একেক রকমে যেন একেক স্বাদ পাওয়া যায়। পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এই পোস্টের এবারে রয়েছে পেয়ারা খাওয়ার বিভিন্ন উপায়। তো চলুন এবার পেয়ারা খাওয়ার কিছু উপায় বা ধরন জেনে আসি।
পেয়ারা চিবিয়ে খাওয়া যায় - আস্ত একটি পেয়ারা ভালো করে ধুয়ে হাতে নিয়ে কামড় দিয়ে খেতে পারেন। আপনার পছন্দ অনুযায়ী বীজ অপসারণ করে নিতে পারেন।
পেয়ারার রস - পেয়ারা ছোট টুকরা করে, সামান্য পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে পারেন। এতে আপনার স্বাদ অনুযায়ী চাট-মশলা অথবা দুধ, সামান্য চিনি, মধু দিয়েও খেতে পারেন।
পেয়ারার সালাদ - পেয়ারা ছোট ছোট টুকরো করে কেটে এতে আরো কিছু ফল (আনারস, আম, সাইড্রাস) ছোট ছোট করে কেটে, সামান্য লবণ দিয়ে একসাথে মিশ্রিত করে খেতে পারেন। অতিরিক্ত স্বাদের জন্য চাট মসলা যোগ করে নিতে পারেন।
পেয়ারার আইসক্রিম - চিনি, ক্রিম এবং ভ্যানিলা এসেন্স এর সাথে পেয়ারা কুচি কুচি করে কেটে ব্লেন্ড করে নিবেন। সবকিছু একসাথে প্রক্রিয়াকরণ করে আইসক্রিম তৈরি করে নিবেন।
পেয়ারা চাটনি - ভিনেগার, মসলা এবং চিনি দিয়ে পেয়ারা রান্না করে নিবেন। যাতে একটি সুস্বাদু মিষ্টি চাটনি তৈরি হয়। যা মাংস বা পনিরের সাথে খুব ভালো মানায়।
পেয়ারা মাখা - একটি পেয়ারা কে ছোট টুকরো টুকরো করে কেটে এতে সামান্য লবণ, পরিমাণ মতো মরিচ, চাট মসলা এবং ধনেপাতা দিয়ে পেয়ারা মাখা তৈরি কর নিতে পারেন।
এছাড়াও পেয়ারা আরো বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। পেয়ারার জ্যাম, পেয়ারা সালসা, পেয়ারা স্মুদি, পেয়ারা ডেজার্ট ইত্যাদি।
পেয়ারা খাওয়ার অপকারিতা
যেকোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তেমনি পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুই দিকই রয়েছে। পেয়ারা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরে নানা রোগের সৃষ্টি হতে পারে। পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা আপনার হজমে সমস্যা হতে পারে।
ফল হিসেবে যেমন পেয়ারা খুবই সুস্বাদু এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো তেমনি অনেক ক্ষেত্রে এর অপকারিতা ও রয়েছে। তাহলে চলুন এবার আপনি জেনে নিন, পেয়ারের কিছু অপকারিতা দিক সম্পর্কে।
গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি খাওয়া উচিত নয়
গর্ভবতী নারী এবং দুগ্ধদানকারী মায়ের জন্য অতিরিক্ত পেয়ারা খাওয়া ভালো নয়। এতে অতিরিক্ত ফাইবার থাকার কারণে হজমের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
সর্দি কাশির আশঙ্কা
যাদের প্রায় সময়ই সর্দি-কাশির সমস্যা লেগে থাকে তাদের জন্য পেয়ারা খাওয়া উচিত নয়। পেয়ারা ঠাণ্ডা জাতীয় ফল, যার কারণে সর্দি কাশি আরো বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
পেট খারাপ হতে পারে
অতিরিক্ত পেয়ারা খাওয়ার ফলে পেট খারাপ হয়ে যাবে। পেয়ারার বীজ শক্ত থাকার ফলে হজমে খারাপ প্রভাব পড়ে এবং হজম শক্তির দুর্বল হয়ে পড়ে।
পেট ফুলে যেতে পারে
নিয়মিত একটা পেয়ারা খেতেই পারেন তবে অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বেশি পরিমাণে পেয়ারা খেলে পেট ফাঁপা হয়ে যেতে পারে। পেটে ফোলাভাব এবং গ্যাস জমা হয়ে যেতে পারে।
একজিমার ঝুঁকি
পেয়ারার পাতায় নির্যাস একজিমা হতে পারে। পেয়ারার পাতা ত্বকে জ্বালাভাব সৃষ্টি করে। আপনার যদি একজিমার গুরুতর সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই পেয়ারা থেকে দূরে থাকবেন।
দাঁতে ব্যথা হতে পারে
আমরা অনেকেই পাকা পেয়ারা সুস্বাদু মনে করে অনেক বেশি খেয়ে ফেলি। তবে দাঁতে ব্যথা বা দাঁত জনিত কোন রোগ থাকলে পেয়ারা না খাওয়াই ভালো। পেয়ারা খাওয়ার ফলে দাঁতের সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
সর্বশেষ
পেয়ারা একটি সুপার ফ্রুট, কারণ এতে রয়েছে আনারসের চেয়ে তিনগুণ বেশি প্রোটিন, কমলার চেয়েও চার গুণ বেশি ভিটামিন সি, এবং ই সমৃদ্ধ। এছাড়াও পেয়ারা গাছের জীবনকাল প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। পেয়ারা গাছ লাগানোর ২-৪ বছরের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে।
আমাদের আজকের পুরো পোস্টটি সাজানো হয়েছিল পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে। পেয়ারা সম্পর্কিত পোস্টটি আপনার একটুও ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে দিবেন। এতক্ষণ আমাদের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ
প্রশ্ন: পেয়ারা খেলে শরীরের কি কি ক্ষতি হয়?
উত্তর:- পেয়ারার মধ্যে পটাশিয়াম এবং ফাইবার থাকে। যার কারণে আপনার যদি ডায়রিয়া, আমাশয় বা পেটের যেকোনো সমস্যা থাকে তাহলে পেয়ারা খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। এবং পেয়ারা পাতার রস অধিক পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়, এতে শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
প্রশ্ন: পেয়ারা খেলে কি উপকার হয়?
উত্তর:- পেয়ারার বীজে পটাশিয়াম থাকার ফলে তা উচ্চারণ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা অনেক উপকারী। ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাছাড়াও পেয়ারার আরো বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে।
প্রশ্ন: পেয়ারা খেলে কি প্রেসার কমে?
উত্তর:- পেয়ারা হার্ট কে সুস্থ রাখে। পেয়ারায় থাকা ফাইবার রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম পাওয়া যায়, এই দুই উপাদান উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
প্রশ্ন: পেয়ারা কি কিডনির ক্ষতি করে?
উত্তর:- আপনার যদি কিডনিতে পাথর থাকার সমস্যা থাকে, তাহলে পেয়ারা খাওয়া উচিত হবে না। কারণ পেয়ারার মধ্যে রয়েছে অক্সালেট। যা কিডনিতে পাথর জমার সমস্যা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url