রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান

পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর রাজশাহী। আম ও রেশমি বস্ত্রের জন্যে বিখ্যাত রাজশাহী জেলা রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে বড় শহর। প্রাচীন বাংলার ইতিহাস সমৃদ্ধ এই রাজশাহী শহরে রয়েছে বিখ্যাত মসজিদ, মন্দির ও ঐতিহাসিক স্থাপনা।
রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান
পদ্মার তীরের রাজশাহী শহরের পর্যটকদের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে পুঠিয়া রাজবাড়ী, আলপনা গ্রাম, মোগল তাহখানা,চায়না বাঁধ, গোকুল মেধ, মহাস্থানগড়, হার্ডিঞ্জ ব্রীজ,হালতি বিল,তাড়াশ রাজবাড়ী,বলিহার রাজবাড়ি। আমাদের আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আর দেরি না করে চলুন জেনে আসি রাজশাহীর দর্শনীয় কয়েকটি স্থান সম্পর্কে।

১.পুঠিয়া রাজবাড়ী (রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান)

পুঠিয়া রাজবাড়ী বা পাঁচআনি জমিদারবাড়ি হচ্ছে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবীর বাসভবন। বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের মধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী অন্যতম। ১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী আকর্ষণীয় ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতিতে আয়তাকার দ্বিতল বর্তমান রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন।

ভবনের সম্মুখ ভাগের স্তম্ভ, অলংকরণ, কাঠের কাজ, কক্ষের দেয়ালে ও দরজার উপর ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম চমৎকার নির্মাণ শৈলীর পরিচয় বহন করে। রাজবাড়ীর ছাদ সমতল, ছাদে লোহার বীম, কাঠের বর্গা এবং টালি ব্যবহৃত হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য রাজবাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিল।

রাজশাহী জেলা সদর হতে ৩২ কিঃমিঃ উত্তর- পূর্বে নাটোর মহাসড়ক অভিমুখে পুঠিয়া অবস্থিত। বাসে করে দেশের যে কোন স্থান হতে পুঠিয়া আসা যায় এবং ট্রেনে করে নাটোর অথবা রাজশাহী নেমেও সড়কপথে সহজে আসা যায়। পুঠিয়া রাজবাড়ীর আশে পাশে ছয়টি রাজ-দিঘী আছে। প্রত্যেকটা দিঘীর আয়তন ছয় একর করে। মন্দিরও আছে ছয়টি। সবচেয়ে বড় শিব মন্দির।

এ ছাড়া আছে রাধাগোবিন্দ মন্দির, গোপাল মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, দোলমঞ্চ ইত্যাদি। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালেই অপূর্ব সব পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ। জোড়-বাংলা মন্দির, বাংলো মন্দির, পঞ্চরত্ন অর্থাৎ চূড়াবিশিষ্ট মন্দির অর্থাৎ বাংলার বিভিন্ন গড়নরীতির মন্দিরগুলোর প্রতিটিই আকর্ষণীয়। এ ছাড়া রানির স্নানের ঘাট, অন্দর মহল মিলিয়ে বিশাল রাজবাড়ী প্রাঙ্গণ।

রাজশাহী এবং নাটোর থেকে সড়ক পথে পুঠিয়া রাজবাড়ীর দূরত্ব ৩৪ এবং ১৮ কিলোমিটার। রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজবাড়ি যেতে ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগে।

২.আলপনা গ্রাম টিকোইল (রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান)

রাজশাহী বিভাগের ১৪ টি দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে চাপাইনবাগঞ্জের নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের টিকোইল গ্রাম। মানুষ এই গ্রামকে চেনে ‘আলপনা গ্রাম’ হিসেবে। দেশে এবং দেশের বাইরে এই গ্রামের নাম ছড়িয়ে গেছে এখানকার মানুষের অসাধারণ শৈল্পিক কর্মের মাধ্যমেই। 

এই গ্রামে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে মনে হবে লাল, নীল, আকাশী, সবুজ অজস্র রঙের ছটায় চারপাশ যেন হঠাৎ রঙিন হয়ে উঠেছে। আর পূজা-পার্বণের সময় তো কথাই নেই, যেন রং-তুলিতে আঁকা বর্ণিল একটি ছবি! গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেয়াল যেন এক একটি ক্যানভাস। মাটির দেয়াল জুড়ে সবসময় শোভা পায় নানান রঙে আঁকানো নানান কারুকার্যের আলপনা। 

প্রতিটি বাড়িতেই মেলে গ্রামবাসীর রুচি আর মননশীলতার চিহ্ন। যেকোনো পূজা বা উৎসবে, পহেলা বৈশাখে গ্রামবাসী সবাইকে স্বাগত জানায় নতুন আঁকা আলপনার মাধ্যমে। নিজেদের বাসস্থান তো বটেই, এমনকি তারা ভোলে না রান্নাঘর কিংবা গোয়াল ঘরের দেয়ালেও আলপনা আঁকতে।

রাজধানী ঢাকা থেকে আপনাকে সড়ক পথে  চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর  দূরত্ব ৩১৭ কিলোমিটার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে আলপনা গ্রামের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার।

৩.মুঘল তাহখানা (রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান)

বঙ্গ সুলতান শাহ সুজা তার মুর্শিদ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ এর উদ্দেশ্যে শীতকালীন বাসের জন্য ফিরোজপুরে তাপ-নিয়ন্ত্রণ ইমারত হিসেবে এ ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন। সময়ে সময়ে শাহ সুজাও এখানে এসে বাস করতেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ হতে জানা যায়, মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পু্ত্র শাহ্ সূজা বাংলার সুবাদার থাকাকালে ১৬৩৯-১৬৫৮ খ্রিঃ মতান্তরে ১৬৩৯-১৬৬০ খ্রিঃ তার মুরশিদ হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর প্রতি ভক্তি নিদর্শনের উদ্দেশ্যে তাপনিয়ন্ত্রিত ইমারত হিসেবে তোহাখানা নির্মাণ করেন। 

জনশ্রুতি আছে যে-শাহ সুজা যখন ফিরোজপুরে মুরশেদ শাহ নেয়ামতউল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসতেন তখন উক্ত ইমারতের মধ্যবর্তী সুপ্রশস্ত কামরাটিতে বাস করতেন। তোহাখানা কমপ্লেক্সের ভেতরে আরও নাম না জানা অনেক সমাধি দেখা যায়। যাদের পরিয় এখনো জানা যায় নি। তবে এদেরকে হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর খাদেম বা সহচর বলে ধারনা করা হয়।

মূল প্রাসাদের উত্তর পশ্চিম দিকে আরও দুটি ভবন রয়েছে। এদের মধ্যে নিকটস্থটি হলো তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ এবং অন্যটি হলো বাঁধানো বারান্দা সহ একটি গম্বুজবিশিষ্ট সমাধি। ভবনগুলো প্রায় একই সময়ে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এদের একত্রে একটি কমপ্লেক্স হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

ভবনটি মূলত ইট দ্বারা নির্মিত। তবে দরজার চৌকাঠের জন্য কালো পাথর এবং সমতল ছাদের জন্য কাঠের বিম ব্যবহৃত হয়েছে। মুঘল তাহখানা আসতে চাইলে আপনাকে প্রথমে শিবগঞ্জ আসতে হবে। এখান থেকে আপনি আপনার গন্তব্যে খুব সহজে যেতে পারবেন।

৪.চায়না বাঁধ (রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান)

ঢাকার বাইকারদের কাছে চায়না বাঁধ অনেক বেশি জনপ্রিয়। কারণ এই ঢাকা থেকে এই বাঁধে খুব সহজেই যাওয়া যায়। এমন অসাধারণ জায়গায় একটা বিকেল পার করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সিরাজগঞ্জের চায়না বাঁধ থেকে। 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা শহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে যমুনা নদীর কূল ঘিরে তৈরি করা হয়েছে এই বাঁধ। বাঁধের মূল ফটক থেকে নদীর ২ কিলোমিটার গভীরে চলে গেছে বাঁধের শেষ প্রান্ত। মূল গেট থেকে পিচ ঢালা রাস্তা সহজেই যেতে পারবেন বাঁধের শেষ প্রান্তে।

৫.মহাস্থানগড়

রাজশাহী বিভাগের ১৪ টি দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরীর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্য হিন্দু রাজা ও অন্যান্য ধর্মের রাজারা রাজত্ব করেন। 

মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় । বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কি.মি. উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গেলে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়৷। মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়।

৬.গোকুল মেধ (রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান)

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মতে, আনুমানিক খৃস্টাব্দ ৭ম শতাব্দী থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে গোকুল মেধ নির্মিত হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায় এখানে বেহুলার বাসর হয়েছিল। যা সেন যুগের অনেক আগের ঘটনা। তবে বর্তমান গবেষকদের মতে, এ কীর্তিস্তম্ভ ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খৃস্টাব্দে দেবপাল নির্মিত একটি বৌদ্ধমঠ। এখানে বহু গর্তযুক্ত একটি ছোট প্রস্তর খণ্ডের সঙ্গে ষাঁড়ের প্রতিকৃতির একটি স্বর্ণ পত্র পাওয়া গিয়েছিল।

বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাং তাদের ভ্রমণ কাহিনীতে এটাকে বৌদ্ধ মঠ রূপে উল্লেখ করেছিলেন বলে জানা যায়। আবার কোনো কোনো ঐতিহাসিক গ্রন্থে এই মেধকে একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রূপে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি নির্মাণ করা হয়েছিল পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানীকে বাইরের শত্রু থেকে রক্ষা করার জন্য।

৭.হার্ডিঞ্জ ব্রীজ

১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন অবিভক্ত ভারত সরকার অসম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষ্যে পদ্মা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব করে। পরবর্তীতে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে সেতু নির্মাণের মঞ্জুরি লাভের পর ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট গেইলস সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে সেতু নির্মাণের সমীক্ষা শুরু হয়। ১৯১০-১১ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মার দুই তীরে সেতু রক্ষার বাঁধ নির্মাণ হয়। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে সেতুটির গাইড ব্যাংক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি সেতুর গার্ডার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। গার্ডার নির্মাণের জন্য কূপ খনন করা হয়। ২৪ হাজার শ্রমিক দীর্ঘ ৫ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের ভাইসরয় ছিলেন লর্ড হার্ডিঞ্জ।

তার নামানুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয় হার্ডিঞ্জ ব্রীজ। সেতুটির নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৩২ হাজার ১ শত ৬৪ টাকা। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৮ শত ফুট। ব্রিজটিতে ১৫টি স্প্যান আছে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেতুটিতে বোমা ফেলা হলে ১২ নম্বর স্প্যানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেগুলো পরে মেরামত করা হয়েছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ঈশ্বরদী ভেড়ামারা সীমানায় পদ্মানদীর উপর অবস্থিত।

ভেড়ামারা উপজেলা সদর হতে প্রায় ৮.৫ কিমি উত্তরে এবং ঈশ্বরদী উপজেলার সদর হতে প্রায় ৮ কিমি দক্ষিণে পদ্মা নদীর উপর সেতুটি অবস্থিত।

৮.তাড়াশ রাজবাড়ী (রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান)

ব্রিটিশ শাসনামলে তাড়াশ রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন তাড়াশের তৎকালীন জমিদার রায়বাহাদুর বনমালী রায়। স্থাপত্যের দিক দিয়ে এটির সাথে ইউরোপীয় রেনেসাঁ রীতির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। ৮ই জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটিকে সংরক্ষিত ঘোষণার পূর্বে ভবনটি বিভিন্ন সরকারি দপ্তর হিসেবে ও পাবনা মেডিকেল কলেজের ভবন হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে কিছুদিন।

জনশ্রুতি অনুসারে, রায়বাহাদুর জমিদারের বংশধরগণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালে এই ভবনটি তাদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করেছিল। তাড়াশ ভবন বা তাড়াশ রাজবাড়ী পাবনা জেলা সদরে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। ভবনটি তৈরি করা হয়েছিল ১৮শ শতকের কোন এক সময়।

৯.বলিহার রাজবাড়ি (রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান)

নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নে বলিহার রাজবাড়ি নওগাঁ-রাজশাহী সড়কের পশ্চিমে ও নওগাঁ জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে বলিহার ইউনিয়নের কুড়মইল মৌজায় বলিহার রাজবাড়ি অবস্থিত। বলিহারের জমিদার রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার অন্যতম বিখ্যাত জমিদার ছিল। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে নওগাঁর বলিহার এলাকার এক জমিদার জায়গির লাভ করেছিলেন।

১৮২৩ সালে জমিদার রাজেন্দ্রনাথ এখানে একটি রাজ-রাজেশ্বরী দেবীর মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। তিনি মন্দিরে পিতলের তৈরি রাজেশ্বরী দেবীর একটি মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। মূর্তটি বলিহারসহ এই অঞ্চলের প্রসিদ্ধ ছিল। বলিহার জমিদার পরিবার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নৃসিংহ চক্রবর্তী। সম্রাট আওরঙ্গজেব কর্তৃক জায়গির লাভ করে বলিহারের জমিদাররা এ এলাকায় নানা স্থাপনা গড়ে তোলেন যার মধ্যে বলিহার রাজবাড়ি অন্যতম।

১০.হালতি বিল (রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান)

উত্তরাঞ্চলে কোনো সমুদ্র নেই, তাই এ অঞ্চলের মানুষের কাছে সমুদ্রসৈকত এক স্বপ্ন। তবে নাটোরের হালতি বিল এখন সমুদ্রের অভাব অনেকটাই পূরণ করছে এই এলাকার সাগরপিয়াসী মানুষদের। হালতি বিলের উত্তাল জলরাশি আর ঢেউ যে কারো মন নিমেষেই ভালো করে দেয়ার মত।  বর্ষায় অথৈ পানি আর শীতে ফসলি জমির এই বিলের মাঝ বরাবর ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক নির্মাণ করা হয় ২০০৪ সালে।

হালতির বিল বা হালতি বিল নাটোর সদর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে নলডাঙ্গা থানার অন্তর্গত বিল। এটি অত্র অঞ্চলের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে এখানে পাটুল থেকে খাজুরা পর্যন্ত যে রাস্তা আছে সেটাই বেশি আকর্ষনীয়। বর্ষায় যখন পানিতে পরিপূর্ণ হতে থাকে বিল, তখন এই রাস্তার সৌন্দর্য বাড়তে থাকে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে রাজশাহীর বাস ভাড়া ৬৫০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে রাজশাহী-গামী এসি, নন-এসি বাসের মধ্যে রয়েছে একতা ট্রান্সপোর্ট, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, গ্রামীণ ট্র্যাভেলস, দেশ ট্র্যাভেলস, ন্যাশনাল ট্র্যাভেলস, শ্যামলী, ওয়েস্টার্ন ট্র্যাভেলস , চাপাই ট্র্যাভেলস ইত্যাদি।

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে রাজশাহী যেতে চাইলে কমলাপুর অথবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে করে আসতে হবে। ভাড়া ৩৫০ থেকে ১২৫০ এর মধ্যে।

কোথায় থাকবেন

রাজশাহীতে রয়েছে চমৎকার কিছু রিসোর্ট এবং হোটেল। যেখানে আপনি নিজে, পরিবারসহ এবং বন্ধুদের নিয়ে একটি আনন্দের ভ্রমণ করতে পারেন।রাজশাহীতে বিভিন্ন ভ্রমণ স্পর্ট এর মত নাম করা কিছু হোটেল এন্ড রিসোর্ট রয়েছে। যেখানে গিয়ে নিজের ইচ্ছেমত ঘোরাফেরা এবং আরাম-আয়েশ করতে পারবেন। কেননা, ছোট বড়, ডিলাক্স এবং ৫ তারকাসহ সকল প্রকার হোটেল রিসোর্টে আছে এই রাজশাহী শহরে।

যেমন-বরেন্দ্র রিসোর্ট,বাংলাদেশ পর্যটন মোটেল, হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল ,অরণ্য রিসোর্ট ইত্যাদি। এখানে আপনি নিম্নমানের এবং উচ্চমানের সব রকমের রুম পাবেন। আপনি আপনার চাহিদা এবং সুবিধা অনুযায়ী রুম বুক করবেন।

শেষ কথা

রাজশাহী বিভাগ নানা রকম ঐতিহাসিক স্থান দিয়ে সমৃদ্ধ একটি বিভাগ। এই বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা রয়েছে। উপরে উল্লেখিত জায়গা ছাড়াও রয়েছে  উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, রুয়েট সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠান। 

এই শহরের পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, দূষণ মুক্ত বাতাস এবং শান্ত মায়াবী পরিবেশ দেখলে যে কেউ সারাজীবনের জন্য থেকে যেতে চাইবে। যদি আপনি ভ্রমণ ভালোবাসেন তাহলে অবশ্যই রাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থান গুলো ভ্রমণ করবেন। 

রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বিভিন্ন স্থানের তথ্য বা অন্যান্য বিষয়ের উপর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ

প্রশ্ন ১: রাজশাহী বিভাগ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর:- ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে উত্তরবঙ্গের বিশাল অংশ নিয়ে একটি বিভাগ গঠিত হয়েছিল। ১৮,১৫৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই বিভাগ ৮টি জেলা, ৬৬টি উপজেলা ও ৫৬৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রাজশাহী। 

প্রশ্ন ২: রাজশাহী জেলার দর্শনীয় স্থান কি কি? 

উত্তর :- রাজশাহী জেলার কিছু দর্শনীয় স্থান হচ্ছে, লালন শাহ মুক্তমঞ্চ, পদ্মা গার্ডেন, সবুজ সিএন্ডবি রাস্তা, আই বাঁধ, রাতের আলোক সজ্জিত রাস্তা, রাজশাহী কলেজ সহ আরো বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে। 

প্রশ্ন ৩: রংপুরের দর্শনীয় স্থান গুলো কি কি? 

উত্তর :- রংপুরের জনপ্রিয় কিছু দর্শনীয় স্থান হচ্ছে, তাজহাট রাজবাড়ি, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর চিড়িয়াখানা, ভিন্নজগৎ, চিকলির পার্ক, ঘাগট প্রয়াস পার্ক, পায়রাবন্দ সহ আরে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url