রংপুরের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নিন
রংপুরের দর্শনীয় স্থান
পায়রাবন্দ - রংপুরের দর্শনীয় স্থান
বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া খাতুন (বেগম রোকেয়া)-এর পৈত্রিক বাড়ি পায়রাবন্দ (Pairaband)। এই মহীয়সী নারী জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর পায়রাবন্দ গ্রামে। পায়রাবন্দের জমিদারীর সর্বশেষ জমিদার উত্তরাধিকারী সম্ভ্রান্ত ভূস্বামী জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের ছিলেন বেগম রোকেয়ার পিতা। এবং মাতা ছিলেন বলিয়াদী জমিদার কন্যা রাহাতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরানী।
তৎকালীন সমাজব্যবস্থার সাথে মিল রেখে বেগম রোকেয়াকে নিজ গৃহে আরবি ও উর্দু শেখানো হত। বেগম রোকেয়া তাঁর বড় ভাই ইব্রাহীম সাবেরের কাছে গোপনে বাংলা ও ইংরেজি শিখতে শুরু করেন। ১৮৯৬ সালে বেগম রোকেয়ার ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন মুক্তমনা ছিলেন এবং তিনি বেগম রোকেয়াকে লেখালেখি করতে উৎসাহ দিতেন। ১৯০২ সালে পিপাসা নামের একটি গল্পের মাধ্যমে সাহিত্যজগতে পদার্পণ করেন এই মহীয়সী নারী। বর্তমানে পৈত্রিক বাড়িটির আর কিছুই প্রায় অবশিষ্ট নেই, শুধুমাত্র বিলুপ্তপ্রায় কিছু ইটের দেয়ালের গাঁথুনি ছাড়া।
বেগম রোকেয়ার বাড়ির পাশে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ৩.১৫ একর ভূমির উপর বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখানে আছে নান্দনিক বাগান, অফিস ভবন, ৪ তলা ডরমিটরি ভবন, গবেষণা কক্ষ, লাইব্রেরি, আধুনিক গেস্ট হাউজ এবং পিতলের তৈরি বেগম রোকেয়ার ভাষ্কর্য। এছাড়া এখানে বিকেএমই নামের ট্রেনিং সেন্টারে তরুণদের কর্মসংস্থানে সহায়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
চিকলির বিল - রংপুরের দর্শনীয় স্থান
রংপুরের হনুমান তলা এলাকার শত বছরের প্রাচীন এই চিকলি বিলের পাশেই গড়ে উঠেছে দর্শনীয় চিকলি ওয়াটার ও গার্ডেন পার্ক। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই পার্ক এরই মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেশবাসীর কাছে। বিল পাড়ে মনোরম পরিবেশে দু’দণ্ড বসার ব্যবস্থা আছে।
আরও আছে চিত্তবিনোদনের জন্য স্থাপিত মিনি রেলগাড়ি ও বিভিন্ন রাইড।বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা চিকলি বিনোদন পার্কের পাশেই আছে রিসোর্ট। আছে আলাদা আলাদা ৫টি সিটিং এরিয়ার রেস্টুরেন্ট। আছে জেট স্কি’সহ নানা ওয়াটার রাইড, আর্টিফিশিয়াল ওয়াটার ফলস, টয় ট্রেন ও বিশালাকার চরকি সব আরও নানা রাইড।
সেখানকার বিশালাকার চরকিতে চড়লে রংপুর শহরের বার্ডস আই ভিউ পাবেন। পড়ন্ত এক বিকেল কাটানোর জন্য অসাধারণ এক স্থান এই চিকলির বিল। চিকলি ওয়াটার পার্ক এর মূল আকর্ষণ হলো কৃত্রিম ঝরনা। দিনের চেয়ে রাতে এই ঝরনা দেখতে বেশি ভালো লাগে। নানা রঙের আলোর ঝলকানিতে চোখ ভরে যাবে।
পার্কের ভেতরে বেশ কয়েকটি ক্যানেল আছে। সেখানকার স্বচ্ছ খেলা করছে রঙিন মাছ। চাইলে স্পিড বোটেও গা ভাসাতে পারবেন এই পার্কে। দর্শনার্থীদের বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় চেয়ার বা বেঞ্চের ব্যবস্থা রাখা আছে।
বর্তমানে চিকলির বিল দু’ভাগে বিভক্ত। বিলের দক্ষিণে গড়ে উঠেছে ওয়াটার পার্ক। সেখানে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। সেখানে আরও আছে বিভিন্ন ওয়াটার রাইড। আর বিলের উত্তর পাশ যার নাম চিকলি ওয়াটার গার্ডেন। যার প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা।
লালদিঘী নয় গম্বুজ মসজিদ - রংপুরের দর্শনীয় স্থান
লালদীঘি নয় গম্বুজ মসজিদ রংপুর জেলার সদরপুর উপজেলা শহর থেকে মোট ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে গোপীনাথ ইউনিয়নের লালদীঘি নামক এলাকায় অবস্থিত। এটি রংপুরের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। ভারতীয় উপমহাদেশে থাকাকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে এই মসজিদটি আবিষ্কৃত হয়।
পরবর্তীতে স্থানীয় বাসিন্দাগণ মসজিদটি পরিষ্কার করে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে। দুপাশের অন্য দুটি উন্মুক্ত অংশ জানালা ও ইটের তৈরি জালি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পূর্বদিকের তিনটি প্রবেশপথ বরাবর কিবলা দেওয়ালে রয়েছে তিনটি অর্ধ অষ্ট-কোণাকৃতির মিহরাব।
মিহরাবের কুলুঙ্গির উপরের অর্ধ-গম্বুজ খিলান ছাদে এখন রয়েছে পূর্ণ প্রস্ফুটিত পদ্ম-নকশার অর্ধাংশ, আর মিহরাবের উপরে স্থাপিত ব্যান্ডে রয়েছে বদ্ধ পদ্ম পাপড়ি নকশার সারি। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অপেক্ষাকৃত বড়। পুরো ইমারতটির ভেতরের ও বাইরের দেওয়াল চুন সুরকির পলেস্তারা দিয়ে মসৃণভাবে আবৃত।
কিবলা দেওয়াল ব্যতীত বাকি তিন দেওয়ালের বাইরের অংশ এই পলেস্তারা দিয়ে তৈরি ছোট ছোট আয়তাকার খোপ-নকশা দিয়ে অলঙ্কৃত। ইমারতের পুরো বিস্তার জুড়ে রয়েছে পলেস্তারার প্যাঁচানো নকশায় অলঙ্কৃত একটি অনুভূমিক কার্নিশের ব্যান্ড। আর এর বপ্র জুড়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বদ্ধ পদ্ম-পাপড়ি নকশার সারি। গম্বুজসমূহের পিপার বাইরের অংশ এবং পার্শ্ব-বুরুজগুলির ওপরের ছত্রীর ভিত্তিও অনুরূপ পদ্ম-পাপড়ি নকশা দিয়ে অলঙ্কৃত করা হয়েছে।
তাজহাট জমিদার বাড়ি - রংপুরের দর্শনীয় স্থান
মুঘল স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হল তাজহাট রাজবাড়ী। তাজহাট রাজবাড়ী রংপুর শহর থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণ- পূর্বে অবস্থিত। এই রাজবাড়িতে বর্তমানে প্রাসাদের ভেতরে একটি জাদুঘর আছে।
খাজা আহসানুল্লাহ নামক একজন প্রভাবশালী জমিদার দ্বারা তাজহাট জমিদার বাড়ি নির্মিত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ।শুনা যায় জমিদারের যে মুকুটটি ছিল সেটি ছিল রত্নখচিত, যার জন্য ওই রাজার মুকুট কে তাজ হিসেবে গণ্য করা হতো; যা থেকে তাজহাট নামটি এসেছে বলে আমরা জানি।
প্রাসাদটি একটি দ্বিতল ভবন এবং ছোট টিলার উপর নির্মিত। প্রাসাদের দেওয়ালে দেখতে পাওয়া যায় পোড়ামাটির কারুকাজ এবং বিস্তীর্ণভাবে অঙ্কিত খোদাই। মূলত ইট এবং কাঠ দ্বারা এই প্রাসাদটি নির্মিত। সমনের কেন্দ্রে সাদা মার্বেল পাথর দ্বারা তৈরি প্রশস্ত সিঁড়ি বেয়ে মূল জমিদার বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।
প্রসাদের ভিতরে সর্বমোট ২২ টি কক্ষ রয়েছে। ১৮৮৪ থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত রাজবাড়ীটি রংপুর হাইকোর্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
তিস্তা ব্যারেজ - রংপুরের দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্পের তিস্তা ব্যারেজ (Teesta Barrage) লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলাধীন গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানী এবং পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলাধীন খালিসা চাপানী ইউনিয়নের ডালিয়া- এর মধ্যবর্তী স্থানে তিস্তা নদীর উপর নির্মিত।
ডালিয়া নামটি ফুলের মতো হলেও এটি একটি গ্রাম, যা দেখতে কোনো মনোহরিণীর মতো। সবুজে আচ্ছাদিত এ গ্রামটি আকর্ষণ করে সবচেয়ে পথচারীদের। ভারতের উত্তর সিকিমের পার্বত্য এলাকায় তিস্তার উৎপত্তি। বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে নীলফামারী জেলা দিয়ে।
এ নদী বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের সব কয়টি জেলা অর্থাৎ নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার ওপর দিয়ে প্রবহমান। আশির দশকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানিতে তিস্তা নদীর ওপর গড়ে তোলা হয় বাঁধ। যাকে বলা হয় তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প। এ ব্যারেজটি তৈরির ফলে নীলফামারি, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার বিশাল এলাকা সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে।
নদীর মাঝখানে ব্যারাজ। যান্ত্রিক গেট। টানা ৪৪টি গেট একনাগাড়ে। এর আরেক পাশে আছে আরও আটটি গেট। খালে পানি নেওয়ার জন্য। অনেকগুলোই খোলা। তিস্তা নদীর পানিকে নিয়ন্ত্রণ করে, পানি সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় সেচের কাজে লাগানো হয় এই ব্যারাজ দিয়ে।
লোহা-লক্কড়, কংক্রিটের বিশাল বিশাল সব কাঠামো। নদীর দুপাশে গড়ে তোলা হয়েছে সবুজ বেষ্টনী। তিস্তা ব্যারেজকে ঘিরে তিস্তার পাড় সেজে উঠেছে অপরূপ সাজে। সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে বেশ কয়টি পিকনিক স্পট। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ দলবেঁধে এখানে এসে পিকনিক করে।
বর্ষাকালে তিস্তা যথেষ্টই ভরা ও খরস্রোত থাকে। খালটাও দেখার মতো। বিকেলে অনেকেই আসে বেড়াতে। ব্যারেজের পাশে পিচ ঢালা কালো রাস্তা দু’পাশ কাশফুলে ঢাকা। অপরূপ সে দৃশ্য। পিচ-ঢালা সরু পথ ধরে চলতে চলতে মনে হবে এই পথ যেন শেষ না হয়। সবকিছু মিলিয়ে এটি দেখার মত একটি জায়গা।
ভিন্নজগত পার্ক - রংপুরের দর্শনীয় স্থান
ভিন্নজগত পার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র রংপুর জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। সবুজে ঘেরা এই পার্কটিতে রয়েছে নানান স্থাপনা। ২০০১ সালে বিভাগীয় শহর রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার খলেয়া গুঞ্জিপুর এলাকার প্রায় ১০০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তুলা হয় এই বিনোদন কেন্দ্রটি।
এখানে রয়েছে শোভা বর্ধনকারী দেশি বিদেশি হাজারো বৃক্ষে এবং প্রতিটি গাছে নানা প্রজাতির পাখির কোলাহলে মুখর হয়ে থাকে সবসময়। ভিন্নজগতে স্থান পেয়েছে আধুনিক বিশ্বের বিস্ময় এবং দেশের প্রথম প্লানেটোরিয়াম। রয়েছে সি প্যারাডাইস, রোবট স্ক্রিল জোন, স্পেস জার্নি, জল তরঙ্গ, আজব গুহা, নৌকা ভ্রমণ, শাপলা চত্বর, বীরশ্রেষ্ঠ এবং ভাষা সৈনিকদের ভাস্কর্য, ওয়াক ওয়ে, থ্রিডি মুভি, ফ্লাই হেলিকপ্টার, মেরি গো রাউন্ড, লেক ড্রাইভ, সুইমিং পুল স্পিনিং হেড, মাছ ধরার ব্যবস্থা।
একই সঙ্গে রয়েছে অন্তত ৫শ’টি পৃথক দলের পিকনিক করার ব্যবস্থা। শিশুদের বিনোদনের জন্য ভিন্নজগত পার্ক এ স্থাপন করা হয়েছে হাতি, ঘোড়া, ক্যাঙ্গারু সহ বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য। এখানে রয়েছে প্রায় ৯০০ গাড়ির পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, থ্রি স্টার মানের ড্রিম প্যালেস হোটেল, ৭ টি কটেজ। এছাড়াও ভিন্নজগতের লেকে নৌভ্রমণের সুবিধা এবং নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।
আর সব কিছু মিলে ভিন্নজগত উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভিন্নজগতে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ৩০ টাকা মূল্যের প্রবেশ টিকেট সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়া ভেতরের প্রতিটি রাইড উপভোগের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে।
রংপুর চিড়িয়াখানা - রংপুরের দর্শনীয় স্থান
উত্তর বঙ্গের বৃহত্তম চিড়িয়াখানা হল রংপুর চিড়িয়াখানা। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। এটি একই সাথে পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র, পিকনিক স্পট এবং চিড়িয়াখানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
রংপুরের পুলিশ লাইন রোডে, হনুমান তলা সড়কের পূর্বদিকে চিড়িয়াখানাটি অবস্থান। বর্তমানে পার্কটিতে উপস্থিত প্রাণীসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির, সিংহ, জলহস্তী, ময়ূর,বানোর, ভাল্লুক, ঘোড়া, শকুন,অজগর সাপ, বলগা হরিণ, তোতা পাখি, টার্কি,টিয়া পাখি,ময়ূর এবং আরও বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখি।
তাছাড়াও চিড়িয়াখানায় রয়েছে একটি রেস্তোরাঁ, একটি পার্ক, বিভিন্ন স্থানীয় গাছপালা এবং একটি লেক। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) রংপুর চিড়িয়াখানার উন্নয়ন সম্ভাবনা’র উপরে সমীক্ষা চালাচ্ছে যাতে একে একটি আন্তর্জাতিক মানের চিড়িয়াখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।ছোট-মনিদের জন্য বানানো হয়েছে শিশু পার্ক।
দেবী চৌধুরানী রাজবাড়ী - রংপুরের দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার থানা মন্থনা নামক স্থানে অবস্থিত দেবী চৌধুরাণীর রাজবাড়ি যা বর্তমানে রাজবাড়ী নামে পরিচিত। এই রাজবাড়ি টি একটি ঐতিহাসিক রাজবাড়ী। মন্থনা জমিদার দেবী চৌধুরানীর আসল নাম জয় দুর্গা দেবী চৌধুরানী।
১৭০৩ থেকে ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দের প্রায় ২৮ একর জায়গা নিয়ে জমিদার অনন্তরামের মাধ্যমে দেবী চৌধুরানী রাজবাড়ীর গোড়াপত্তন হয়। পীরগাছা উপজেলার সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এই জমিদার বাড়িটি মন্থনা জমিদার বাড়ি ও পীরগাছা রাজবাড়ি নামে ও পরিচিত।
দেবী চৌধুরাণীর রাজবাড়ি তে রয়েছে অপূর্ব কারুকাজে মণ্ডিত দেড় শতাধিক বছরের পুরাতন জমিদার জ্ঞানেন্দ্র নারায়ণ রায় কর্তৃক নির্মিত ত্রিবিগ্রহ মন্দিরের অন্নপূর্ণ বিশ্বেশ্বর, শিব ও হরিহর বিগ্রহ পাশাপাশি কক্ষে রাখা হয়েছে। বাংলার মন্দির দাম্পত্য ইতিহাসে এক অনন্য বিরল দৃষ্টান্ত।
রাজবাড়ী চারি দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দৃষ্টি নন্দিত ছোট বড় অনেক পুকুর। দেবী চৌধুরানীর খননকৃত ঢুসমারা খাল অর্থাৎ হঠাৎ বা অকস্মাৎ সৃষ্টি, খালটি রাজবাড়ীর পিছনে ইতিহাসের কালের সাক্ষী হয়ে কোনমতে বেঁচে আছে। দেবী চৌধুরানী এ খাল দিয়ে নদীপথে নৌকার মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় গোপন অবস্থায় যাতায়াত করতেন।
সেনা প্রয়াস বিনোদন পার্ক ঘাঘট - রংপুরের দর্শনীয় স্থান
রংপুর মূল শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পার্কটি। বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর দ্বারা পড়ি চালিত এই পার্ক। শহরের ব্যস্ত জীবন যখন কর্মজীবী মানুষের জন্য যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে, তখন প্রকৃতি এর সমাধান দিতে সক্ষম। সেই প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে এবং নির্মল পরিবেশে ক্লান্তি দূর করার জন্য মানুষজন সেনা প্রয়াস বিনোদন পার্কে বেড়াতে যান।
রংপুর শহরের অদূরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত রক্ত গৌরব চত্বরে ঘাঘট নদীর দুপাশে নিসবেতগঞ্জ নামক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছে মনোরম এই পার্কটি। পার্কের প্রবেশ পথে রয়েছে একটি বিশাল ডাইনোসরের প্রতিমূর্তি এবং অদূরে রয়েছে নৌকার সারি ও কাশবন।
সমগ্র এলাকাটির বিস্তৃতি প্রায় এগারশত একর এবং ভিতরে রয়েছে কৃত্রিম ভাবে সাজানো লতাগুল্মের বাগান।এই পার্কে প্রবেশ এর মূল্য ৫০ টাকা। রংপুর ভ্রমণ করতে গেলে অপরূপ এই স্থানটি ঘুরে আসতে ভুলবেন না।
কেরামতিয়া মসজিদ ও মাজার - রংপুরের দর্শনীয় স্থান
ভারতের জৈনপুর থেকে উনিশ শতকে রংপুরে শাহ কারামত আলী জৈনপুরী এলে তার উদ্যোগে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।রংপুরের জিরো পয়েন্ট থেকে ৩৫০মিটার দূরে এই মসজিদটির অবস্থান।এখানে প্রচুর পরিমাণে ইসলাম ধর্ম অবলম্বনকারী মানুষ ইবাদতের জন্য আসে।
মসজিদটি আয়তাকার, তিনটি (উঁচু) গোলাকার গম্বুজ বিশিষ্ট। প্রতিটি কোণে অষ্টভূজাকৃতি স্তম্ভ রয়েছে যার উপরে শোভা পাচ্ছে কিউপলা। রংপুর পৌঁছানোর জন্য ঢাকা থেকে সরাসরি বাস এবং ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। রংপুরে অবস্থানের জন্য ভালো হোটেল গুলোর মধ্যে রয়েছে লিটল রংপুর ইন, কাশপিয়া, হোটেল নর্থ ভিউ, গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেল, রায়ান হোটেল, খান হোটেল এবং হোটেল কেটিএস।
রংপুরে কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে করে রংপুর (Rangpur) জেলায় যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে হানিফ, গ্রীন লাইন, এস আর, শ্যামলী, নাবিল বা টি আর পরিবহনের বাসে করে আপনি সহজেই রংপুর জেলায় যেতে পারবেন। আবার ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে সহজেই রংপুরে যাওয়া যায়। রংপুর থেকে আপনি যেকোনো স্থানীয় পরিবহনে সহজেই আপনার গন্তব্য স্থানে পৌঁছে যেতে পারবেন।
রংপুরে থাকার ব্যবস্থা
রাত্রিযাপন করতে পারবেন রংপুরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে। রংপুরে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল নর্থভিউ, পর্যটন মোটেল, দি পার্ক হোটেল, হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার, হোটেল তিলোত্তমা, হোটেল কাশপিয়া উল্লেখ্য।
কোথায় খাবেন?
বিভাগীয় শহর রংপুরে বিভিন্ন মানের হোটেল/রেস্টুরেন্ট থেকে নিজের উদরপূর্তিটুকু সেরে নিতে পারবেন তবে আমের সিজনে রংপুর গেলে রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম খেতে কখনো ভুল করবেন না। রংপুরে বেশ কিছু খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হোটেল হচ্ছে-বিসমিল্লাহ হোটেল এন্ড রেস্তোরাঁ, টাঙ্গাইল মিষ্টি ঘর, মাতৃ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট মোহাম্মাদিয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট।
শেষ কথা: রংপুরের দর্শনীয় স্থান
হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আরিসা হাউজের প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল নাও থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে ভ্রমণের পরিকল্পনা করবেন।
আশা করছি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। সতর্কতার সহিত যাতায়াত করবেন। রাস্তা পারাপারের সময় তাড়াহুড়া করবেন না, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
রংপুরের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ
প্রশ্ন ১: রংপুর এর পূর্ব নাম কি ছিল?
উত্তর:- রংপুর জেলার ওপর নাম ছিল জঙ্গপুর। এই জায়গায় ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব থাকায় কেউ কেউ এই জেলাকে আবার যমপুর নামেও ডাকতেন। তবে রংপুর জেলা সুদূর অতীত থেকে আন্দোলন প্রতিরোধের মূল ঘাঁটি ছিল। তাই জঙ্গপুর নামকেই রংপুরের আদি নাম হিসেবে ধরা হয়।
প্রশ্ন ২: রংপুর জেলার মোট জনসংখ্যা কত?
উত্তর:- রংপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ৩১,৬৯,৬১৫ জন। সর্বোচ্চ হলো - ৯০.৬১% ইসলাম ধর্মালম্বি, ৮.৯৩% হিন্দু সম্প্রদায়, ০.২৫% খ্রিষ্টান, ০.০৫% বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ০.১৫% রাজবংশী, সাঁওতাল ওরাও জাতি গোষ্ঠী।
প্রশ্ন ৩: রংপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি?
উত্তর:- রংপুর জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে - তাজহাট রাজবাড়ি, ভিন্ন জগৎ, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর চিড়িয়াখানা, ঘাগট প্রয়াস পার্ক, পায়রাবন্দ, চিকলির পার্ক, তনকা মসজিদ, রানী পুকুর সহ ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান রয়েছে রংপুরে।
প্রশ্ন ৪: রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে কয়টি জেলা আছে?
উত্তর:- রাজশাহী বিভাগের উত্তরাঞ্চলের ৮টি জেলা নিয়ে রংপুর বিভাগ গঠন করা হয়। এখন এটির ৮টি জেলা, ১টি সিটি কর্পোরেশন, ৫৮টি উপজেলা, ২১টি পৌরসভা এবং ৫৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে।
প্রশ্ন ৫: রংপুরকে কিসের শহর বলা হয়?
উত্তর:- রংপুর সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ২০৫.৭০ বর্গ কিলোমিটার। রংপুর সাতশত বছরের ঐতিহ্য হাড়িভাঙ্গা আম, শতরঞ্জি ও তামাক এর জন্য খুবই বিখ্যাত। রংপুরকে ‘বাহের দেশ’ বলা হয়।
সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url