সিলেটের দর্শনীয় স্থান

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট। বাংলাদেশের উত্তর পূর্বে অবস্থিত প্রাচীন এই জনপদ বনজ, মৎস্য সম্পদ ও খনিজ সম্পদে ভরপুর পুরো সিলেট শহর। সবুজ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত সিলেটের প্রতিটা আনাচে-কানাচে জায়গাগুলো।
সিলেটের দর্শনীয় স্থান
প্রাকৃতিক এই অপরূপ সৌন্দর্য ছাড়াও সিলেটে রয়েছে প্রসিদ্ধ ইতিহাস। এবং সিলেটের মধ্যে বসবাসকারী বিভিন্ন আদিবাসীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি। আমরা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে তুলে ধরবো সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য।

সিলেটের দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে বা সিলেট শহর সম্পর্কে জানতে আমাদের পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আশা করি আমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি সিলেট শহরের বা সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। তো চলুন আর দেরি না করে জেনে আসি সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে।

সিলেটের দর্শনীয় স্থান: জাফলং

বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইন ঘাট উপজেলায় অবস্থিত জাফলং (Jaflong)। যা সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬২ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে, খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত রয়েছে। এপারে নদী ওপারে খাসিয়া আদিবাসীদের জৈন্তা পাহাড়। তার মধ্যখানে পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলছে অপরূপ সৌন্দর্যে বর্ণিল ঝর্ণা। 

এবং নদীর বুকে স্তরে স্তরে চকচক করছে সাজানো নানা রঙ্গের নুড়ি পাথর। পাহাড়ের গায়ে যেন ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘরাশি। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলে আসুন সিলেটের জাফলং। সারা দেশে এক নামে পরিচিত প্রকৃতির কন্যা, সিলেটের জাফলং। 

পিয়াইন নদীর তীরে সাজানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। জাফলং এর শীত ও বর্ষাকাল মৌসুমের সৌন্দর্যের রূপটি একেবারেই ভিন্ন। বর্ষাকালে জাফলং এর রূপ যেন এক ভিন্ন মাত্রায় ফুটে উঠে। আবার শীতকালে অন্য এক রূপে হাজির হয় জাফলং। 

চারিদিকে সবুজ সমারোহ তার সাথে সুন্দর প্রকৃতির লীলাখেলা। আনমনা বয়ে চলছে পাহাড়ের বুকে ঝর্ণা দ্বারা। এবং জাফলং এর বুক চিরে বয়ে চলছে ধলাই এবং পিয়াইন নদী, এই নদীগুলো যেন সৌন্দর্যের চূড়াভুমি সৃষ্টি করেছে জাফলং এ। 

নদীগুলোর নিচ থেকে ডুব দিয়ে হাজার হাজার শ্রমিকের পাথর উত্তোলনের দৃশ্য যেন চোখ ধাঁধানো। এছাড়াও সীমান্তের ওপারে ডাউকি নদীর উপরে দুই পাহাড়ের মধ্যখানে ঝুলন্ত সেতু যেন জাফলং এর সৌন্দর্যকে যেন আরও দ্বিগুণ করে তুলেছে। সেই জায়গার আদিবাসীদের জীবনধারা জাফলং এর সৌন্দর্যে আলাদা একটি মাত্রা তৈরি করে তুলেছে। আদিবাসীদের বসবাস, তাদের শিল্প-সংস্কৃতি, পাহাড়, নদী, ঝর্ণা সব মিলিয়ে যেন সিলেটের জাফলং হয়ে উঠেছে এক রূপকথার রাজ্য। 

কিভাবে যাবেন 

বাসে করে - ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ে গাবতলী এবং সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে। ভোর সকাল থেকে রাত ১২:৪৫ মিনিট পর্যন্ত। এ পথে গ্রিন লাইন পরিবহন, এনা, সৌদিয়া ও শ্যামলী পরিবহন এবং এসি-নন এসির আরও কিছু পরিবহন ও চলাচল করে। ভাড়া ৮০০ থেকে ১,০০০ এর মধ্যেই। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেটে পৌঁছায়। 

ট্রেনে করে - ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সপ্তাহের মঙ্গলবার দিন ছাড়া অন্যান্য দিনগুলোতে সকাল ৬:৪০ মিনিটে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। 

  • জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস সপ্তাহের ৭ দিন দুপুর ২টায় ছাড়ে।
  • সপ্তাহের বুধবার পরে অন্যান্য দিনগুলোতে রাত ৯ঃ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। 
  • সপ্তাহের শুক্রবার পরে অন্যান্য দিনগুলোতে বিকাল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। 

ট্রেনের ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ১০১৮ টাকা পর্যন্ত সীট অনুযায়ী। যেতে সময় লাগবে ৭-৮ ঘণ্টার মতো। তবে ট্রেন জার্নি করলে আপনার জন্য ভালো হবে রাত ৯:৫০ এর উপবন এক্সপ্রেস। কারণ আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে সকাল হয়ে যাবে, আর পুরো রাতটা আপনি ট্রেনে ঘুমিয়ে কাটাতে পারবেন। এবং সকালে ট্রেন থেকে নেমেই আপনার ভ্রমণ যাত্রা শুরু করতে পারবেন। 

কোথায় থাকবেন 

জাফলং ভ্রমণে গিয়ে আপনি জেলা পরিষদের বাংলো ভাড়া করে থাকতে পারবেন তবে ভ্রমণে আসার আগে থেকে বুকিং করে রাখতে হবে । তাছাড়া পর্যটকদের থাকতে হবে সিলেট শহরে। সিলেট শহরে থাকার মত অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার প্রয়োজনীয় এবং আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনো যেকোনো মানেরই হোটেল পেয়ে যাবেন খুব সহজে। লালা-বাজার, দরগা রোডে পেয়ে যাবেন কম ভাড়ায় মানসম্মত রেস্ট হাউস। 

খাওয়া দাওয়া 

জাফলং ভ্রমণের খাবার সঙ্গে করে নিয়ে গেলেই ভালো হয়। কারণ এখানে খাসিয়া আদিবাসীদের গ্রাম সংগ্রামপুঞ্জি একমাত্র ক্যাফে সংগ্রাম ছাড়া জাফলং আর তেমন কোনো ভালো মানের খাবার রেস্টুরেন্ট নেই। ভালো মানের খাবারের জন্য আপনাকে সিলেট শহরে আসতে হবে। এখানে রয়েছে সব মানের খাবার-দাবারের সুব্যবস্থা। 

সিলেটের দর্শনীয় স্থান: হযরত শাহ পরান (রা:) এর মাজার

সিলেট শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্ব দিকে দক্ষিণ পরগনায় খাদিমনগরে খানকাহ্ স্থাপন করে আধ্যাত্মিক সাধনা শুরু করেন তিনি। হযরত শাহপরান (রা:) ছিলেন, হযরত শাহজালাল (রা:) এর ভাগ্নে তিনিও ছিলেন একজন সাধক পুরুষ। একটি টিলার উপর একটি প্রকাণ্ড বৃক্ষের নিচে রয়েছে শাহপরান (রা:) কবর / মাজার শরীফ। 

এই মাজার টিলার উপরে উঠার জন্য রয়েছে মাজার প্রাঙ্গণে উত্তর ও দক্ষিণ হয়ে সিঁড়ি। যা প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট উঁচু। লোকমুখে শোনা যায় এই সিঁড়িটি মোগল আমলে নির্মিত হয়েছে। মাজারের পশ্চিম দিকে মোগল বাদশাহদের স্থাপত্য কীর্তিতে নির্মিত একটি মসজিদ তিনটি গম্বুজ বিশিষ্ট। 

এই মসজিদে প্রায় পাঁচশত মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করে থাকেন। প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্তদের পদচারণ থাকে এই মাজার শরীফে। সিলেট অঞ্চলে ইসলাম প্রচার ও মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠায় শাহপরান (রা:) এর ভূমিকা ছিল অপরিসীম,তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় ইসলাম প্রচার করেছেন। 

কিভাবে যাবেন

বাসে করে - ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে গাবতলী ও সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়ে সকাল থেকে রাত ১২টা অবধি। এ পথে গ্রিন লাইন পরিবহন, এনা, সৌদিয়া ও শ্যামলী পরিবহন এবং এসি-নন এসির আরও কিছু পরিবহন ও চলাচল করে। ভাড়া ৮০০ থেকে ১,০০০ এর মধ্যেই। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেটে পৌঁছায়। 

ট্রেনে করে - ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত অবধি ভিন্ন ভিন্ন সময় ৪ থেকে ৫ টি ট্রেন রয়েছে। এগুলোর ভাড়া পড়বে প্রায় ১০০,১৫০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন সিট অনুযায়ী। যাতায়াতের সময় লাগবে ৭-৮ ঘণ্টা। 

বাই এয়ার / প্লেনে করে - ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিনই কয়েকটি বিমান সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে যাতায়াত করে। যেমন-বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড এয়ার, নভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ও  ইউএস বাংলা এয়ার।

সিলেট রেলস্টেশন থেকে অথবা কদম-তলী বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে শাহপরান (রা:) এর মাজার শরীফে পৌঁছে যেতে পারবেন। 

কোথায় থাকবেন 

সিলেটে থাকার মত অনেকগুলো হোটেল, মোটেল রয়েছে। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনো মানের হোটেলেই পেয়ে যাবেন খুবই সহজে। তাছাড়াও মাজার / দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এগুলো রুম ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ৫,০০০ পর্যন্ত। এবং লালা-বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউজও রয়েছে। 

খাওয়া দাওয়া 

খাবারের জন্য সিলেটে রয়েছে অনেক ধরনের ভালো মানের রেস্টুরেন্ট। এছাড়াও বেশ ভালো মানের তিনটি হোটেল রয়েছে যেমন,পানশি,পালকি ও পাঁচভাই। এগুলোতে বিভিন্ন মানের খাবার সহ প্রায় ২৯ প্রকারের ভর্তা পাবেন।

সিলেটের দর্শনীয় স্থান: জুগিরকান্দি মায়াবন

সিলেটের গোয়াইন ঘাট উপজেলায় অবস্থিত জুগিরকান্দি মায়াবন (jugirkandi mayabon)। চারিদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি জায়গা। গোয়াইন ঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নে জুগিরকান্দি হাওরে অবস্থিত সৌন্দর্যে ভরপুর নয়নাভিরাম বনের নাম স্থায়িত্ব করা হয়েছে মায়াবন। 

বাংলাদেশের সব থেকে বড় জলার বন হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে এর অসম্ভব রূপের মায়াজালে আকৃষ্ট করে পর্যটকদের মন। প্রায় এক হাজার একর ভূমি জুড়ে বিস্তীর্ণ রয়েছে এ বন। চারিদিকে অথৈ পানির মধ্যে সারি সারি গাছের বিশাল রুপি এক জঙ্গল। 

যেখানে একবার প্রবেশ করলে আর ফিরে আসতে মন চাইবে না। অথৈ  পানির মধ্যে ভেসে বেড়ানোর সাথে সাথে নানান পাখির কিচিরমিচির শব্দে আপ্লুত হয়ে উঠবেন। আপনার কাছে মনে হবে এ যেন এক রূপকথার অজানা দেশ। ঘুঘু পাখি, দোয়েল, শ্যামা, ডাহুক ও নানা বিদেশি পাখি সহ নাম না জানা হরেক ধরনের পাখির গুঞ্জন তাকে সব সময় এখানে।

মায়াবনের উত্তরে রয়েছে পিয়াইন ও সারি নদীর মিলনস্থল। তার কিছুটাও দূরেই রয়েছে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। নিস্তব্ধ পরিবেশে কিছু সময়ের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারবেন। অথৈ পানির উপরে ভেসে ভেসে মায়াবনের মায়ার জালে নিজেকে আটকে ফেলবেন। গাছে গাছে বানরের লাফালাফি, সত্যি এতটাই অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা  মায়াবনের প্রকৃতি পরিবেশ। 

কিভাবে যাবেন 

বাসে করে - ঢাকা থেকে সিলেট এর উদ্দেশ্যে গাবতলী এবং সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাস ছেড়ে যায়। সকাল থেকে রাত ১২টা অবধি। এ পথে গ্রিন লাইন পরিবহন, এনা, সৌদিয়া ও শ্যামলী পরিবহন এবং এসি-নন এসির আরও কিছু পরিবহন ও চলাচল করে। ভাড়া ৮০০ থেকে ১,০০০ এর মধ্যেই। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেটে পৌঁছায়।

ট্রেনে করে - ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত অবধি ভিন্ন ভিন্ন সময় ৪ থেকে ৫ টি ট্রেন রয়েছে। এগুলোর ভাড়া পড়বে প্রায় ১০০,১৫০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন সিট অনুযায়ী। যাতায়াতের সময় লাগবে ৭-৮ ঘণ্টা। ট্রেন জার্নিটা অনেকটা আরামদায়ক এবং সময় সাশ্রয়ই। 

প্লেনে করে - ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিনই কয়েকটি বিমান সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে যাতায়াত করে। যেমন-বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড এয়ার, নভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ও  ইউএস বাংলা এয়ার।

সিলেট শহর থেকে - সিলেট,তামা-বিল মহাসড়ক হয়ে ৩৭ কিলোমিটার পার হয়ে সারি-ঘাট নামক স্থান। সারি-ঘাট, গোয়াইন ঘাট সড়ক দিয়ে ৮ কিলোমিটার অতিক্রম করে বেখরা ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে আসবেন। এখান থেকে ছোট ছোট নৌকা ভাড়া করে খাল হয়ে সামনে এগোতে হবে। মিনিট ১০ একের মাথায় পৌঁছে যেতে পারবেন মায়াবনে। 

কোথায় থাকবেন 

সিলেট শহরে থাকার মত অনেক ভালো মানের হোটেল রয়েছে। আপনার প্রয়োজন ও আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনো মানের হোটেলই পেয়ে যাবেন খুবই সহজে। সিলেট শহরের মধ্যে উচ্চমানের হোটেল থেকে মোটামুটি মানের হোটেল ও রয়েছে। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হোটেল নির্বাচন করে নিতে পারবেন।

হোটেল রোজ ভিউ, হোটেল স্টার প্যাসিফিক, ভিআইপি রোডে হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট ইত্যাদি হোটেল সুবিধাসহ পেয়ে যাবেন। এছাড়াও লালা-বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউজও রয়েছে। এবং দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে যেগুলোর রুম ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত। 

খাওয়া দাওয়া 

সিলেট শহরের মধ্যে অনেক ভালো মানের খাবার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তাছাড়া আপনার সাথে করেও রান্না করা খাবার আনতে পারেন। অথৈ জলে ভেসে ভেসে খাবার খাওয়া এ যেন কাল্পনিক কোনো দৃশ্য। খুবই মজাদার, স্মৃতিময় সময় পার করা। সিলেট শহরের যেকোনো জায়গায় পেয়ে যাবেন ভালো মানের খাবার হোটেল বা রেস্টুরেন্টে। 

সিলেটের দর্শনীয় স্থান: রাংপানি

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি পর্যটন স্থান রাংপানি (Rangpani)। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জৈন্তাপুর উপজেলায় মোকামপুঞ্জি এলাকায় এই দর্শনীয় স্থান রাংপানি। এখানে রয়েছে পাহাড়, ঝর্ণা, আর সাদা পাথরের মিতালী। এ যেন কাল্পনিক কোন দ্বীপপুঞ্জ। এই দর্শনীয় স্থানটিতে যাওয়ার সময় উঁচু-নিচু পথের সাথে রাস্তার দুপাশের সারি সারি সুপারি বাগান। 

যাতায়াতের সময় সুপারি বাগান সাথে নিয়ে ভ্রমণ এ যেন সিনেমার কোন দৃশ্য। সিলেটের প্রতিটা জায়গাই একেকটা সুন্দর স্থান। যে কোন রিসোর্ট বা হোটেল, এগুলো যেন দর্শনীয় স্থান থেকে আরও বেশি আকর্ষণীয়। বিদেশি অনেক পর্যটক রয়েছে যারা সিলেটের এই রিসোর্ট গুলো পরিদর্শন করতে আসে। এতটাই জনবহুল ও আকর্ষণীয় প্রতিটা রিসোর্টের পরিবেশ। 

কিভাবে যাবেন 

ঢাকা থেকে সড়ক পথে, রেলপথে অথবা আকাশ পথে যাতায়াত করতে পারবেন সিলেটে। বাসে করে হানিফ, শ্যামলী, এনা, গ্রিন-লাইন পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস প্রতিদিন ঢাকা থেকে সিলেট যাতায়াত করে। বাসগুলোর নন এসি সিটের ভাড়া ৪৭০ টাকা এবং এসি সিটের ভাড়া পড়বে ১,২০০ টাকা। 

ট্রেনে করে - জয়ন্তিকা, উপবন এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস ও কালনী এক্সপ্রেস যাতায়াত করে সিলেটে। চেয়ার ৩২০ টাকা। এসি চেয়ার স্নিগ্ধা ভাড়া পড়বে ৬৩০ টাকা। এসি কেবিন ১১৪৯ টাকা। 

সিলেটের জাফলং যাওয়ার সার্ভিস বাসে জৈন্তাপুর শ্রীপুর পর্যটন কেন্দ্র পার হয়ে মোকামপুঞ্জি এলাকায় নামবেন। সেখান থেকে অর্ধ কিলোমিটার হেঁটে গেলেই দেখতে পাবেন রাংপানি দর্শনীয় স্থানটি। অথবা আপনার সাথে রিজার্ভ কোনো গাড়ি থাকলেও সরাসরি রাংপানি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। 

মোকামপুঞ্জি প্রবেশমুখ থেকে আপনার সাথে গাইড নিয়ে যেতে পারবেন। গাইড ভাড়া পড়বে ৫০০ টাকা। তার সাথে টুরিস্ট পুলিশের নিরাপত্তাও থাকবে। 

কোথায় থাকবেন 

সিলেট ভ্রমণে শুধু একটি কুড়ি, দুটি পাতার আকর্ষণই নয়। বরং নানান বিলাসবহুল রিসোর্ট ও হোটেলের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সিলেট শহর। দেশের অন্যতম বিলাসবহুল রিসোর্ট গুলো সিলেট শহরে অবস্থিত। 

শুধু উন্নত মানের রিসোর্ট বা হোটেল নয় এখানে রয়েছে অল্প খরচেরও বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্ট। তাই আপনার আর্থিক অবস্থা অনুযায়ী সিলেট শহরে যেকোনো ধরনের হোটেল বা রিসোর্ট বেছে নিতে পারবেন। হযরত শাহজালাল (র:) মজার সংলগ্ন এলাকায় অসংখ্য হোটেল রয়েছে। এসব হোটেল গুলোতে ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকায় রুম ভাড়া পেয়ে যাবেন। 

খাওয়া দাওয়া 

থাকার জন্য যেরকম সব মানের হোটেল রয়েছে সিলেট শহরে ঠিক তেমনি খাওয়া-দাওয়ার জন্যও রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল। তবে সব ধরনের হোটেল গুলোতেই পেয়ে যাবেন ভালো মানের মান-সম্মত খাবার। তবে কিছু রেস্টুরেন্টে যেমন পাঁচভাই, পানসি, মামার বাড়ি ও ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্ট এগুলোতে সিলেটের সব আঞ্চলিক খাবার পরিবেশন করা হয়। 

সিলেটের আরও অন্যান্য দর্শনীয় স্থান 

সিলেটের এই দর্শনীয় স্থানগুলো ছাড়াও রয়েছে আরও বিভিন্ন আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। সিলেটের আরও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান নিয়ে আর্টিকেল থাকছে আমাদের ওয়েবসাইটে। সিলেটের সুনামধন্য আরও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। সিলেটের আরও অন্যান্য কিছু দর্শনীয় স্থান হচ্ছে - 

পানথুমাই, বিছনাকান্দি, ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা, ভোলাগঞ্জ, মালনীছড়া চা বাগান, রাতারগুল, লাক্কাতুরা চা বাগান, লালাখাল, হযরত শাহ পরান (র:) মাজার শরীফ, হযরত শাহজালাল (র:) মাজার শরীফ, হাকালুকি হাওর, জাকারিয়া সিটি, অ্যাডভেঞ্চার ওয়ার্ল্ড সহ আরও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। 

সিলেটের প্রতিটা দর্শনীয় স্থানগুলোর পরিবেশ খুবই মনোমুগ্ধকর। আপনি সচক্ষে না দেখলে বুঝতে পারবেন না কতটা সুন্দর একেকটা স্থান। একটি কুড়ি দুটি পাতার দেশ সিলেট,সবুজে ঘেরা সিলেটের প্রতিটা দর্শনীয় স্থান।

শেষ কথা

প্রাকৃতিক সবুজে ভরপুর মনোরম পরিবেশ, উপভোগ করতে অবশ্যই চলে আসুন দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশ সিলেটে। চায়ের বাগান বা চা পাতার জন্য খুবই সুপরিচিত পুরো দেশের কাছে সিলেট। আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি সিলেটের কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে পারলেন। 

সিলেটের আরও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন। সিলেটের একেকটা চা বাগানে ঢুকলে মনে হবে যেন কাল্পনিক কোন সবুজের রাজ্যে ঢুকে পড়েছেন। সিলেটের প্রতিটা আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে সবুজের সমারোহ। 

ভ্রমণ প্রিয় মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি জায়গা সিলেট। আমরা অবশ্যই দেশ-বিদেশে নানা জায়গায় ভ্রমণ করব। তবে অবশ্যই সতর্কতার সহিত যাতায়াত করবেন কারণ সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।

সিলেটের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ

১. সিলেটের দর্শনীয় স্থান গুলো কি কি? 

উত্তর :- সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান হচ্ছে - জাফলং, লালাখাল, হযরত শাহজালাল (রা:) মাজার শরীফ, হযরত শাহপরান (রা:) মাজার শরীফ, মালনীছড়া চা বাগান, শ্রী চৈতন্যদেব, ভোলাগঞ্জ, তামাবিল, লোভাছড়া চা বাগান, লোভাছড়া পাথর কোয়ারী, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা, রায়ের গাও হাওর, লক্ষণ ছড়া, জলপ্রপাত এগুলো ছাড়াও আরও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে সিলেটে। 

২. সিলেটের প্রাচীনতম দরগাহ কোনটি? 

উত্তর :- বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক স্থাপনা সমূহের মধ্যে ১৭০০ সালের প্রথমদিকে নির্মিত সিলেটের শাহী ঈদগাহকে সিলেটের প্রাচীনতম দরগাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। সিলেট শহরের উত্তর সীমানায় এই শাহী ঈদগাহ মাঠের অবস্থান। 

৩. সিলেট জেলার সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্য মন্দির কোনটি? 

উত্তর :- সিলেট শহরের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে প্রাচীন প্রতিষ্ঠান বলরাম আখড়া। মিরা বাজারের বলরাম আখড়া চত্বরে শ্রী মন্দির বা মূল মন্দির, দুর্গা মন্দির, শিব মন্দির, নাট মন্দির রয়েছে। তার মধ্যে দুটি বিষ্ণু মূর্তি ও গণেশ মূর্তি আখড়ার শ্রী মন্দিরে পূজিত হচ্ছে। 

৪. সিলেট জেলার আয়তন কত? 

উত্তর :- সিলেট বিভাগের মোট আয়তন ১২,৫৫৮ বর্গ কিলোমিটার। এর অন্তর্গত সিলেট জেলার আয়তন হচ্ছে ৩,৪৫২ বর্গ কিলোমিটার। এবং সুনামগঞ্জ জেলার আয়তন ৩,৬৭০ বর্গ কিলোমিটার, হবিগঞ্জ জেলার আয়তন ২,৬৩৭ বর্গ কিলোমিটার, ও মৌলভীবাজার জেলার আয়তন ২,৭৯৯ বর্গ কিলোমিটার। 

৫. সিলেট জেলার মানচিত্রে কয়টি উপজেলা আছে? 

উত্তর :- সিলেট জেলার মানচিত্র মোট ১৩টি  উপজেলায় বিভক্ত। 

৬. সিলেট বিভাগের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কত? 

উত্তর :- দেশের অন্যান্য বিভাগের চেয়ে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার। সিলেট বিভাগে ২০০১ সালে জনসংখ্যা ছিলো ৭৯ লাখ ৩৯ হাজার। বর্তমান আদমশুমারি পর্যন্ত এই ১০ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে ১৮ লাখ ৬৭ হাজার। বৃদ্ধির হার ২ দশমিক এক শতাংশ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url