শিশুদের কান্না থামানোর উপায়

শিশুদের কান্না থামানোর উপায়: শিশুদের কোন অসুবিধা হলে বা তাদের যে কোন প্রয়োজনে তারা কান্না করে। শিশুদের ভাষাই হচ্ছে কান্না, কান্নার মাধ্যমে তারা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে। শিশুদের খারাপ লাগলে তারা কান্না করে, তাদের খিদে পেলে তারা কান্না করে, তাদের অসুস্থতায় তারা কান্না করে, অস্বস্তিবোধ হলে তারা কান্না‌ করে। শিশুরা যেহেতু কথা বলতে পারে না তারা কান্নার মাধ্যমেই তা প্রকাশ করে। শিশুরা কান্না করবে এটাই স্বাভাবিক।
শিশুদের কান্না থামানোর উপায়
শিশুদের কান্না দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই। শিশুরা যে কোন প্রয়োজনে কান্না করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত কান্না করলে বা অস্বাভাবিক কান্না করলে সেটি চিন্তার বিষয়। শিশুরা কান্না করলে তাদের কান্না কিভাবে থামাবেন বা শিশুদের কান্না থামানোর উপায় সেই সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

শিশুদের কান্না থামানোর উপায়

  • ১) শিশুদের কান্না থামানোর উপায় - শিশুরা হঠাৎ কোন বড় আওয়াজ হলে তারা সেটাতে ভয় পায় এবং কান্না করে । সেরকম কিছু হলে আপনি তাকে কোলে নিন এবং তাকে শান্ত করার চেষ্টা করুন। তাকে বোঝান যে সবকিছু স্বাভাবিক আছে ভয়ের কিছু নেই।
  • ২) বেশিরভাগ শিশুরাই কান্না করার সময় যদি তাদের পাশে খেলনা রাখা হয় বা তাদেরকে খেলনা দেওয়া হয় তারা শান্ত হয়ে যায়। তাই কান্নার সময় প্রথমে চেষ্টা করুন খেলনা দিয়ে শান্ত করার।
  • ৩) শিশুরা যখন জেগে থাকে তাদেরকে বেশিক্ষণ বিছানায় রাখবেন না, এতে তারা কান্না করে। আপনি দোলনায় শুয়ে রাখতে পারেন আস্তে আস্তে দোল খাওয়ালে তারা শান্ত থাকে। কিন্তু খেয়াল রাখবেন বেশি জুড়ে যাতে দোলনায় দোল না খায়, এতে শিশুর মস্তিষ্কে আঘাত পড়তে পারে।
  • ৪) শিশুদের কান্না থামানোর উপায় হচ্ছে - শিশুরা বেশিক্ষণ এক জায়গায় এক অবস্থা থাকতে পছন্দ করে। সেক্ষেত্রে শিশু যদি শোয়া অবস্থায় থাকে তাহলে তাকে কিছুক্ষণ বসিয়ে তার সাথে খেলা করুন বা তাকে কোলে নিয়ে হাটাহাটি করুন।
  • ৫) শিশুরা কান্না করলে আপনি গুনগুন করে গান গাইতে পারেন বা তাকে কবিতা শোনাতে পারেন। গুনগুন করে গান গাইলে তারা শান্ত থাকে শিশুরা এবং ঘুমিয়ে যায়। শিশুরা জুড়ে সপ্তম পছন্দ করে না বা তাতে তারা ভয় পায়।
  • ৬) আরেকটি শিশুদের কান্না থামানোর উপায় হচ্ছে - অনেক সময় শিশুরা যদি অসুস্থ থাকে, পায়ে তাদের কোন অস্বস্তিবোধ হয় তাহলে তারা কান্না করে। অনেক সময় শিশুরা পেটের ব্যথায় কান্না করে। শিশুদের পেট ব্যথা হওয়ার সাধারণত মায়ের কাছ থেকে। মা যদি জাল জাতীয় কোন কিছু বা যেগুলো খাওয়া ঠিক না সেরকম কিছু খায়,সেক্ষেত্রে শিশুর পেট ব্যথা করে। মায়ের খাওয়ার প্রতি সচেতন হতে হবে কারণ মায়ের বুকের দুধ শিশু খায়।

বাচ্চার অস্বাভাবিক কান্না নিয়ন্ত্রণের উপায়

বাচ্চারা কান্না করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাছাড়া যখন অস্বাভাবিক কান্না করে তখন বুঝতে হবে সেই কান্নার কোন কারণ রয়েছে। শিশুদের কান্না থামানোর উপায় হচ্ছে - বাচ্চা যখন অস্বস্তি বোধ করে বা বাচ্চার পেট ব্যথা করে, ক্ষুধা পায় তখনই জোরে জোরে চিৎকার করে বাচ্চারা কান্না করে। বাচ্চার অস্বাভাবিক কান্না বলতে জোরে জোরে চিৎকার সহকারে কান্না করবে এবং মুখ,নাক লাল হয়ে যাবে, শিশুর চোখ দিয়ে পানি বের হবে। অনেক সময় শিশুরা কান্না করতে করতে শ্বাস বন্ধ করে ফেলে।

সেই সময় বাচ্চার মুখে দুধ দেবেন, দুধ পেলে শান্ত হয়ে যাবে। আর যদি শিশু দুধ মুখে নিয়েও কান্না নাত আমার বা দুধ মুখে নিতে না চায় তাহলে বুঝতে হবে শিশু অন্য কোন কারণে কান্না করছে। তখন শিশুরা পেট ব্যথা কাঁদে বা বিরক্তি বোধেও কান্না করে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি তাকে খেলনা দিতে পারেন বা তাকে খুলে নিয়ে হাটাহাটি করতে পারেন।

অনেক মায়েরা শিশুকে ৬ মাসের আগে গরুর দুধ বা বাহিরের দুধ খাওয়ান। ছয় মাস হওয়ার আগে এসব দুধ খাওয়ানো উচিত নয়। আপনি যদি শিশুর ৬ মাস হওয়ার আগেই এসব খাওয়ান, তাহলে সেটা হতে পারে শিশুর অস্বাভাবিক কান্নার কারণ। ছয় মাস হওয়ার আগে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোন দুধ বা অন্য কোন কিছু মুখে দেওয়া যাবে না। এতে শিশুর ক্ষতি হয়।

শেষ কথা: শিশুদের কান্না থামানোর উপায়

বাচ্চারা বেশি কান্না করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাচ্চারা যখন বেশি কান্না করে বা অস্বাভাবিকভাবে কান্না করে তাহলে সেটা চিন্তার বিষয় সেটির ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিন্তু অনেক মা-বাবা আছেন বাচ্চারা একটু কান্না করলেই তারা ডাক্তারের কাছে চলে যান। বাচ্চাদের কান্না করার ক্ষেত্রে তেমন কোন চিকিৎসা নেই। 

বাচ্চারা কান্না করলে সেটার প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে মা-বাবার বা প্যারেন্টসের সচেতন হওয়া। বাচ্চারা কোন কারণে কান্না করছে, তাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা, তারা অসুস্থ হয়ে পড়লো কিনা, সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে তার পরিবারের মানুষকেই। এই সিচুয়েশনে পরিবারের মানুষকে বা মা-বাবাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং বাচ্চাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে হবে বাচ্চার কান্না নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে হবে।

বাচ্চার যে কোন কারণে কান্না করে থাকে, তাদেরকে শতকরাও খুব সহজ। কোলে নিয়ে একটু হাটাহাটি করলে তারা শান্ত হয়ে যায় বা তাদের খেলনা দিলে তারা শান্ত হয়ে যায়। বাচ্চার স্বাভাবিক কান্নার কারণে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কোন দরকার নেই। সামান্য এই কান্নার ব্যাপারে বাচ্চাকে মেডিসিন খাওয়ানো বা মেডিসিন দেয়ারও প্রয়োজন নেই। 

মা বাবা এবং পরিবারের খেয়ালী সেক্ষেত্রে যথেষ্ট। আমাদের আজকের পোস্টের মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন শিশুদের কান্না থামানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। বাচ্চাদেরকে সময় দিন, তাদের ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো পূরণ করুন। এতেই বাচ্চারা খুশি থাকবে, কম কান্না করবে। বাচ্চার কান্না থামানোর উপায় এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে এতক্ষণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

বাচ্চার কান্না থামানোর উপায় সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ

প্রশ্ন ১: নবজাতকের প্রথম কান্নার কারণ কি?

উত্তর:- নবজাতকের প্রথম কান্নার কারণ হচ্ছে -

  • মায়ের মনোযোগ আকর্ষণ।
  • ফুসফুসে বায়ু প্রবেশ।
  • শারীরিক অসুবিধা।
  • খিদে।

প্রশ্ন ২: নবজাতকের বেশি কান্না কি ক্ষতিকর?

উত্তর:- নবজাতকের বয়স যখন দুই সপ্তাহ হয় তখন থেকে দীর্ঘ প্রসারিত কান্না শুরু হতে পারে। বয়স ৩ থেকে ৪ মাস না হওয়া পর্যন্ত কান্না চলতে পারে। অসহ্য কান্না যা দিনে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে এবং এটি বিকাশের একটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক পর্যায় যাকে বেগুনি কান্নার সময় বলা হয়। নবজাতকের এই বয়সের কান্নায় ক্ষতিকর কিছু নেই।

প্রশ্ন ৩: ১ বছরের বাচ্চা রাতে কান্না করে কেন? 

উত্তর:- রাতে ঘুমের মধ্যে ছোট বাচ্চারা কান্না করতে পারে, তার বিভিন্ন কারণও হতে পারে, দুঃস্বপ্ন ও হতে পারে। রাতের আতঙ্ক দু:স্বপ্ন থেকে আলাদা এবং সাধারণ নন REM ঘুমের সময় কাটে। দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুমের মধ্যে শিশু কেঁদে কেঁদে জেগে উঠতে পারে।

প্রশ্ন ৪: শিশু কেন কাঁদে? 

উত্তর:- শিশুর কান্নার বিষয় হচ্ছে আপনাকে বলার উপায় যে তার আরামের এবং যত্নের প্রয়োজন। কখনো কখনো তারা যা চায় তা কাজ করা সহজ, কিন্তু কখনো আবার তা হয় না। কান্নার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে ক্ষুধা।

প্রশ্ন ৫: বাচ্চাদের কতক্ষণ কাঁদতে দেওয়া উচিত? 

উত্তর:- শিশুদের তার নিজের থেকে কাঁদতে দেওয়া উচিত। সময় প্রায় ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার জন্য কাঁদতে দিতে পারেন। তবে তার থেকে বেশি সময় কাঁদতে থাকলে অবশ্যই যে কোন উপায়ে শান্ত করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url