সুখ আসলে কী? সুখের সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন

সুখ আসলে কী? সুখের সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন: আমরা মানুষ জাতি সুখের পূজারী। সুখের পিছনে দৌড়াই কিন্তু আদৌ কি আমরা জানি, সুখ আসলে কী? সুখী হতে হলে অনেক বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। শান্তশিষ্ট, সহজ সরল, দয়ালু একটি মনই যথেষ্ট সুখের জন্য। সুখ এই ছোট্ট শব্দটি মাত্র দুইটি অক্ষরের কিন্তু এর মানেটা বিশাল এবং তৃপ্তিকর। সুখ অনেকটা নির্ভর করে ব্যক্তি বিশেষের উপর। সুখের অনেকটা কারণ আপনার কাছে, আপনি চাইলেই বা একটু চেষ্টা করলেই সুখে থাকতে পারবেন।
সুখ আসলে কী? সুখের সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন
আমাদের আজকের পোস্টের মূল বিষয় হচ্ছে, সুখ আসলে কী? সুখের সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন। যেহেতু আমরা মানব জাতি সুখের পূজারী, তাই আমরা সবসময় চেষ্টা করি কিভাবে সুখে থাকা যায়। এবং আমরা অনেকেই মনে করি সুখে থাকতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই সুখে থাকার জন্য টাকার পেছনে দৌড়াই। কিন্তু বাস্তবে সব সুখ টাকা দিয়ে কেনা যায় না। তাহলে চলুন আমার প্রথমেই জেনে আসি সুখ আসলে কি?

সুখ আসলে কী?

সুখের সাথে আপনার চাহিদার একটি সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে। আপনার দৈনন্দিন জীবনের কিছুটা চাহিদা কমিয়ে দিলেই সুখে থাকা যায়। সুখে থাকার জন্য আহামরি কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। সুখ আসলে কী? সুখের সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন। 

সুখ সবার জীবনেই কম বেশি থাকে কিন্তু সবাই সুখের সন্ধান পায় না। আপনার জীবনে আপনি যেমন যে অবস্থানে আছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেন। একটু ভালো থাকার চেষ্টা করবেন, চাহিদার পরিমাণ কম রাখবেন। দেখবেন কর্মব্যস্ত দিনের শেষে শান্তিতে রাতে ঘুমাতে পারবেন। ভালো-মন্দ যাই রিজিকে থাকবে তাই খাবেন, আলহামদুলিল্লাহ বলে শুকরিয়া আদায় করবেন। দেখবেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ নিজেকে মনে হবে। 

বিখ্যাত এক তুর্কি কবি তার বিখ্যাত এক চিত্রশিল্পী বন্ধুকে অনুরোধ করেছিলেন, “সুখ আসলে কি” তা যেন তিনি এঁকে দেখান। তখন ঐ চিত্রশিল্পী বন্ধু উনাকে সুখের একটি ছবি এঁকে দিয়েছিলেন।

ছবিটির মধ্যে ছিল একটি ভাঙ্গা খাটের ছোট্ট বিছানায় শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে একটি বড় পরিবার। সেই ভাঙ্গা খাটের একটি পায়া নেই, সেখানে দুইটি ইট রাখা হয়েছিল। সেই জরাজীর্ণ ঘরের ছাদের অনেক জায়গায় ফুটো ছিল। বালিশ বরাবর ছাদের উপরের ফুটো থেকে বৃষ্টির পানি পড়ছিল।

তাই ওইখানে ছাতা রেখে ঘুমাচ্ছিল। তাদের বাড়ির গৃহপালিত কুকুরটিও বিছানার একপাশে ঘুমাচ্ছিল তাদের সাথে। তাদের কপাট বিহীন ঘরের জানালায় দুইটি পাখি বসে হাওয়া খাচ্ছিল। তাদের ঘরে মুরগিও ছিল সেই বিছানার নিচেই থাকতো, শেয়ালে নেবারও দুর্ভাবনা নেই। 

ছবিটা দেখার পর উনি বুঝতে পারলেন, সুখ মানে সমস্যা না থাকা নয়। কষ্টের পরিস্থিতিকে স্বাচ্ছন্দ্যে মেনে নেওয়ার মধ্যেই আসলে সুখ বিদ্যমান। যা আছে তা নিয়েই আমরা খুশি থাকি, শান্তিতে ঘুমাই, তার মধ্যেই সুখকে খুঁজে নেই। 

আসলে বর্তমান সমাজে আমাদের মধ্যে দুঃখ কষ্ট, যন্ত্রণা, অশান্তি, চাহিদার পরিমাণ অনেক বেশি। যার কারণে শান্তি বা সুখের দেখা খুব একটা পাওয়া যায় না। আমরা তো ভুলেই গেছি যে সুখী হতে হলে অনেক বড় ব্যবসা বা অনেক বড় বেতনের চাকরির প্রয়োজন নেই। সৎভাবে ছোটখাটো ব্যবসা বা অল্প বেতনের চাকরি করেও দিনশেষে ডাল ভাত খেয়ে শান্তিতে ঘুমানো যায়।

দিনশেষে আসলেই কি আমরা সুখী?

সুখের কোন বিশেষ ধরনের সংজ্ঞা নেই। সুখ অনেকটা উপলব্ধির বিষয়, সুখে কখনো ধরা যায়না ছোঁয়া যায় না। আমাদের সবার কাছেই একটি কমন প্রশ্ন থাকে, দিনশেষে আসলেই কি আমরা সুখী? ছোটবেলায় আমরা অনেক সুখী ছিলাম কিন্তু আফসোস তখন সেটা বুঝতে পারিনি। তখন শুধু চাইতাম কখন বড় হবো, কখন আমাদের গাড়ি হবে বাড়ি হবে, কখন আর স্কুলে যেতে হবে না বড় চাকরি করবো ইত্যাদি এইসব। 

কিন্তু এখন বড় হয়ে ছোটবেলার সেই কথাগুলো মনে পড়লে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে। না না! সেই হাঁসিটা আনন্দের নয়, আফসোসের। সত্যি, সেই দিনগুলো যদি আবার ফিরে পেতাম। ছোটবেলার চাহিদা আর এখনকার চাহিদার মধ্যে অনেক পার্থক্য।

ছোটবেলার সেই তখনকার চাহিদা ছিল, কখন মাঠে খেলতে যাবো, কখন বৃষ্টিতে ভিজবো, কবে স্কুল বন্ধ হবে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবো, সাইকেলের টায়ার দিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতা করবো আরও কত কী? সেই চাহিদাগুলো পূর্ণ হলে কতই না আনন্দ লাগতো। 

অথচ বড় হওয়ার পরের চাহিদাগুলো একদম ব্যতিক্রম। কবে চাকরি পাবো, কবে একটা গাড়ি হবে, কবে একটা বাড়ি বানাবো, দামি শার্ট প্যান্ট কিনতে হবে কত কী? কিন্তু এই চাহিদাগুলো পূর্ণ হওয়ার পরেও প্রকৃত সুখ খুঁজে পাওয়া যায় না।

বরং ব্যস্ত শহরের মানুষের সাথে নিজেও অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আগের সেই সুখ কি আর এখন খুঁজে পাওয়া যাবে? চারিদিকে শুধু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে স্বার্থপরতা। সবাই যে যার স্বার্থ নিয়ে পড়ে থাকে। কেউ কারো বিপদে এগিয়ে আসে না, কারো কষ্টের ভাগ নিতে আসে না। 

সুখ আসলে কী? সুখের সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন। চাহিদার হার কমিয়ে দিলে, সহজ সরল ভাবে কোন রকম খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকলে তবেই মনে হয় কিছুটা সুখে থাকা যাবে। সুখের বিশেষ কোনো সংজ্ঞা নেই, যার যার সুখ নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। ভিতরের মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে, বর্তমান পরিস্থিতিকে সযত্নে মেনে চললে সুখে থাকা যায়।

জীবনে সুখী হতে হলে কি লাগে? 

জীবনে সুখী হতে হলে তেমন কিছুই লাগেনা। নিজের ভালো লাগে কি প্রায়োরিটি দেওয়া, নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া, অন্যের বিপদে কষ্টে এগিয়ে যাওয়া, সহজ সরল হয়ে জীবন যাপন করা, দয়ালু হওয়া এই গুনগুলো একজন মানুষের মধ্যে থাকলে সেই মানুষই প্রকৃত সুখী। সুখ আসলে কী? সুখের সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন।

সুখের কি আলাদা কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা হয়? যে যার অবস্থান থেকে যে যার মত সুখে থাকা যায়। আপনি আপনার বর্তমান অবস্থাকে খুশি মনে মেনে নিলে সুখ খুঁজে পাবেন। টাকার পিছনে না দৌড়ে, আলহামদুলিল্লাহ বলে দিনযাপন করুন তবেই আপনি সুখী।

কৃতজ্ঞ থাকুন 

দৈনন্দিন জীবনে কৃতজ্ঞ থাকার অভ্যাস গড়ে তুলুন। অন্যের যেকোনো ছোটখাটো কাজ কিংবা প্রচেষ্টায় যখন আপনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন। তখন অন্যের সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা দৃঢ় হবে এবং আপনার নিজের কাছেও অনেক ভালো লাগবে। আমরা আধুনিকতার ছোঁয়ায় অন্যের ছোটখাটো কাজের প্রশংসা করতে ভুলে যাই সেটা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। 

ইতিবাচক সম্পর্ক লালন করুন

শুধু কাজে ব্যস্ত না হয়ে আপনার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দর একটি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। যারা যেকোনো ভালো কাজে আপনাকে অনুপ্রাণিত করে তাদেরকে পাশে রাখুন। আনন্দের মুহূর্তগুলো তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিন। তাদের কঠিন সময়ে তাদের পাশে থাকুন আপনার কঠিন সময়েও তাদেরকে পাশে রাখুন। পারস্পারিক এই সমর্থনগুলোই আপনাকে একজন সুখী মানুষ হতে সাহায্য করবে। 

উপকারী হো

অন্যের কষ্টে কষ্ট পাওয়া, অন্যকে সাহায্য করা, যেকোনো সময়ে দান খয়রাত করা এবং আপনার দয়ালু স্বভাব আপনাকে সুখী হতে সাহায্য করবে। যেকোনো গরীব, বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবেন। আপনার কাছে কেউ কোন ধরনের সাহায্য চাইলে যতটুকু পারেন থাকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন। এতে করে অন্যের উপকার হবে এবং আপনারও পরিপূর্ণতার অনুভূতিকে বাড়িয়ে তুলবে। নিজেকে একজন সুখী মানুষ বলে মনে হবে। 

ভুলে যেতে শিখুন 

অতীতের করা ভুল, ক্ষোভ, নেতিবাচক আবেগ ধরে রাখলে নিজেকে ভারাক্রান্ত মনে হবে। আপনার সুখকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। আপনার এসব অতীতের ভুল, নেতিবাচক আবেগ অপ্রয়োজনীয় বোঝা হয়ে বেড়াবে। নিজেকে ক্ষমা করুন এবং অন্যদেরকেও ক্ষমা করতে শিখুন।

এতে আপনার অতীতে করা ভুলের বোঝা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন। তখন নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে ও অনেকটা সুখী মনে হবে। 

নিজের প্রতি যত্ন নিন 

নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া অপচয় বা বিলাসিতা নয়। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামগ্রিক সুখ বজায় রাখার জন্য শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার যত্ন নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিছুটা সময় হলেও নিজের জন্য বের করুন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন।

নিজের শখের কাজগুলো করার চেষ্টা করুন। নিজের প্রতি কোনো চাপ সৃষ্টি না করে নিজেকে নিজের মত বিলিয়ে দিন। দেখবেন তখন নিজেকে অনেকটা সুখী মনে হবে।

সর্বশেষ

অন্যকে দেখে কখনো নিজের প্রতি আফসোস করবেন না। উনার বড় বাড়ি, গাড়ি আছে আমার নেই! ভুলেও কখনো অন্যের জিনিসের উপর আকৃষ্ট হবেন না। আপনি সব সময় ভাববেন আপনার যা আছে তাই আপনার জন্য অনেক বেশি। এর বেশি কিছু আপনার প্রয়োজন নেই।

তাতেই আপনি ভালো আছেন, সন্তুষ্ট আছেন, শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন। ব্যাস! অন্য কিছুর প্রতি চাহিদা না বাড়িয়ে, নিজের প্রতি নিজের অবস্থানের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন তবেই আপনি সুখী। 

আমাদের আজকের এই পোস্টটি ছিল সুখ আসলে কী? সুখের সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন। আমরা এই বিষয়ের উপর কিছুটা হলেও আলোচনা করেছি। পোস্টটি পড়ে আশা করছি আপনার ভালো লেগেছে। পোস্ট সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা সর্বক্ষণ আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত। সৎভাবে উপার্জন করুন, অল্পতে খুশি থাকুন। নিজে ভাল থাকুন, অন্যকেও ভালো রাখুন। ধন্যবাদ।

সুখ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

প্রশ্ন: সুখ বলতে কি বুঝ? 

উত্তর:- সুখের কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। সুখ মানবিক অনুভূতি। মনের একটি অবস্থা বা অনুভূতি যা তৃপ্তি, ভালবাসা, আনন্দ উচ্ছ্বাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। 

প্রশ্ন: সহজ কথায় সুখ কি? 

উত্তর:- সহজ ভাষায় বলতে গেলে সুখ হচ্ছে আনন্দ বা তৃপ্তির অনুভূতি। 

প্রশ্ন: সুখ কি থেকে আসে? 

উত্তর:- জীবনের পরিস্থিতি, কৃতিত্ব, দৈনন্দিন অবস্থা, সামাজিক সম্পর্ক এসব কিছু থেকেই প্রভাবিত হয় আপনি কতটা সুখী। নিজের অবস্থা, সামর্থ্যের উপর সন্তুষ্টি থেকে অনুভূতি প্রকাশ করাই সুখ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url