ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম

ট্রেড অর্থ ব্যবসা এবং লাইসেন্স অর্থ অনুমতি অর্থাৎ আপনার ব্যবসা করার জন্য যে অনুমতি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের ট্রেড লাইসেন্সের সূচনা ঘটে ১৯৮৩ এর সিটি কর্পোরেশন কর বিধান অনুযায়ী। এই ট্রেড লাইসেন্সটি লাইসেন্স উদ্যোক্তাদের আবেদনের ভিত্তিতে সাধারণত প্রদান করা হয়ে থাকে। ব্যবসার অবিচ্ছেদ্য একটি ডকুমেন্ট হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স।
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম
ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম জানা যেকোনো ব্যবসায়ীর প্রধান কর্তব্য। কিন্তু আমরা অনেক সময় দেখি যে, অনেক সফল উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই ব্যবসা করে যাচ্ছেন কিন্তু এটা একদমই উচিত নয়। সম্পূর্ণ অবৈধ এবং আইন বিরোধী কাজ।

আমাদের আজকের এই পুরো আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম এবং ট্রেড লাইসেন্স এর উপর বিভিন্ন তথ্য নিয়ে। ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে অবশ্যই আমাদের পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তো চলুন আর দেরি না করে প্রথমেই জেনে আসি ট্রেড লাইসেন্স ফি তালিকা সম্পর্কে।

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন 

ট্রেড লাইসেন্স এর মেয়াদ সাধারণত এক বছর হয়ে থাকে। ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৭ দিনের মধ্যেই ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের আবেদন করতে হয়। আপনার আবেদনের একদিনের মধ্যেই নবায়ন করা হবে। ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার নিয়ম হচ্ছে, 

  • ১. আপনার পূর্বের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। 
  • ২. আঞ্চলিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর বিষয়ক কর্মকর্তা নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করবেন। 
  • ৩. লাইসেন্স নবায়ন ফি নতুন লাইসেন্সের সমপরিমাণ জমা দিতে হবে। 

এছাড়াও ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা বা ট্রেড লাইসেন্স সম্পর্কিত সকল তথ্য ব্যবসায়িক আওতাধীন স্থানীয় সরকারের সরাসরি অফিসে গিয়ে জানতে পারবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছ থেকে।

ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম 

ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম হচ্ছে - 

  • সর্বপ্রথম ব্যবসায়িক কেন্দ্রের জন্য সঠিক অঞ্চল নির্ধারণ করা। 
  • আই ফর্ম ও কে ফর্ম নামে ট্রেড লাইসেন্স আবেদনের দুইটি ফর্ম রয়েছে। ছোট ব্যবসায়ীদের বা সাধারণ ব্যবসায়ীদের জন্য আই ফর্ম এবং বড় ব্যবসায়ীদের জন্য বা বড় ব্যবসার জন্য কে ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। 
  • ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি যে অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত সেই অঞ্চলের অফিস থেকেই এই ফর্মগুলো সংগ্রহ করা যাবে। এই ফর্মগুলো প্রতিটির দাম পড়বে ১০ টাকা করে। 
  • ফর্মগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ট্রেড লাইসেন্স এর ফি ভ্যাট সহ জমা দিয়ে একটি রশিদ সংগ্রহ করে রাখতে হবে। 
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ ব্যবসার ধরন অনুযায়ী আবেদন ফর্মটির সাথে ব্যাংকে ফি জমার রশিদটি সংযুক্ত করে স্থানীয় সরকারের অফিসের জমা দিতে হবে। 
  • স্থানীয় সরকারের অধিভুক্ত আঞ্চলিক অফিস থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা ব্যবসায়ীক কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে অফিসে এসে একটি রিপোর্ট করবেন। 
  • এই সকল কার্যক্রম বা তথ্য সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যাবে। সেই আঞ্চলিক অফিস থেকেই।

ট্রেড লাইসেন্স এক নামে একাধিক ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবসার ধরন অনুযায়ী খরচের তারতম্য ঘটে। যেমন: ঢাকা সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে এক থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার পর্যন্ত টাকা লাগতে পারে। অন্যথায়, কোম্পানির ক্ষেত্রে সকল ধরনের ব্যবসা এক লাইসেন্স দিয়ে স্বল্প খরচে করা যায়।

ট্রেড লাইসেন্স ফি ইউনিয়ন পরিষদ

আপনার ব্যবসার ধরনের উপর নির্ভর করে ট্রেড লাইসেন্স ফি নির্ধারিত হয়। ট্রেড লাইসেন্স পেশ সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণ একটি ট্রেড লাইসেন্স পেতে তিন থেকে সাত কর্ম দিবস সময় লাগতে পারে। এবং সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়সের যেকোনো নাগরিক ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি ইউনিয়ন পরিষদ - ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স ফি সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। আবার কোন কোন জায়গায় ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। 

ট্রেড লাইসেন্স দুই ধরনের - ১. নতুন ট্রেড লাইসেন্স

২. ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন। 

  • নতুন ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য সার্ভিস চার্জ - ৪,৯৯৯ টাকা এবং 
  • ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের জন্য সার্ভিস চার্জ - ৬,৯৯৯ টাকা। 
  • সুতরাং ট্রেড লাইসেন্স এর ফি, আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী সরকার কর্তৃক নির্ধারিত করা হয়। এবং সেই অনুসারে তা প্রদান করতে হবে।

ট্রেড লাইসেন্স করতে কি কি লাগে

ট্রেড লাইসেন্সের জন্য যা যা লাগে -

এক মালিকানা ব্যবসার ক্ষেত্রে - চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি, ভাড়ার রশিদ ও হোল্ডিং ট্যাক্স  পরিশোধের রশিদের কপি, আবেদনকারীর ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। 

যৌথ মালিকানার ক্ষেত্রে - দোকান ভাড়ার সত্যায়িত চুক্তিপত্রের ফটোকপি, দোকানের ইউটিলিটি বিল, হালনাগাদ হোল্ডিং ট্যাক্স পরিষদের ফটোকপি, মালিকদের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ২,০০০ টাকা জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পার্টনারশিপের অঙ্গীকার-নামা বা শর্তাবলি জমা দিতে হবে। 

কোম্পানির ক্ষেত্রে - দোকানভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, কোম্পানির সার্টিফিকেট অফ ইন কর্পোরেশন, কোম্পানির মেমরেন্ডাম ও আর্টিকেল অফ এসোসিয়েশন, ম্যানেজিং ডিরেক্টরের তিন কপি ছবি, ম্যানেজিং ডিরেক্টরের জাতীয় পরিচয় পত্র। 

ফ্যাক্টরি বা কারখানার ক্ষেত্রে - প্রস্তাবিত ফ্যাক্টরি বা কারখানার পার্শ্ববর্তী অবস্থান বা স্থাপনার বিবরণ সহ লোকেশন ম্যাপ বা নকশা, পরিবেশের ছাড়পত্রের কপি, প্রস্তাবিত কারখানা বা ফ্যাক্টরির পার্শ্ববর্তী স্থাপনার মালিকের অনাপত্তিনামা, ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নিয়ম কানুন মেনে চলার স্বাক্ষরিত অঙ্গীকার-নামা, ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প।

ট্রেড লাইসেন্স কোথায় পাওয়া যায় 

সিটি কর্পোরেশন মূলত এই প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করে থাকে। ট্রেড লাইসেন্স আপনার স্থানীয় সরকার বা সিটি কর্পোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, জেলা বা উপজেলা পরিষদের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। একটি অফিসের নিমিত্তে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে পুরোদেশে ব্যবসা করা যায়। তবে আপনার ব্যবসা প্রসারের স্বার্থে একটি অন্য স্থানীয় সরকারের অধীনে শাখা অফিস করতে হলে সেখানকার জন্য পৃথক ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে।

শেষ কথা

আপনার ব্যবসা শুরু করার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি লিগ্যাল ডকুমেন্ট হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স (Trade Licence)। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করা কখনোই বৈধ নয়। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং আইনবিরোধী কাজ। সেজন্যই প্রত্যেক ব্যবসায়ীদের উচিত তাদের ব্যবসা শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই ট্রেড লাইসেন্স করে নেওয়া। 

আপনি সারা বিশ্বের মধ্যে আপনার পণ্য সাপ্লাই দিতে পারবেন ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে। এবং অবশ্যই আপনার ব্যবসা যে জায়গায় রয়েছে, এই জায়গার আওতাধীন এলাকা থেকে আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স না করলে আপনার ব্যবসাটির কোন বৈধতা থাকবে না। 

আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম সহ ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ

প্রশ্ন ১: ট্রেড লাইসেন্স এর সুবিধা কি?

উত্তর :- ট্রেড লাইসেন্স এর সুবিধা হচ্ছে - একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে সারাদেশে আপনি আপনার পণ্য বিক্রি করতে পারবেন। তবে আপনার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান যে এলাকায় রয়েছে অথবা আপনার কর্মরত অফিস যে জায়গায় রয়েছে আপনাকে সেই অফিসের আওতাধীন এলাকা থেকে আপনার ট্রেড লাইসেন্স করতে হবে।

প্রশ্ন ২: ট্রেড লাইসেন্স এর মেয়াদ কত দিন?

উত্তর :- বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ পাঁচ বছর করা হয়েছে। তাছাড়া শুরু থেকেই ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল এক বছর এবং তা বছরভিত্তিক নবায়ন করতে হতো। তবে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবসায়ী মহলের পক্ষ থেকে তাদের একটি দাবি ছিল যেন ট্রেড লাইসেন্স এর মেয়াদ ন্যূনতম পক্ষে পাঁচ বছর করতে হবে। অবশেষে সে দাবি পূরণ করা হয়েছে। 

প্রশ্ন ৩: ট্রেড লাইসেন্স কি?

উত্তর :- ট্রেড লাইসেন্স ব্যবসার অনুমতিপত্র। সরকার বা সরকারি সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত অনুমতিপত্র কে বোঝায় ট্রেড লাইসেন্স। যাতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে সরকারের আইনি এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত ভৌগলিক এলাকাতে ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়। সাধারণত স্থানীয় সরকার এই অনুমতিটি দিয়ে থাকেন। 

প্রশ্ন ৪: নতুন ট্রেড লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে? 

উত্তর :- সাধারণত লাইসেন্স ফি সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আকার বা ধরন অনুযায়ী এই ফি নির্ধারিত করা হয়। 

প্রশ্ন ৫: ট্রেডিং এর মানে কি? 

উত্তর:- যদি কোন ব্যবসায়ী নিজে পণ্য উৎপাদন না করে অন্য উৎপাদকের কাছ থেকে বা কোন বড় বিক্রেতার কাছ থেকে পণ্য কিনে এনে তিনি বিক্রি করেন। সেই ধরনের বিক্রয় ব্যবস্থাকে সাধারণত ট্রেডিং বলা হয়। 

প্রশ্ন ৬: ই ট্রেড লাইসেন্স কি? 

উত্তর:- ই ট্রেড লাইসেন্স হচ্ছে - ইলেকট্রনিক ট্রেড লাইসেন্স। যা আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ওয়েবভিত্তিক শক্তিশালী ও সুরক্ষিত সফটওয়্যার এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়। ট্রেড লাইসেন্স অর্থ ব্যবসার অনুমতি পত্র। সিটি কর্পোরেশনের কর বিধান ১৯৮৩ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্সের সূচনা ঘটে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url