মাতৃকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৫
মাতৃকালীন ভাতা ২০২৫
গরীব ও দুঃস্থ অসহায় মহিলাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার মাতৃত্বকালীন ভাতা বা গর্ভবতী ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। একজন মা এই ভাতা আওতাধীন হতে পারবে তবে এর জন্য বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে। যদি আপনি সব শর্ত ও নীতিমালা এর ভিতরে থাকেন তাহলে আপনার আবেদন গ্রহণ করা হবে।
প্রতি মাসের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ সিটি কর্পোরেশনে মাতৃকালীন ভাতা আবেদন গ্রহণ করা হয়। আপনি মোট কয়েকটি ধাপে মাতৃকালীন ভাতা না গর্ভবতী ভাতা আবেদন করতে পারবেন। বর্তমানে অনলাইনে আবেদন করা যাচ্ছে। এটি খুবই সহজ এবং ঘরে বসে আপনি মাতৃকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
মাতৃকালীন ভাতা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি পাবেন। অর্থাৎ গরিব অসহায় বসতবাড়ি রয়েছে বা ভাড়া থাকে, চাষ করার কোনো জমি নেই বা পুকুর নেই এই সমস্ত নিয়মের মধ্যে যারা রয়েছে তারা এই ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবে।
মাতৃকালীন ভাতা পাওয়ার শর্ত ২০২৫
- প্রথম বা দ্বিতীয় গর্ভধারণকাল (একবার)
- বয়স কমপক্ষে ২০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে
- মোট মাসিক আয় ১৫০০/- টাকার নিম্নে
- দরিদ্র প্রতিবন্ধী মা অগ্রাধিকার পাবেন
- কেবল বসতবাড়ি রয়েছে বা অন্যের জায়গায় বাস করে
- নিজের বা পরিবারের কোনো কৃষি জমি, মৎস্য চাষের জন্য পুকুর নেই
- উপকারভোগীকে অবশ্যই গর্ভবতী থাকতে হবে।
এই সমস্ত শর্ত বা কর্মসূচির মধ্যে যদি আপনি থাকেন তাহলে মাতৃকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর জন্য অবশ্যই আপনাকে ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করতে হবে এবং সেখানে আপনার নামটি মাতৃকালীন ভাতার জন্য লিপিবদ্ধ করে নিতে হবে। কেননা এটি কিন্তু যাচাই-বাছাই করা হবে। কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত বিবেচনায় সঠিক ভাতা ভোগকারীকে নির্বাচন করবেন।
প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তান অর্থাৎ যেকোনো একবার আপনি এই ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে কোনো কারণে যদি দুই বছর পর শিশু মারা যায় তাহলে দ্বিতীয় সন্তানের জন্য আবেদন করা যাবে। এবং সে ৩৬ মাস পর্যন্ত এই ভাতা ও ভোগ করতে পারবে প্রতি মাসে ৮শত টাকা করে।
এই ভাতা আবেদন করার জন্য সর্বনিম্ন বয়স ২০ হতে হবে। এবং ৩৫ পর্যন্ত এই ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তানের যেকোনো একবার। তৃতীয় সন্তানের জন্য আবেদন করা যাবে তবে শর্তসাপেক্ষ।
মোট মাসিক আয় ১৫০০/- টাকার নিচে থাকতে হবে। যদি আপনার মাসিক আয় এর ঊর্ধ্বে থাকে তাহলে কিন্তু চূড়ান্ত নির্বাচনে আপনাকে বাতিল করা হতে পারে। কেননা এখানে বলা হয়েছে দরিদ্র এবং অসহায় মানুষের জন্য এই ভাতা। যদি আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণ সম্পদ থাকে অর্থাৎ বসত বাড়িসহ কৃষি জমি বাম মৎস্য চাষ করার জন্য পুকুর। এই সমস্ত থাকলে আপনি গর্ভবতী ভাতা বা মাতৃকালীন ভাতা আবেদন করতে পারবেন না।
এবং আবেদন করার সময় অবশ্যই গর্ভবতী হতে হবে। চূড়ান্ত বিবেচনা এখান থেকে ভাতা ভোগকারীদের কে নির্বাচন করা হবে। এবং যারা এখানে গ্রহণযোগ্য হবে পরবর্তী সময় হতে তাদেরকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারের মাধ্যমে মাসিক ৮০০ টাকা প্রদান করা হবে।
গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম - মাতৃত্বকালীন ভাতা নীতিমালা
মাতৃকালীন ভাতা এবং গর্ভবতী ভাতা একই। যদি আপনি পরিপূর্ণ শর্ত পূরণ করতে পারেন তাহলে এই ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর জন্য আপনার বিশেষ কিছু কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবে যেমন: ছবি, ভোটার আইডি কার্ড, গর্ভকালীন সনদ সহ টিকা কার্ড , সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করতে হবে।
মাতৃকালীন ভাতা করতে কি কি লাগবে
- পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি।
- উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা/উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্তৃক গর্ভকালীন সনদ।
- নাগরিক সনদ, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- ভোটার আইডি কার্ড/ জন্ম নিবন্ধন।
- টিকা কার্ড (প্রত্যয়ন)
- টাকা গ্রহণের জন্য ১১ ডিজিটের (বিকাশ/নগদ) মোবাইল ব্যাংকিং নাম্বার।
মাতৃকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৫
গর্ভবতী বা মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদনের জন্য online Registration সাইটে ব্যক্তিগত তথ্য, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, আর্থ-সামাজিক তথ্য় ছবি স্বাক্ষর ও পেমেন্টের তথ্য দিয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন করতে হবে। চূড়ান্ত নির্বাচিত ব্যক্তি ভাতা পাবে। অনলাইন আবেদন প্রতি মাসের ১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে করতে হবে।
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনাদেরকে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। এখানে যে সকল তথ্য দিতে হবে তা অবশ্যই অরিজিনাল এবং সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে। চূড়ান্ত যাচাইয়ের সময় যদি তারা মনে করে আপনি কোন ভুল তথ্য দিয়েছেন তাহলে আপনার আবেদনটি বাতিল করা হতে পারে। তাই সঠিকভাবে ফর্মটি পূরণ করতে হবে। এবং সংরক্ষণ করতে হবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে আর্থসামাজিক তথ্য
আর্থসামাজিক তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে। অর্থাৎ আপনার পরিবারের অর্থ উপার্জন বা ব্যক্তি তথ্য এখানে প্রয়োজন হবে। যেমন: পরিবারের প্রথম রোজগারি মহিলা, মাসিক আয়, প্রতিবন্ধী, বাসস্থান, কৃষি জমি রয়েছে কিনা, বয়স, গর্ভধারণ ক্রম। এই সকল ঘর থেকে আপনি সঠিক তথ্য প্রদান করবেন। এবং মাসিক আয় অবশ্যই ১৫০০ টাকার নিচে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কেননা গরিব ও অসহায়দের জন্য এই ভাতা প্রযোজ্য।
আবেদনের ক্ষেত্রে পেমেন্টের বিষয়
পেমেন্ট তথ্য অবশ্যই সঠিকভাবে দিতে হবে। কিভাবে আপনি পেমেন্ট নিতে যাচ্ছেন অর্থাৎ মাতৃকালীন ভাতা আপনি কিভাবে গ্রহণ করবেন। ব্যাংকিং/মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রহণ করা যাবে। তবে ভালো হবে যদি মোবাইল ব্যাংকিং দেন।
মাতৃকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যায়! আপনি মাতৃকালীন ভাতা: বিকাশ, রকেট, নগদ,উপায়, শিওর ক্যাশ, ওকে ওয়ালেট, এম ক্যাশ, যেকোনো একটি ব্যবহার করে গর্ভবতী ভাতা নেওয়া যাবে।
মাতৃকালীন ভাতার আবেদন ফরম ২০২৫
এছাড়াও আপনি মাতৃকালীন ভাতা আবেদন ফরম উপজেলা উপকারভোগীদের গর্ভধারণ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা/স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিকট হতে বিনামূল্যে সনদ সংগ্রহ করতে পারেন। যা পূরণ করে আপনি মাতৃকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করে সাথে অন্যান্য তথ্য সংযোজন করে উপজেলা শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার ইউনিয়ন পরিষদের অথবা সিটি কর্পোরেশন মেয়রের অনুমতি পত্র প্রয়োজন হবে।
মাতৃকালীন ভাতা কত টাকা
ব্যক্তির চূড়ান্ত নির্বাচনের পর বিবেচিত হলে প্রতি মাসিক ৮০০ টাকা করে ৬ মাস পর পর ৪৮০০ টাকা প্রদান করা হবে (ব্যাংকিং/মোবাইল ব্যাংকিং) এর মাধ্যমে। এইভাবে আপনাকে দুই বছর অর্থাৎ ২৪ মাস অর্থ প্রদান করা হবে। এবং সর্বমোট ১৯,২০০ টাকা একজন গর্ভবতী মা ভোগ করতে পারবেন।
আর যদি তৃতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে হয়, তাহলে তিন বছর অর্থাৎ ৩৬ মাসে ৬বার ৪৮০০ টাকা করে মোট ২৮,৮০০ টাকা সেবা দেওয়া হবে নির্বাচিত ব্যক্তিকে।
মাতৃকালীন ভাতা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য
যদি আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন করতে চান অবশ্যই উপরোক্ত করতে হলে সঠিকভাবে জেনে তারপর আবেদন করার চেষ্টা করবেন। কেননা এখানে আবেদন করলে কিন্তু আপনি নির্বাচিত হবেন না। গরীব ও অসহায় ব্যক্তিদের জন্য এই ভাতাটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত করেছে।
এখানে কোন প্রকার ভুল তথ্য সাবমিট করলে অথবা চূড়ান্ত নির্বাচনের সময় যদি কোন প্রকার সমস্যা দেখা যায় এক্ষেত্রে আপনার আবেদনটি বাতিল করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার জেলা শিশু ও মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ে যোগাযোগ করবেন।
শেষ কথা
আমাদের আজকের এই মাতৃকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৫ আর্টিকেল থেকে এ পর্যন্ত যদি আপনার কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হয়ে থাকে অবশ্যই কমেন্টে আমাদের সাথে শেয়ার করবেন। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর সঠিক তথ্য পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করবেন।
মাতৃত্বকালীন ভাতা একজন গর্ভবতী মায়ের প্রাপ্য অধিকার। গর্ভকালীন সময় অবশ্যই সতর্কতার সহিত চলা আবশ্যক। এবং নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। একজন সুস্থ মাই একটা সুস্থ জাতির সম্পদ। মাতৃকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৫ এই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মাতৃকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন ২০২৫ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ
প্রশ্ন ১: মাতৃত্বকালীন ভাতা কিভাবে পাওয়া যাবে?
উত্তর:- গর্ভবতী ভাতা ২০২৩ বাংলাদেশ সরকার মাসিক ৮০০/- হারে প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর করে ৪ বার বা ২৪ মাস ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। অনলাইনে অনুমোদন করা হয়। প্রত্যেক উপকারভোগীর নিজ পছন্দের ও নিজ নামের ডিজিটাল অনলাইন ব্যাংক/মোবাইল ব্যাংক হিসাব নম্বর ও মোবাইল নাম্বার অবশ্যই থাকতে হবে।
প্রশ্ন ২: কাজ না করলে কি মাতৃত্বকালীন বেতন পাওয়া যায়?
উত্তর:- মাতৃত্বকালীন বেতন পাওয়ার অধিকারী হতে পারেন যদি আপনি নিযুক্ত হন। এমন কি যদি আপনি সপ্তাহে মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাজ করে থাকেন, অথবা আপনি যদি চাকরি পরিবর্তন করে ফেলেন বা চাকরি ছেড়ে দেন। তারপরও আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার অধিকারী।
প্রশ্ন ৩: মাতৃত্বকালীন সুবিধা কিভাবে পাবো?
উত্তর:- সন্তানের জন্ম, গর্ভপাত, গর্ভাবস্থার জরুরী সমাপ্তির অবিলম্বে ১২ মাসের মধ্যে তাকে কমপক্ষে ৩ মাসের অবদান দিতে হবে। তিনি অবশ্যই নিয়োগকর্তাকে তার গর্ভধারণ এবং প্রসবের প্রত্যাশিত তারিখ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
প্রশ্ন ৪: গর্ভাবস্থায় কি কি খাবার খাওয়া যাবেনা?
উত্তর:- গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ভালো তবে কিছু খাবার রয়েছে যা এড়িয়ে চলাই ভালো। কাঁচা বা হাফ সিদ্ধ মাছ, হাফ ভয়েল ডিম, অর্ধ সিদ্ধ মাংস, কফি, ধূমপান করা, মধ্য পান করা খুবই বিপদজনক। এগুলো এড়িয়ে চলাই স্বাস্থ্যের প্রতি ভালো।
প্রশ্ন ৫: গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস কি খাওয়া উচিত?
উত্তর:- গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রাখতে হবে। যেমন, দই, দুধ, পনির, বাঁধাকপি, পালং শাক, ঢেঁড়স, চিয়া সিড, ডুমুর, ডিম, তিল,তিশি এ খাবারগুলো খুবই উপকারী। ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজনীয়।
অনেক উপকৃত হলাম।
Thank you