লেবুতে কোন ভিটামিন থাকে
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি পড়লে লেবুতে থাকা ভিটামিনের নাম এবং লেবুর উপকারিতা জেনে যাবেন। তাহলে চলুন লেবুতে কোন ভিটামিন থাকে জেনে নিয়।
লেবুতে কোন ভিটামিন থাকে জেনে নিন
লেবুতে কোন ভিটামিন থাকে, মানব দেহ সুস্থ রাখতে আয়োডিন, খনিজ লবণ, শর্করা, ভিটামিন সি, আমিষ ও পানি, এই ছয়টি উপাদান গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই ছয়টি উপাদান আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত জরুরি। পুষ্টিকর এই উপাদান গুলোর ঘাটতির কারণে শরীরে রোগে বাসা-বাধে। তাই শরীর সুস্থ ও সবল রাখার জন্য পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি পূরণ করা উচিত।
লেবুতে রয়েছে Vitamin C, যা গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর উপাদান গুলোর মধ্যে একটি। Vitamin C এর অভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। যার কারণে মানুষ স্বাস্থ্যহীনতায় ভোগে। তাই অনন্য পুষ্টিকর উপাদানের পাশাপাশি ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করা অতীব জরুরি। আশা করি লেবুতে কোন ভিটামিন থাকে বুঝতে পারছেন।
ভিটামিন সির গুণ
সাইট্রিক জাতীয় ফলের মধ্যে লেবু অন্যতম। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় Vitamin C বড় ভূমিকা রাখে। আমরা অনেকেই পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যাপারে অমনোযোগী, যার কারণে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। আপনারা অনেকেই ভিটামিন সির গুণ জানতে চেয়েছেন, তাই ভিটামিন সির গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ভিটামিন সির গুণাগুণ জানলে আপনি সত্যিই অবাক হয়ে যাবেন। Vitamin C আমাদের দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, লিভার ভালো রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে, কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে, এছাড়াও দেহের আরও অনেক উপকার করে।
নিয়মিত লেবু পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ শরীর সুস্থ রাখতে লেবু অধিক কার্যকরী। হাতের কাছে থাকা লেবুকে অবহেলা না করে, প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতক্ষণে লেবুতে কোন ভিটামিন থাকে ও ভিটামিন সির গুণাগুণ বুঝতে পারছেন। তাহলে এখন লেবুতে কোন এসিড থাকে জেনে নিন।
লেবুতে কোন এসিড থাকে
লেবুতে কোন ভিটামিন থাকে এবং লেবুতে কোন এসিড থাকে তা হচ্ছে, লেবুতে আছে সাইট্রিক অ্যাসিড, যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড কিডনির পাথর প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং লিভার ভালো রাখে। এছাড়াও লেবুতে থাকা এসিড মানব দেহের খুবই উপকারী। শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সাইট্রিক এসিড ভূমিকা রাখে।
টক জাতীয় ফলের মধ্যে লেবুতেই সাইট্রিক এসিড বেশি থাকে৷ ডাক্তাররাও লিভার ভালো রাখতে লেবু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। কারণ লিভার ভালো রাখতে লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড কাজ করে। আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে থাকেন, তাহলে নিয়মিত লেবুর পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ লেবুতে প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান আছে।
ওজন কমাতে লেবুর উপকারিতা
লেবুতে রয়েছে পটাসিয়াম, আমিষ, ফোলেট, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন কমাতে লেবুর কার্যকারিতা অনেকের অজানা, তাই শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে টেনশন থাকে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ওজন কমাতে লেবু অধিক কার্যকরী। তাই শরীরের ওজন কমাতে নিয়মিত লেবুর রস পান করুন। লেবুর রস পান করার পাশাপাশি ডায়েট করুন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই দেহের বাড়তি ওজন কমতে থাকবে।
লেবু পানি কখন খাওয়া উচিত
লেবু হচ্ছে ঔষধি ফল, যার গুণাগুণ অভাবনীয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে লেবু পানি খাওয়ার সঠিক সময়। তাই সকালে কুসুম গরম পানির সাথে লেবু মিশিয়ে পান করার চেষ্টা করুন। সারারাত ঘুমের পর সকালে আমাদের শরীরে অস্থির অস্থির ভাব থাকে, এই অস্থির ভাব করে দূর করে শরীর চাংগা করে তোলে লেবু।
এছাড়াও সকালে লেবুর রস পান করার ফলে সারাদিনের হজম শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই সকালে খালি পেটে চা/কফি না খেয়ে নিয়মিত লেবুর রস পান করার চেষ্টা করুন। কারণ আমাদের শরীরের ভিটামিন সির ঘাটতি পূরণ করতে লেবুর ঝুড়ি নেই। তাই স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে লেবু পানি পানি অত্যন্ত কার্যকরী। আশা করি লেবু পানি কখন খাওয়া উচিত এবং লেবুতে কোন ভিটামিন থাকে জেনে গেছেন।
লেবুর উপকারিতা
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৯০ মিলিগ্রাম Vitamin C এর প্রয়োজন। ৯০ মিলিগ্রামের ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আসে লেবু থেকে। তাহলে এখন বুঝতেই পারছেন লেবু কতটা উপকারী।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা অনেকেই চা/কফি পান করে থাকি, যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। সকালে চা/কফির অভ্যাস ত্যাগ করে লেবু পানি পান করুন। কিছু দিনের মধ্যেই উপকারিতা লক্ষ করতে পারবেন। নিচে লেবুর উপকারিতা ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলো।
- ১. লেবু আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ২. লেবু লিভার ভালো রাখে।
- ৩. লেবু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- ৪. লেবু কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে।
- ৫. লেবু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- ৬. লেবু ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- ৭. লেবু ত্বক উজ্জ্বল করে।
- ৮. লেবু খাবারের স্বাদ বাড়ায়।
- ৯. লেবু অস্থিরতা দূর করে।
- ১০. লেবু মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
এছাড়াও লেবু আমাদের দেহের জন্য অনেক কার্যকরী। লেবু পুরোটাই পুষ্টি সম্পূর্ণ ফল। তাই লেবুর উপকারিতা পেতে হলে, খাদ্য তালিকায় নিয়মিত লেবু রাখুন। আশা করি উপরের আলোচনা দ্বারা লেবুর উপকারিতা জেনে গেছেন। তাহলে এখন নিচে দেওয়া লেবুর ক্ষতিকর দিক জেনে নিন।
লেবুর ক্ষতিকর দিক
লেবুর যেমন উপকারিতা আছে, তেমন অপকারিতাও আছে। আপনারা সকলেই জানেন কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো না। কারণ অতিরিক্ত সব কিছুই অমঙ্গল বয়ে আনে। অতিরিক্ত লেবু পান করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ অতিরিক্ত ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক অ্যাসিড দেহের জন্য ক্ষতিকর। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে লেবু খাওয়ার চেষ্টা করুন। নিচে ধাপে ধাপে লেবুর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হলো।
- ১. অতিরিক্ত লেবু খেলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।
- ২. অতিরিক্ত সাইট্রিক এসিডের কারণে বমি হতে পারে।
- ৩. দেহের খনিজ লবণ বেরিয়ে যেতে পারে।।
- ৪. অতিরিক্ত লেবু খেলে মাইগ্রেনে সমস্যা হতে পারে।
- ৫. রক্তের আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
- ৬. অতিরিক্ত লেবু খেলে ত্বকে জ্বালা হতে পারে।
এছাড়াও অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। লেবুর উপকারিতা পেতে চাইলে পর্যাপ্ত পরিমাণে লেবু পানি পান করুন। আশা করি লেবুর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে গেছেন।
শেষকথা
ইতিমধ্যে আপনি লেবুর উপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনে গেছেন। মানব দেহের জন্য লেবু অধিক কার্যকরী। বিশেষ করে লেবুতে থাকা Vitamin C আমাদের দেহ সুস্থ রাখে। এছাড়াও বিভিন্ন পুষ্টির দিক থেকে লেবু অতুলনীয়। লেবু ছোট্ট একটি ফল হলেও বেশ কার্যকরী। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত লেবু রাখুন।
আমরা এতক্ষণ লেবুর উপকারিতা, উপকারিতা এবং লেবুতে কোন ভিটামিন থাকে তা নিয়ে আলোচনা করা করেছি। আশা করি লেবুতে থাকা ভিটামিনের নাম এবং লেবুর উপকারিতা জেনে গেছেন। তারপরও যদি কোনো টপিক বুঝতে অসুবিধা হয়, তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন। ধৈর্য সহকারে মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
লেবুতে কোন ভিটামিন থাকে সেই সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর / FAQ
১. লেবুর মধ্যে কি আছে?
উত্তর:- ১০০ গ্রাম পাতিলেবু থেকে যেসব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, ভিটামিন সি (যা আপেলের ৩২ গুণ ও আঙ্গুরের দ্বিগুণ), ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ফসফরাস, লৌহ এছাড়াও টাটকা লেবুর খোসাতেও রয়েছে অনেক পুষ্টি।
২. লেবুতে কি পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে?
উত্তর:- লেবুতে রয়েছে ৪৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং অন্যান্য কিছু ফল যেমন, আমড়ায় রয়েছে ৯২ মিলিগ্রাম, আমলকীতে রয়েছে ৪৬৩ মিলিগ্রাম, জাম্বুরায় ১০৫ মিলিগ্রাম, জামে রয়েছে ৬০ মিলিগ্রাম, পেয়ারায় রয়েছে ২১ মিলিগ্রাম, মাল্টায় ৮৪ মিলিগ্রাম এবং কমলায় রয়েছে ৪২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।
৩. আমাদের দেশে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সবচেয়ে লাভজনক ফল কোনটি?
উত্তর:- পেয়ারা হচ্ছে ভিটামিন সি এর সবচেয়ে ভালো উৎস। একটা আস্ত পেয়ারায় (৫৫ গ্রাম ওজনের) ১২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এবং ১০০ গ্রাম পেঁপেতে ৬০ মিলিগ্রামের মতো ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
৪. একজন মহিলার প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন সি খাওয়া উচিত?
উত্তর:- ভিটামিন সি এর প্রস্তাবিত দৈনিক পরিমাণ হলো মহিলাদের জন্য প্রতিদিন ৭৫ মিলিগ্রাম, এবং পুরুষদের জন্য প্রতিদিন ৯০ মিলিগ্রাম। তাছাড়া ও গর্ভকালীন সময়, গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ১২০ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উচ্চ সীমা হল প্রতিদিন ২,০০০ মিলিগ্রাম।
৫. পানিতে লেবু খেলে কি ক্ষতি হয়?
উত্তর:- অতিরিক্ত লেবু মিশ্রিত পানি পান করলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়, রক্তচাপের পরিবর্তন এবং হজমের সমস্যা হতে পারে।
৬. ভিটামিন সি এর কাজ কি?
উত্তর:- ভিটামিন সি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আপনার শরীরের কোষকে মুক্ত র্যাডিক্যালের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। আপনার শরীর যখন খাবার ভেঙ্গে দেয় তখন অণু উৎপন্ন হয়। ভিটামিন সি শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url