বাদাম গাছ চাষ পদ্ধতি জেনে নিন

আলু চাষের পর আমরা সাধারণত আলু তোলে নেওয়ার পর এই জমিতে বাদাম গাছ চাষ অথবা তিলের চাষ করে থাকি। বাদাম একটি স্বল্প মেয়াদী অর্থকরী ফসল। এটি উৎকৃষ্ট ভোজ্য তেলবীজ, চিনা বাদামের বীজে শতকরা ৪৮-৫০ ভাগ তেল এবং ২২-২৯ ভাগ আমিষ থাকে। উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বাদামের ফলন বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

বাদাম গাছ চাষ পদ্ধতি

আমাদের আজকের এই বাদাম গাছ চাষ সম্পর্কিত পুরো পোস্টটি বাদামের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে। বাদাম সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানতে আমাদের পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। বাদাম গাছ চাষের পূর্বে অথবা পরের কোন তথ্য জানতে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। তাহলে এবার চলুন প্রথমেই জেনে আসি, বাদামের পুষ্টিগুণ, বাদাম গাছ চাষ করবেন কিভাবে, বাদাম রোপণের জন্য মাটিকে কিভাবে তৈরি করে নিবেন।

বাদামের পুষ্টিগুণ 

সব উৎপাদিত বাদাম গুলোর মধ্যে চীনাবাদাম সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চীনাবাদামের রয়েছে বিভিন্ন রকমের উপাদান। আমাদের দেহ গঠনে ও মাংসপেশি তৈরিতে চীনাবাদামের প্রোটিন অনেকাংশ সাহায্য করে। মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে চীনাবাদাম। এর উচ্চমাত্রার নিয়াসিন দেহকোষ সুরক্ষা করে, মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে, বার্ধক্য জনিত রোগ প্রতিরোধ করে, রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। 

আমাদের সুস্থতার জন্য বাদাম গাছ চাষ খুবই প্রয়োজনীয়। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও চীনাবাদামের ভূমিকা রয়েছে। যেমন কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার ও হার্টের রোগ। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকায় তা হাড় গঠনেও সহায়ক।

বাদামের উপকারিতা 

  • দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পলিমাটিতে বাদামের ভালো একটা ফলন পাওয়া যায়। কম খরচে ভালো ফলন পাওয়ার আশা থাকে বাদাম গাছ চাষে। তাই আমাদের আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি বাদাম চাষের বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। এবার চলুন জেনে নেই বাদামের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
  • বাদামের মধ্যে থাকা ক্যারোটিন ও ভিটামিন ই ত্বক এবং চুল সুন্দর রাখে। 
  • বাদামে থাকা প্রচুর আয়রন রক্তে লোহিত কণিকার কার্যক্রম বৃদ্ধি করে। 
  • এতে থাকা প্রচুর ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। 
  • মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে ও রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। বিভিন্ন বার্ধক্য জনিত রোগ প্রতিরোধ করে।
  • এছাড়াও তরকারি, ভর্তা, চানাচুর, কেক, বিস্কুট, মাখন, জ্যাম ও তেল তৈরিতেও বাদাম ব্যবহার করা হয়।

বাদাম গাছ চাষ পদ্ধতি

বাদাম গাছ চাষ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাদাম গাছ চাষ করবেন কিভাবে। বাদাম গাছ চাষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জমির মাটি। জমির মাটি ঠিকঠাক না হলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে না। বাদাম কাজ চাষের ভালো ফলন পেতে হলে জমিকে ঠিকঠাক ভাবে রেডি করতে হবে। এবার চলুন আমরা ধাপে ধাপে জেনে নেই বাদাম গাছ চাষ করবেন কিভাবে। 

  • বাদাম চাষের জন্য প্রথমেই জমিকে চাষের উপযুক্ত করতে হবে। জমি থেকে আলু তোলার পরে ৫-৭ জমিটাকে এমনি ফেলে রাখবেন। এতে করে মাটিটা ভালোভাবে রোদ পেয়ে শুকনো হয়ে বাদাম গাছ চাষ এর জন্য উপযোগী হয়ে যায়। 
  • বাদাম রোপণের পূর্বে বাদামের খোসা থেকে বাদাম ছাড়িয়ে নেওয়ার পর, বাদাম গুলোকে প্রায় ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। 
  • ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর বাদাম রোপণের জন্য বাদাম উপযোগী হয়ে যায়। আগে ভিজিয়ে রাখার ফলে, বাদাম রোপণের পর তাড়াতাড়ি গাছ উঠে যায়। 
  • এবং খুব বেশি দীর্ঘ সময় আগে বাদামের খোসা ছাড়াবেন না। বাদাম গাছ চাষ এর জন্য ৩ থকে ৪ দিন আগে খোসা থেকে বাদাম ছাড়িয়ে নিবেন।
  • এবার ৫-৭ মাটি শুকনো হয়ে যাওয়ার পর ওই জমিতে প্রতি বিঘাতে ১ কেজি পরিমাণ ট্রাইকোডার্মা ফ্রিডি ছড়িয়ে দিবেন। 
  • তারপর জমির মাটিটাকে আবার পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। এবং মাটিটা ভিজানোর ৩-৪ দিন পর আবার ট্রাক্টর দিয়ে মই দিয়ে ভালোভাবে মাটিটাকে মিশিয়ে নিবেন।
  • পুরো জমির মাটি সবগুলো ঝরঝরে হয়ে গেলে বাদাম চাষের জন্য জমিতে ধার কেটে বাদাম রোপণ করতে পারেন। 
  • অন্তর্বর্তীকালীন কিছু পরিচর্যা রয়েছে। বাদাম বীজ বপনের ১৫-২০ দিন পর জমিতে একবার নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। মাটি শক্ত হয়ে গেলে এবং ফুল আসার সময় গাছের গোঁড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। 
  • বাদাম গাছে রোগবালাই অথবা পোকা আক্রমণ করলে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। 
  • বাদাম পরিপক্ব হয়ে গেলে তা সঠিকভাবে সংগ্রহ করতে হবে। গাছের পাতা যখন হলুদ হয়ে যাবে এবং গাছের নিচের দিকে পাতা যখন ঝরে পড়তে থাকবে তখন বাদাম সংগ্রহ করে নিতে হবে।

বীজ ও সারের পরিমাণ 

বাদাম গাছ রোপণের জন্য জমি সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হয়ে গেলে, বীজ বপনে খুব একটা সময় লাগে না। এবং বীজ বপনের আগে এবং পরে জমিতে কোন সার ব্যবহার করা হলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে সেটা জানাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে সাধারণত এপ্রিল মাস হতে জুন মাসের মাঝামাঝি সময়টুকু।

বাদাম গাছ চাষ পোস্টের এবারের অংশে রয়েছে, আপনার কতটুকু জমিতে কতটুকু বীজ লাগবে এবং জমির পরিমাণ অনুযায়ী কতটুকু সার ব্যবহার করবেন এই সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে করে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।

বীজ 

বাদাম চাষের জন্য প্রতি হেক্টরে মাইজচর বাদাম ৯৫-১০০ কেজি। ঝিঙ্গা বাদাম ১০৫-১১০ কেজি, বাসন্তী বাদাম ১০৫-১১০ কেজি, ত্রিদানা বাদাম ১১০-১১৫ কেজি, এবং অন্যান্য জাতের বাদাম ৯৫-১০৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। 

সার

বাদাম চাষের জন্য ভালো ফলন পেতে হলে চীনা বাদাম চাষের জন্য প্রতি হেক্টর জমিতে ৫-৭ টন পঁচা গোবর, ২০-৩০ কেজি ইউরিয়া, ৮০-৯০ কেজি এমওপি, ১৫০-১৭০ কেজি টিএসপি, ৪-৫ কেজি জিংক সালফেট, ৯-১১ কেজি বোরাক্স অথবা বরিক অ্যাসিডের প্রয়োজন পড়ে। অর্ধেক ইউরিয়া এবং অন্যান্য সার বীজ বপনের আগে শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সার বীজ বপনের ৪০-৫০ দিন পর গাছে ফুল আসার সময় প্রয়োগ করতে হবে। তবে সাধারণত ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় না যদি প্রতি কেজি বীজে ৭০ গ্রাম অনুবীজ সার ব্যবহার করা হয়।

রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থা 

বাদাম গাছ চাষ এর জমিতে সাধারণত উইপোকা, বিছা পোকা আক্রমণ করে। এছাড়া অন্যান্য কিছু রোগ রয়েছে সেই রোগে আক্রমণ করলে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। 

  • বিছা পোকা আক্রমণ করলে ডায়াজিনন ৬০ ইসি, ১ লিটার পানির সাথে ১ মিলি পরিমাণ মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করে নিবেন। 
  • এবং উইপোকা আক্রমণ করলে জমিতে কেরোসিন মিশিয়ে সেচ দিতে হবে। 
  • এছাড়া জমিতে বিভিন্ন রকমের রোগ আক্রমণ করলে উপযুক্ত ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।

সর্বশেষ

বাদাম চাষের ভালো ফলন পেতে প্রথম দিকে জমিকে ভালোভাবে ৩-৪ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিবেন। এবং জমি সঠিকভাবে তৈরির জন্য পানির নালার সুব্যবস্থা রাখতে হবে সেচ দেওয়ার জন্য। বাদাম ফলনের পূর্বে এবং পরে সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে থাকলে, ফলন অনেক ভালো হবে। 

আমাদের আজকের এই বাদাম গাছ চাষ পোস্টটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে আমাদের জানাবেন। প্রয়োজনীয় এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করে দিবেন। এতক্ষণ মনোযোগ সহকারে আমাদের পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

বাদাম গাছ চাষ সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর / FAQ

প্রশ্ন: বাদাম কখন চাষ করা হয়? 

উত্তর:- বাদাম চাষাবাদের উপযুক্ত সময় হচ্ছে, সাধারণত এপ্রিল মাস হতে জুন মাসের মাঝামাঝি সময় টুকু। 

প্রশ্ন: চীনাবাদাম খেলে কি উপকার হয়? 

উত্তর:- চীনাবাদাম প্রোটিনের ভালো একটি উৎস। এবং দীর্ঘস্থায়ী শক্তি প্রদান করে। ক্লান্তি ভাব কমাতে সহায়তা করে। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এলার্জি কমাতে সাহায্য করে। 

প্রশ্ন: বাদাম গাছ কিভাবে লাগাতে হয়? 

উত্তর:- প্রতি সারিতে বীজ বপন করতে হবে দূরত্ব অনুযায়ী। খরিপ মৌসুমের সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৪৫ সেন্টিমিটার। এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার। বীজ বপনের সময় জমিতে প্রয়োজনীয় রস থাকতে হবে। 

প্রশ্ন: ১ কেজি চীনাবাদামে কত ক্যালরি? 

উত্তর:- প্রতি 100 গ্রাম কাঁচা চীনাবাদামে রয়েছে, প্রোটিন ৫৩.৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৬০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯০ মি:গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৫৬৬ কিলো ক্যালরি, আয়রন ৩৫০ মি:গ্রাম। এছাড়াও চীনা বাদামের ভিটামিন ই ও ক্যারোটিন ত্বক ও চুলকে সুন্দর রাখে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সৌমিক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url